ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার মজাই আলাদা। আর সেটা যদি হয় টার্মিনেটরের মতো রোমাঞ্চকর সায়েন্স ফিকশন তাহলেতো কোন কথাই নেই। বাংলাদেশে থাকতে অনেক সময় সিনেমার প্রিমিয়াম শো দেখা হতো। এবার বৃটেনে বসেই সে সুযোগ পেয়ে গেলাম। গত ৩ তারিখে টার্মিনেটর স্যালভেশন সিনেমাটা বৃটেনে মুক্তি পেল।
আমরা তিন বন্ধু সেটা দেখার জন্য সকালেই রওনা দিলাম। ভাবছিলাম সিনেমা হলে অনেক ভিড় হবে কিন্তু গিয়ে দেখি তা নয়। এই দেশের যে কোনো সিনেমা হলে বরাবরের মতো একই দৃশ্য -অধিকাংশ সিটই খালি।
টার্মিনেটর সিনেমাটা মূলত একটা সাইন্স ফিকশন। স্কাইনেট নামের কম্পিউটার ডিফেন্স সিস্টেম মানুষকে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।
এ যুদ্ধের প্রথমেই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ মারা যায় ভয়ঙ্কর পারমাণবিক আক্রমণের শিকার হয়ে। স্কাইনেট বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ও রবোট পাঠিয়ে পৃথিবীর অবশিষ্ট মানুষদের মেরে ফেলার বা বন্দী করার চেষ্টা করতে থাকে। বেঁচে থাকা অবশিষ্ট মানুষেরা স্কাইনেটের বিরুদ্ধে মরণপণ প্রতিরোধ গড়ে তুলে। স্কাইনেটের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে মানুষের নেতৃত্বে ছিলেন, জন কনর।
জন কনর
সিনেমার শুরুতেই দুর্দান্ত জন কনরের নেতৃত্বে ভয়ঙ্কর রবোটগুলোর সাথে মারামারি আর প্রচণ্ড যুদ্ধের টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়েই সিনেমার কাহিনী এগোতে থাকে।
ভয়ঙ্কর মেশিনগুলোর কাছে অতীতে যেমন মানুষ যতোটা অসহায় ছিলো এবার ততোটা নেই। মানুষ অনেকটাই প্রতিরোধ করতে শুরু করেছে। স্কাইনেটের বিরুদ্ধে কয়েকটা আক্রমণও পরিচালনা করা হয় এ পর্বে। এক পর্যায়ে মানুষেরা আবিষ্কার করে এক রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি যা দিয়ে স্কাইনেটের মেশিনগুলোকে বন্ধ করে দেয়া যায়।
এর মধ্যেই কাহিনীতে প্রবেশ হয় আরেকটি রহস্যজনক সুপুরুষ মারকাসের।
প্রথমে তার সাথে কাইল রিসের পরিচয় হয়। কিন্তু কাইল রিস স্কাইনেটের হাতে ধরা পড়ে যায়। মারকাস পালিয়ে যায়। পরে মারকাসের সাথে পরিচয় হয় এক নারী পাইলট ব্লেয়ারের। তারা দুজনে জন কনরের ঘাটিতে যাওয়ার সময় একটা ম্যাগনেটিক মাইনে মারকাস আহত হয়।
সে সময় দেখা যায়, মারকাস কোনো মানুষ নয়, রবোট ও মানুষের সংমিশ্রন। তবে সে জানায় যে জন কনরকে রক্ষা করতেই সে এসেছে। জন কনর সে কথা বিশ্বাস করে না। সে মারকাসকে বন্দী করে রাখে। কিন্তু সেই নারী পাইলট ব্লেয়ার তাকে মুক্ত করে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে।
এ সময়েই জন কনর ধান্দায় পড়ে যায় মারকাসকে নিয়ে। কেন মারকাস জন কনরকে রক্ষা করতে চায়?
মারকাস ও ব্লেয়ার
অন্যদিকে জন কনর জানতে পারে, স্কাইনেট তাদের নেতাদের আগামী চার দিনের মধ্যেই মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। তালিকায় জন কনরের নাম দ্বিতীয় স্থানে আছে, প্রথম স্থানে আছে তার বাবা কাইল রিসের নাম। স্কাইনেটের ঘাটিতে আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় মানুষ পক্ষের নেতারা। কিন্তু স্কাইনেটের ঘাটিতে কাইল তখনই আক্রমণ চালাতে চায় না।
কারণ স্কাইনেট সেখানে বহু মানুষকে বন্দী করে রেখেছে। আক্রমণ করা হলে তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। সেখানেই বন্দী অবস্থায় আছে জন কনরের বাবা কাইল রিস। যিনি পরে টাইম মেশিনে করে অতীতে চলে যান (টার্মিনেটর থ্রী-এর কাহিনী অনুযায়ী)। কাইল রিসকে বাঁচানো না গেলে জন কনরের জন্মই হবে না, মানুষ পক্ষ পাবেনা এ সুদক্ষ নেতাকে।
জন কনর ও মারকাস
কাইল রিসকে উদ্ধার করার জন্য জন কনর নিজেই এক দুঃসাহসী অভিযানে স্কাইনেটের ঘাটিতে ঢুকে পড়ে। জন কনর যখন স্কাইনেটের ঘাটিতে তখন মারকাসও সেখানে। মারকাস জানতে পারে স্কাইনেটই মানবিক আবেগ দিয়ে মারকাসকে তৈরি করেছে জন কনরকে তাদের ঘাটিতে নিয়ে আসার জন্য। যে কারনেই জন কনর তখন তাদের ঘাটিতে। কিন্তু মানবিক আবেগ সম্পন্ন মারকাস তখন স্কাইনেটের অবাধ্য হয় এবং জন কনরকে রক্ষা করতে চেষ্টা করে।
বাকি অংশটা সিনেমায় দেখলেই ভাল লাগবে।
সিনেমাটা এতো দ্রুত শেষ হয়ে গেল যে বলার মতো না। ভাবছিলাম আগের পর্বগুলোর সঙ্গে এ পর্বটার পার্থক্য কি? কি কারণে এটা আগের মতো মানুষের নজর আকর্ষণে ব্যর্থ হলো। আগের মতো কাহিনীর বৈচিত্রতা নেই, নাকি চরিত্রগুলো আগের মতো আকর্ষণীয় নেই? মনে হলো দ্বিতীয়টাই সঠিক।
তবে সিনেমাটা অনেকের ভাল না লাগলেও আমার খুবই ভাল লেগেছে।
শুধু সিনেমা হলের দারুন সাউন্ড সিস্টেম আর ঝকঝকে ছবির জন্যই নয়, কাহিনীর বৈচিত্রতা আর অভিনয়ও দারুন। হল থেকে বাসায় আসার পরেও ব্লগে বসে চিন্তা করছিলাম, দারুন একটা সিনেমা দেখলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।