তবু তুই রয়েছিস বলে, ঘাসফুলে জল দোলে...
জানালাটা খোলা ছিলো। বাইরে ছিলো বিশাল সামিয়ানার আকাশ। আকাশের নীচে ছিলো মেঘেদের ছুটোছুটি। তারও নীচে, অনেক নীচে ছিলো হাজার পাখির মুক্ত উড়াল। এবং আরো নীচে দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশের কোণে ছিলো শেষ বিকেলের ঝিমিয়ে পড়া বৃদ্ধ সূর্যটা।
আরো নীচে, একেবারে মাটির পিঠে ছিলো সবুজ ঘাস, কাঁচাপাকা ধান, ঘাসফড়িং এবং আরো অনেক কিছু।
সবার কাছে আমি যাইনি। যেতে পারতামও না হয়তো। গিয়েছিলাম শুধু সবুজ ঘাসের কাছে। ধানের কাছে এবং ঘাসফড়িঙের কাছে।
পেকে যাওয়া ধানের গন্ধ আমার নাকে এসেছিলো। এসেছিলো মাটির সোদা ঘ্রাণও। বিশৃংখল ঘাসফড়িঙেরা ছুঁয়ে যাচ্ছিলো আমার হাতে-পায়ে, নাকে-মুখে-চোখে। তখন দক্ষিণা বাতাস ছিলো খুব। আমার তো সিনেমার নায়কদের মতো লম্বা চুল নেই।
থাকলে লেখতে পারতাম সুন্দর করে।
সবার কাছে আমি যেতে পারিনি। এখন সুন্দর করে চুলের কথাটা আমি লেখতে পারছিনা। আসলে আমি অনেক কিছুই না পারা এক লোক।
জানালার বাহিরে কী ছিলো তা সবাই জানে।
কিন্তু ভিতরে যা ছিলো তা শুধু আমি জানি। চরম অবহেলিত হৃদয়ে এক বিষন্ন মানুষ। ছিলো সে হৃদয়ের অদৃশ্য রক্তক্ষরণ, নীরব আর্তনাদ। ছিলো পুরণো বনেদী আমলের জীর্ণ একটা টেবিল। সেটার উপরে ছিলো অগোছালো বইখাতা।
তার উপরে ছিলো ধূলোর জমাট স্তর। টেবিলটার ঠিক সামনেই ছিলো সেই জানালাটা। যেটার ভিতর-বাহির নিয়ে কথা বলছি।
জানালাটার রং সবুজ। কিংবা বলা যায়- জানালাটা সবুজ রঙের! গ্রীল লম্বালম্বি করে লাগানো।
গ্রীলের ফাঁকে মাকড়শার জাল। সে জালে জমে আছে ধুলো আর আটকে আছে কয়েকটি মশা। ভিতরের বিষন্ন সেই মানুষটা জানালাটা কখনো ছুঁয়ে দেখেনি। দক্ষিণা বাতাসেরও সৌভাগ্য হয়নি জানালা দিয়ে ঢুকার। হলে হয়তো জানালায় ধূলোর ভীড়টা থাকতো না।
থাকতো না মাকড়শার জালও।
টেবিলের সামনে ছিলো কাঠের একটা চেয়ার। সেই চেয়ারেই অবহেলিত হৃদয়ের মানুষটা বসে থাকে। বসে বসে গান লেখে। কবিতা পড়ে।
কাঁদে। চিন্তা করে এবং ভাবেও।
জানালাটার ফাঁক দিয়ে কিচ্ছু দেখা যায়না। না আকাশ, না সবুজ। তবে প্লাস্টার ছাড়া একটা ইটের লাল দেয়াল দেখা যায়।
সেই ইটের দেয়ালে মাঝে মাঝে বিষন্ন পাখিরা এসে বসে। সেই পাখি দেখে বিষন্ন মানুষটার বিষন্নতা আরো বেড়ে যায়। তখন তার কান্না আসে। সে কাঁদে। এক সময় থেমেও যায় সে কান্না।
কান্না থামলেই পৃত্থীর প্রিয় চোখ দুটো মনে পড়ে।
হঠাৎ করেই বিষন্নতা দৌড়ে পালায়! ইটের লাল দেয়ালটা ভেঙ্গে পড়ে! দক্ষিণা বাতাস জানালা দিয়ে ঢুকতে গিয়ে মাকড়শার জাল উড়িয়ে দেয়! অবারিত সবুজ ঢুকে পড়ে দরজা দিয়ে! ভেন্টিলেটরের ফাঁক দিয়ে ঢুকে মেঘের দল! পৃত্থীও আসে এদের সাথে! মানুষটা পৃত্থীকে জড়িয়ে ধরে সুখ খোঁজে... অধরের বুকে ডুব দেয় অধর এবং...
দক্ষিণা বাতাস, অবারিত সবুজ, মেঘের দল এবং সবাই তখন খুব বিষন্ন...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।