আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যাহত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা সা¤mmম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সরকারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়িনের স্বীকার। আর বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক একটি জনগোষ্ঠি।

বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতে চাই। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সৃষ্ট সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা তীব্র থেকে আরো তীব্রতর হচ্ছে। সরকারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর হাতে প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে মুসলিম রোহিঙ্গা যুবক যুবতী, আবালবৃদ্ধবনিতা । রাখাইন যুবকদের হাতে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে মুসলিম যুবতীরা। দেশটির নাসাকা ও রাখাইন যুবকরা মিলে রোহিঙ্গা মুসলিম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অজ্ঞাত স্থাানে নিয়ে যাচ্ছে।

গোটা মিয়নমার সামরিক প্রশাসন একতরফা মুসলমানদের উপর দমন নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। রাতের অন্ধকারে তারা একযোগে চালাচ্ছে লুটতরাজ, মসজিদ ও বসতভিটাতে অগ্নিসংযোগ। অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম সহায়সম্পদ হারিয়ে পাহাড়ের গুহায় অবস্থান নিয়েছে । মুসলমানদের রক্তস্রোতে ভাসছে পুরো আরাকানরাজ্য। অসহায় শিশু, কিশোর, মজলুম মানুষের আর্তনাদে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে।

দেশটির নাসাকা রাখাইন (মগ) কর্তৃক রোহিঙ্গা মুসলিমরা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, লুটতরাজ, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। এদিকে নিজেদের বা¯তুভিটা হারিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান সপরিবারে ৬-৭ টি ট্রলারযোগে বাংলাদেশ পাড়ি দেয়ার প্রক্কালে মিয়ানমান নৌবাহিনী সমুদ্র টহলকালে দুটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের ছেরাদ্বীপের অদূরে তাদের হাতে ধরা পড়ে। মিয়ানমার নৌবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ট্রলার দুটিকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়। এর ফলে মহিলা ও শিশুসহ শতাধিক মানুষের সলিল সমাধি ঘটে এবং হাইনখালীতে ৫/৬ টি লাশ সাগরে ভাসছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমারের জাšতা সরকার আরাকান রাজ্যেসা¤প্রদায়িক দাঙ্গা দমনের নামে সেনাবাহিনী পাঠালেও তারা মুলত মুসলিম দমনে রাখাইনদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

অন্যদিকে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃক রাখাইনদের খাদ্য ও রেশনসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে অথচ মুসলিমরা অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেক পরিবারে শিশু ও নারীরা ক্ষুধার যšত্রনায় কাঁদছে। মংডুসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রাখাইনদের ও নাসাকা ও পুলিশের অত্যাচর সহ্য করতে না পেরে জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে অনেকে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে। তারা মুসলমাদের হত্যা করে মাথা ন্যাড়া করে লাল কাপড় জড়িয়ে ছবি তুলে উল্টো অপপ্রচার চালাচ্ছে যে মুসলিমরা বৌদ্ধ ভিভুদের হত্যা করেছে। ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায় রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যাহত জনগোষ্ঠী।

শত শত বছর ধরে তারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছে। এই উপমহাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সর্ব প্রথম যে ক’টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে, আরাকান তথা বর্তমান রাখাইন প্রদেশ তার অন্যতম। রোহিঙ্গারা সেই আরকানী মুসলমানদের বংশধর। এক সময় আরাকানে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৪৩০ সালে প্রতিষ্টিত মুসলিম শাসন দু’শ বছরিরও অধিককাল স্থায়ী হয়।

১৬৩১ থেকে ১৬৩৫ সাল পর্যšত আরাকানে মারাতœক দুর্ভিক্ষ হয়। এরপর মুসলিম শাসনের অবসাল ঘটে। ১৬৬০ সালে আরাকান রাজা সান্দথুধম্মা নিজ রাজ্যে আশ্রিত মোগল শাহজাদা সুজাকে সপরিবারে হত্যা করেন। এরপর শুরু হয় মুসলমানদের ওপর তার নিপীড়ন ও নির্যাতন। প্রায় সাড়ে তিন শ বছর মুসলমানদের এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে কাটাতে হয়।

১৭৮০ সালে বর্মী রাজা বোধাপোয়া আরাকান দখল করে নেন। তিনিও ছিলেন ঘোর মুসলিম বি™েবষী। বর্মী রাজা ঢালাও ভাবে মুসলমানদের হত্যা করেন। ১৮২৮ সালে বার্মা ইংরেজদের দখলে গেলে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। তবে ১৯৩৭ সালে বার্মার স্বায়ত্বশাসন লাভের পর সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক রুপ নেয় এবং অšতত ৩০ লাক্ষ মুসলমান মারা যায়।

১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু মুসলমানদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীন দেশের সরকার আজ পর্যšত তাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার দেয়নি। অত্যাচার নির্যাতন ও বিতাড়নের মুখে বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এরা বিশ্বের রাষ্ট্রহীন নাগরিক।

১৯৮২ সালে সে দেশের সরকার যে নাগরিকত্ব আইন করেছে, তাতে তিন ধরনের নাগরিকের কথা বলা হয়েছে। এর কোনটির মধ্যেই রোহিঙ্গারা নেই। সরকারীভাবে তাদের সে দেশে বসবাসকারী হিসাবে উলে−খ করা হয়েছে। তাদের ভোটাধিকার নেই, সাংবিধানিক ও আর্থ সামাজিক অধিকার নেই। তারা একার্থে বন্দী ।

কারণ, মিয়ানমারের অন্য স্থানে তারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া যেতে পারে না। এক সময় আরাকান মুসলমান প্রধান ছিল, এখন সেখানে রাখাইন বসতি বাড়িয়ে তাদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়েছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.