২০০৮ এর আগস্টের শেষ দিনটি। এয়ারপোর্টে সবার কান্নাভেজা চোখকে উপেক্ষা করে এই পথ চলার শুরু। মায়ের কান্না, বাবার সেই চিৎকার করে বলে ওঠা, "খোদা, আমার ছেলেকে দেখো", একমাত্র বোনটির জড়িয়ে ধরা আর আমার ভালোবাসার সবকিছু যে, সেই নববধূর গোপন কিন্তু সব বলে দেয়া কান্না ভেজা আঁচল আর তার কান্নায় ভেজা আমার কাঁধের কাছে শার্টের পুরো জায়গাটা- সব সব পিছে ফেলে এমিরেটস এর সেই ফ্লাইটে উঠে গেলাম। পেছনে ফিরে তাকাইনি, কারণ হৃদয়টা ছিঁড়ে খুঁড়ে যাচ্ছিল।
এরপর?
দেখতে দেখতে দশটি মাস কেটে গেল।
ভাবতেই পারিনা এতদিন আমি আমার সেই ছোট্ট ঘরটি ছাড়া অতদূরে আছি। মামণির হাতের সেই বিখ্যাত কাবাব খাইনা কতদিন, বধূর মেহেদি রাঙা হাতে করা অমৃত সব্জীভাত কিংবা সেই স্পেশাল সেমাই দিয়ে করা মিষ্টি- সেটাও না। মন শুধু পড়ে থাকে আমার সেই ঘরে, পর্দার ভেতর দিয়ে আসা রোদের মিষ্টি আলো আর তার চুম যেখানে আমার ঘুম ভাঙায়।
আর পারিনা। তাই প্লেনের টিকিটটা করেই ফেললাম।
হোকনা তিন মাসের জন্যে, তারপরও। চাইনে আমার এত ভালো করে থাকা। বাসে ঝুলে ঝুলে, কারো কনুইয়ের গুঁতো খেয়ে, রোদে ঘামতে ঘামতে যাব, তাও ভালো। তাও তো আমার নিজের দেশ, যেখানে আমি রাজপুত্র। অন্যের দেশে তো তা কখনোই হতে পারবোনা।
জানি, মাঝে মাঝে অতিষ্ট হয়ে যাব অন্যায়, বিশৃংখলা দেখে। কিন্তু আমি না এলে কিভাবে সব বদলাবে? আমি কালো কাক, আমার ময়ূরের পাখনার দরকার নেই। ভালোবাসার মানুষটির ভালোবাসায় জড়িয়ে থাকবো, সবাই মিলে ঝড় বাদলে, এই ভালো।
আসছি আমি মা, আসছি আমার দেশের মাটি। তোমার গন্ধ শুঁকবার জন্যে মনটা কেমন যে করছে, তুমি কি বোঝো? আমার যে আর একটুও অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছেনা, একটুওনা।
তাড়াতাড়ি চলে এসো ১৫ জুলাই। খুব তাড়াতাড়ি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।