আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাগ্যাহত আমরা



গত মাসের ২৬ বা ২৭ তারিখের ঘটনা। ঘটনার স্থান ধানমণ্ডি ৮নং ব্রিজ এবং রুশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মাঝামাঝি। সময় সকাল নয়টা কি সাড়ে নয়টা। গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে আমি বসা। গাড়ি ৮নং ব্রিজের দিকে এগুচ্ছে।

হটাৎ দেখলাম উল্টো দিক থেকে একজন ডাবওয়ালা ভ্যান গাড়ি ভর্তি ডাব নিয়ে আমাদের গাড়ির দিকে পাগলের মত ছুটে আসছে কিন্তু তার মাথা ঘুরে আছে পিছনের দিকে। আমি ভাবলাম লোকটা পাগল নাকি? ভ্যান তো গাড়ির তলায় পড়বে! আর সে তাকিয়ে আছে পেছনে। সামনে থেকে যে একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে সে খেয়াল তার নেই। কয়েক মুহূর্ত পরেই ধরতে পারলাম ঘটনাটা। কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদেরকে ধাওয়া দিচ্ছে।

ডাবওয়ালার কয়েকটি ডাব মাটিতে পড়ে গেল। তা তোলার সময় তার নেই। সে আমাদের গাড়ি শেষ মুহূর্তে দেখে ভ্যান সরিয়ে নিয়ে আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। তার ডাব পড়ে থাকল মাটিতে। ঠিক তখনই খেয়াল করলাম পাশের ফুটপাতের মাছওয়ালাও পুলিশের তাড়ার শিকার।

সেও পাতিলের মাছ ঢাকনা ছাড়াই মাথায় নিয়ে দৌড় দিল এবং আমাদের গাড়ির সামনে পড়ল। ড্রাইভার প্রচণ্ড জোরে ব্রেক কষায় সে সরে পড়ার সুযোগ পেল। কিন্তু পাতিল মাথায় নেয়ার সময়ই আমার গোচরে এসেছে যে তার চারটি ছোট সাইজের মাছ রাস্তায় পড়ে গিয়েছে। শুধু আমার না, এক রিকশাওয়ালারও তা গোচরীভূত হওয়ায় সে মহা আনন্দে মাছগুলো কুড়িয়ে নিয়ে রিকশায় রাখল। তার মুখের হাসি দেখে বুঝলাম সকাল বেলা এরকম একটা অনাকাঙ্ক্ষিত উপহার পেয়ে সে শোকর করছে।

আর বয়স্ক কয়েকজন ভদ্রলোক যারা মাছওয়ালার কাছ থেকে মাছ কেনার জন্য দরদাম করছিল তারা ফ্যাল ফ্যাল করে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। বোকার মত হাসি দিয়ে তারা পুলিশদের দিকেও তাকাল কয়েকবার। তাদের চেহারা দেখে মনে হল ব্যাপারটা তারাও মেনে নিতে পারে নি। কিন্তু তারাও যে আমারই মত নিরুপায়। গাড়ি ছুটিয়ে অপরাধীর মত ৮ নং ব্রিজ পার হয়ে এগুতে লাগলাম ভারাক্রান্ত মন নিয়ে।

পুরো ঘটনাটা ঘটতে দশ সেকেন্ড সময়ও বোধহয় লাগে নি। কিন্তু এর মধ্যে ভাগ্যাহত নিরুপায় অনেকগুলো মুখ আমি দেখেছি। গাড়ির সাইড মিররে নিজের অপরাধী মুখটিও আমার নজরে পড়ে। আমরা সবাই কত অসহায়, কত নিরুপায়। যখন ফুটপাতে গাড়ি পার্ক করায় হাঁটা যায় না, ফুটপাত দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে টগবগে যুবক আর মধ্য বয়স্ক ভদ্দরলোকেরা আমাদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে যায়, নিউমার্কেট-নীলক্ষেতে রাস্তার ধারে আর ফুটপাতে যথাক্রমে গাড়ি আর হকারদের দাপটে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটে পথচারীরা, চলার পথে বলাকা সিনেমা হলের সামনে ব্রিজের তলায় হটাৎ করেই কানে আসে তাদের, " ভাই লাগবে? ২, ৩ সব আছে।

দেশি,বিদেশি কোনটা নিবেন?" তখন পথচারীরা নিজেদের অসহায়ত্ব আর অক্ষমতার কারণে নিজেদের দোষারোপ করে। সেখানে ভজঘট করা দুষ্ট লোকগুলোকে পুলিশ তাড়া দেয় না, তারা গাড়ির তলায়ও পড়তে পড়তে পড়ার অবস্থায় যায় না, পুলিশ আমাদেরকেও তাড়া দেয় না কিন্তু বিবেক আমাদের কাপুরুষতার জন্য ক্রমাগত তাড়িয়ে বেড়ায়, আমাকে অপরাধী করে তোলে। আমাদের কি মুক্তি হবে না কখনই?????

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।