এরিস্টটল
গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল তার সাবেক ছাত্র আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের মৃত্যুর পর অ্যাথেন্স থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে গিয়েছিলেন। ওই সময় অ্যাথেনিয়ান অ্যাসেম্বলি মেসিডোনিয়ান শাসনের বিরোধিতা করে এবং এ প্রসঙ্গে দার্শনিক এরিস্টটলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। ফলে এরিস্টটল আর অ্যাথেন্সে ফিরে না এসে তার বাকি জীবন কাটিয়ে দেন চালসিস নগরীতে।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট
দিগ্বিজয়ী বীর নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নির্বাসন তো ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নকে ১৮১৩ সালে এলবা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
এখানে কিছু দিন রাখার পর তাকে আবার নির্বাসনে পাঠানো হয় সেন্ট হ্যালেনা দ্বীপে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এখানেই নির্বাসিত দিনাতিপাত করেছিলেন এই দিগ্বিজয়ী বীর।
সালমান রুশদী
১৯৮৮ সালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশিত হয়। আর এটি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রচণ্ডভাবে আঘাত হানে। এ বইটি পোড়ানো হয় এবং বইয়ের দোকানও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করলে ব্রিটিশ সরকার তাকে পুলিশি হেফাজতে প্রেরণ করে। এর পর সেখান থেকে তিনি নিউইয়র্কে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।
লর্ড বায়রন
ইংলিশ কবি ও প্রেমিক লর্ড বায়রন নিজের চারিত্রিক কারণে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কবির দূরসম্পর্কের এক বোনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ও অন্যান্য স্ক্যান্ডালের কারণে কবিকে তার নিজের শহর ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। আর তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তাকে মৃত্যু পর্যন্ত ঠেলে দিতে পারত।
এসব কারণে তিনি ইংল্যান্ড থেকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আশ্রয় গ্রহণ করেন।
ক্যাসানোভা
ইতিহাসের বিখ্যাত কূটনীতিক এবং গোয়েন্দা ক্যাসানোভাকে নির্বাসিত জীবন বেছে নিতে হয়েছিল। ১৭৫৬ সালে ভেনিসের কারাগার থেকে তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ইউরোপে কিছু দিন নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে আরেকবার দেশে ফিরেন তিনি। কিন্তু এর পর একটি ব্যাঙ্গাত্দক লেখার কারণে আরও একবার সরকারের কোপানলে পড়েন ক্যাসানোভা।
এর পর আবারও দেশ ছেড়ে নির্বাসিত জীবনযাপন শুরু করেন তিনি।
নেলসন ম্যান্ডেলা
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্ণবাদবিরোধী নেতা নির্বাসনের আরেক জ্বলন্ত উদাহরণ। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে সশস্ত্র বিপ্লবের অভিযোগে রোবেন দ্বীপের কারাগারে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে তাকে। কারাগারের একটি প্রকোষ্টে ২৭ বছরের নির্বাসনে থেকেও অহিংসতার নিদর্শন দেখিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে আছেন তিনি।
ভলতেয়ার
নিজের লেখনির মাধ্যমে রাজা ও তার আস্থাভাজনদের তীব্র সমালোচনার কারণে দার্শনিক ভলতেয়ারকে খুব কঠিন রকম বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
তিনি যখন রাজার বিরুদ্ধে কলম চালিয়েই যাচ্ছিলেন, তখন তাকে ইংল্যান্ডে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ব্যক্তিগত জীবনে দারুণ রকমের একগুয়ে ও আদর্শবান ভলতেয়ার শত বাধার মুখেও নিজের মত প্রকাশ ও অন্যান্য বিষয়ে কোনো রকম আপস করেননি।
পাবলো নেরুদা
চিলির বিখ্যাত কবি ও কূটনীতিক পাবলো নেরুদার জীবনেও রয়েছে নির্বাসনের দগদগে ঘা। ১৯৪০ সালের শেষ দিকে তিনি যখন প্রেসিডেন্ট গঞ্জালেজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন তখন তোপের মুখে পড়েন। প্রথমে প্রায় এক মাস এক বন্ধুর বাসার বেজমেন্টে আত্দগোপনে থাকার পর নেরুদা ইউরোপে পলায়ন করতে বাধ্য হন এবং ১৯৫২ সালের আগ পর্যন্ত আর ফিরে আসতে পারেননি।
অস্কার ওয়াইল্ড
অস্কার ওয়াইল্ডের নির্বাসনের ঘটনা অনেকটাই হৃদয়বিদারক। এই আইরিশ কবি ও লেখককে কারাবরণ করতে হয়েছিল এবং সেখানে তিনি আস্তে আস্তে মৃত্যুপথযাত্রীতে পরিণত হন। পরবর্তীতে তিনি ইংল্যান্ড ত্যাগ করে নাম, ধর্ম পরিবর্তন করে প্যারিসে নির্বাসন গ্রহণ করেন। এই নির্বাসন তার লেখনী ও পরবর্তী জীবনে দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। অস্কার ওয়াইল্ডের এই নির্বাসন সাহিত্যিকদের নির্বাসনের একটি বড় উদাহরণ।
টি এস ইলিয়ট
টি এস ইলিয়টের নির্বাসনটিও ছিল তার স্বেচ্ছাপ্রণোদিত। কবি ইলিয়ট মূলত নিজস্ব চিন্তা ও ভাবনার স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করেন। এই নির্বাসন তার ক্যারিয়ারে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল। কারণ নির্বাসনের কারণেই তিনি কবি আজরা পন্ডের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছিলেন এবং এর প্রভাব তার পরবর্তী জীবনের সব সৃষ্টিতে পড়েছিল।
ভিক্টর হুগো
ফরাসি লেখক এবং মানবাধিকার কর্মী ভিক্টর হুগো ১৮৫১ সালে নির্বাসনে চলে যান যখন তৃতীয় নেপোলিয়ন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিজেকে একনায়ক ঘোষণা করেন।
হুগো প্রথমে ব্রাসেলস, এর পর জার্সি এবং শেষ পর্যন্ত সেন্ট পিটার পোর্টে পলায়ন করেন। প্রতিবাদী এই লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে মানবতা ও ন্যায়ের প্রতি তার ভালোবাসা ও অসামান্য দায়িত্ব প্রকাশ করে গেছেন সারা জীবন।
বেনজির ভুট্টো
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে দীর্ঘদিন নির্বাসনে কাটাতে হয়েছে। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় কেটেছে লন্ডন এবং দুবাইয়ে নির্বাসিত থেকে। মুসলিম বিশ্বের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে রাজনৈতিক কারণেই নির্বাসিত জীবনযাপন করতে হয়েছে।
এর পরও তিনি নিয়মিত ব্রিটেনে নানান লেকচার ও বক্তৃতা প্রদান করার জন্য উপস্থিত হতেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।