রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন
রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে নানামূখী তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনায় নানামূখী তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করি বিভিন্নভাবে, বিভিন্নরূপে। দেশ ও সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে - তা বলার অবকাশ রাখে না। কিন্তু তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনায় প্রতিনিয়ত আমরা নিজেদের যেভাবে উপস্থাপন করি, তাতে একটা সুষ্পষ্ট বিভক্তি পরিলক্ষিত হয়, যা আপেক্ষিক এবং অনেকটাই গুরুত্বহীন কিন্তু জাতীয় উন্নয়নে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে আমাদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রতিনিয়ত পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে; যা মনেহয় আমাদের কারোই কাম্য নয়। কিন্তু বাস্তব হলো - এই বিভক্তি হতে আমরা বের হতে পারছি না।
অনেকে বলেন, ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ছেড়ে যাওয়ার আগে ভারতীয় উপমহাদেশকে দ্বি-জাতিতত্বের ভিত্তিতে ভাগ করে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে একটা চিরস্থায়ী বিভক্তির বীজ বপন করেছিল, যার ফলে আজও আমরা হিন্দু ও মুসলিম এই দুইভাগে বিভক্ত হয়ে আছি; মানুষ হিসাবে নিজেদের নিজেদের পরিচয় মাঝে মধ্যেই ভুলে যাচ্ছি।
এই ভুলে যাওয়াটাকে চিরস্থায়ী রূপ দিতে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধিতে উস্কানী দিচ্ছে সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক গোষ্ঠীসমুহ - ভারতে বিজেপি, আরএসএস, বজরং-রা আর বাংলাদেশে জামায়াত, জেএমবি, হিজবুত তাহরীর ইত্যাদি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক গোষ্ঠীসমুহ তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি, যদিও প্রচেষ্টার দিক হতে তারা সংগঠিত পরিগনিত হয়। কিন্তু আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নিজেদের রাজনৈতিক অদুরদর্শীতা ও রাজনৈতিক আদর্শহীনতার কারণে এই সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক গোষ্ঠী অনেকক্ষেত্রেই পরজীবী হিসাবে পার পেয়ে যাচ্ছে। জাতীয় স্বার্থে অনেক অভিন্ন ইস্যুতে আমরা নিজেদের মধ্যে বিভক্তি ডেকে আনছি প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক পরাজয়ের মাধ্যমে দেশে এই বিভক্তির শুরু, যার স্থায়ী রূপ পায় জেনারেল জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে।
দেশ বিভক্তি হয়ে যায়, আওয়ামীলীগ ও বিএনপি ধারায়। বার বার প্রশ্ন জাগে, আসলে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি'র মধ্যে পার্থক্য কোথায়? অনেকে অনেক উত্তর দিতে পারেন, অনেকের মুখে অনেক কথা শুনেও এসেছি। কিন্তু বরাবরই সেগুলি ভীষন উর্বর কথা, যার কোন আদর্শিক ভিত্তি নেই, নেই কোন পার্থক্যমূলক নির্দেশনা। তবে সাম্প্রতিক দুই দশকে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে এসে বিএনপি কৌশলগতভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বলয়ে চলে গেছে, যা থেকে তাদের মুক্ত হওয়া অবস্থাদৃষ্টে মনেহয় অনেক কঠিন। সুতরাং আওয়ামীলীগ ও বিএনপি'র বিভক্তি আমাদেরকে জাতি হিসাবে বেশিদুর যে এগিয়ে যেতে দেবে না, তার সুষ্পস্ট লক্ষন সমাজে প্রতিফলিত।
এ থেকে কিভাবে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব, তা এখন গবেষণার বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলো নাহয় ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নানা মত, পথ গ্রহন করে, বিভিন্নরকম কথা বলে; কিন্তু জনগণ কেন নির্বিচারে এসব গ্রহন করে? করে কারণ, গ্রহন করার মতো মাঠে কেউ নেই। তাই? পথ হয়তো এটাই গ্রহন করার মতো কাউকে জনগণের সামনে উপস্থিত হতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে সেপর্যন্ত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।