আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাণিজ্য মন্ত্রীর মন্তব্য বাংলাদেশের সাংবাদিকরা আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি ও টানটান বিবেক



সম্প্রতি আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রী ফারুক খান ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য এক বৈঠক সাংবাদিকদের নিয়ে মন্তব্য করেছেন। কোরআনের আয়াত উদ্বৃত্তি করে বক্তব্য দিয়েছেন। তার মনের উদ্দেশ্য আমাদের জানা নেই। তবে তার বক্তব্য অনেক রুঢ় সত্য আছে। কেউ মানুক আর নাই মানুক সবার ক্ষেত্রে বা সকল ক্ষেতে তা সমান প্রযোজ্য না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

সে সম্পর্কেই দুই একটি কথা বলা। তবে তার আগে তিনি কোরআনের আয়াত উদ্বৃত করতে গিয়ে যে সূরা গুলিয়ে ফেলেছেন সে ব্যপারে সচেতন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। পত্রিকায় উদ্বৃত হয়েছে, তিনি বলেছেন, পবিত্র কোরআনে সুরা নিসায় আল্লাহ বলেছেন, তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ করিও না। আসলে আয়াতটি সূরা নিসার নয়। আয়াতটি হবে সূরা বাকারার ৪২ নম্বর আয়াত।

পুরো আয়াতটি কি তা ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনূদিত ও প্রকাশিত আল-কুরআনুল করীম থেকে নিচে দেয়া হলো। সেই সাথে সূরা নিসায় এ ধরনের বিষয়ের কাছাকাছি কি আছে তাও দেয়া হলো। "তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করিও না এবং জানিয়া-শুনিয়া সত্য গোপন করিও না" - সূরা বাকরা : আয়াত ৪২ । "হে মু'মিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত থাকিবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ; যদিও ইহা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; সে বিত্তবান হউক অথবা বিত্তহীন হউক আল্লাহ্ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করিতে প্রবৃত্তির অনুগামী হইও না।

যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল অথবা পাশ কাটাইয়া যাও তবে তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তো তাহার সম্যক খবর রাখেন। " - সূরা নিসা : আয়াত ১৩৫। অল্পবিদ্যায় গোলমেলে হলেও তার এই সত্য প্রকাশের প্রচেষ্টা ও সংগ্রামকে সাধুবাদ জানাতেই হবে। আর অবাধ বাক স্বাধীনতার এই যুগে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে কিছু বলা, তা সত্য হলেও সত্যিই কঠিন ও সাহসের ব্যপার। সত্যের জন্য লড়াই করাও জিহাদ।

তিনি সেই কাজটি এখন থেকে আরো জোরেশোরে করতে ব্রত হয়ে থাকলে অগ্রিম সাধুবাদ রইল। 'সাংবাদিকরা ব্যবসায়ীদের চেয়ে খারাপ', 'বাংলাদেশের সাংবাদিকরা আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি' এবং 'তাদের উদ্দেশ ব্যবসায়ীদের চেয়েও খারাপ' বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। একাধিক পত্রিকায় এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদ হয়েছে কিনা জানা যায়নি। সাংবাদিকদের অনেকেই সে সাহস হয়তো রাখেন না। সে হিসেবে বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য মনে হয় সত্য।

তবে বাস্তবে এর পুরোটা সত্য না হলেও কিছু যে সত্য তা নিন্দুকেরাও বলে থাকেন। ইত্তেফাক থেকেই কোট করা - ‍‍''বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা মিথ্যা ও অর্ধসত্য সংবাদ প্রকাশ করে মানুষকে ভয় পাইয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনে সুরা নিসায় আল্লাহ বলেছেন, তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ করিও না। সাংবাদিকরা ঠিক তার উল্টো কাজ করে। পত্রিকার বিক্রি বাড়িয়ে টাকা উপার্জনের জন্য তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব কাজ করেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

" বলা যায়, ফারুক খান অনেক সত্য বক্তব্য দিয়েছেন বলেই সে রকম কোনো প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে না। আমি ফারুক খানের ঢালাও বক্তব্যের প্রতিবাদ করছি যে সব সাংবাদিকের পক্ষ থেকে যারা সৎ থাকার পরও নানা কারণে প্রতিবাদ করতে পারেননি। কিংবা প্রতিবাদ প্রকাশিত হবে না মুনাফালোভী বা স্বার্থন্বেষীর স্বার্থরিরোধী হবে বলে। তবে ফারুক খানের বক্তব্য সত্যিই ঢালাও ভাবে উড়িয়ে দেয়া যায় না। যারা অসৎ সাংবাদিকদের কাছে জিন্মি তারা অন্তত এতে খুশি হবে।

সাংবাদিকরা মিথ্যা ও অর্ধসত্য সংবাদ প্রকাশ করে অনেক সময় মানুষকে হয়রানি করে, ক্ষতি করার হুমকি দেয়। এরকম অনেক গল্পও আছে। তারা কলমকে আসলেই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। ফারুক খান কোরআনের যে আয়াতের উদ্বৃত্তি দিয়েছেন এবং বলেছেন সাংবাদিকরা ঠিক তার উল্টো করে তা আসলে অনেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেমন ধরুন বিদ্যুৎ নিয়ে জোট আমলে যে ভাবে সত্য মিথ্যা প্রচার করা হয়েছিল বর্তমান মহাজোটের সময় সত্যটাকেই সত্য বলেই লিখছে না।

দ্রব্যমূল্যের ব্যপারে জোট আমলে যেভাবে তাদের বিরুদ্ধে সত্য মিথ্যা দিয়ে জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা হতো, আজ সেই জনগণের নাভিশ্বাস উঠলেও তাদের পক্ষে সাংবাদিকরা কলম না ধরে নাভিশ্বাসকেই জায়েজ করানো হচ্ছে সেই একই সাংবাদিকদের দ্বারা। কিংবা দেখুন প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের কলম ধরার স্টাইল। একই সত্যকে শত্রুর বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে কিন্তু একই ধরনের বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, মিত্রকে ক্ষেপিয়ে তুলতে না চেয়ে। সাংবাদিকরা সাংবাদিকদের পক্ষে কথা বলছে না। মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়ে বলছে না।

সাংবাদিকরা যখন রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা প্রহৃত হচ্ছে তখন প্রতিবাদ হচ্ছে না উচ্চাবাচ্যও করছে না। এ যে কিল খেয়ে কিল হজম করার মতো। সাংবাদিকদের নিয়ে ফারুক খান যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সত্যতা কেমন? এই ফারুক খানই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত বলে যে সব কথা বাতাসে শোনা যায় বা কোনো কোনো পত্রিকা ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে চায় সেখানেই লুকানোর বিষয়টি থাকে বলে মনে হয়। তা প্রকাশেই তো মনে হয় সাংবাদিকরা বাণিজ্যমন্ত্রীর সেই 'উল্টো কাজ' করছে বলে মনে হয়। ইত্তেফাকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ''বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, বেশি লাভ করার প্রবণতা কমান।

দেশের মানুষ মেরে বড়লোক হতে দেব না। '' অথচ সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশ করলো না কিসের ভয়ে কে জানে। শেয়ার ব্যবসা থেকে কিংবা বাণিজ্য থেকে তিনি কত লাভ করলেন তা স্পষ্ট করে সাংবাদিকরা বলল না। কিছুদিন আগে পত্রিকায় সরকারি দলের নেতাদের উদ্বৃত্তি দিয়ে রিপোর্ট হয়েছিল যে মন্ত্রীদের টিভিতে দেখা গেলেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এই বিষয়টি নিয়েও সাংবাদিকরা তেমন উচ্চবাচ্য করলো না।

হয়তো জোট সরকার না বলে। হয়তো আকাশের দিকে ঢিল ছুড়লে নিজের গায়ে লাগতে পারে বলে। মনে হয় বাণিজ্যমন্ত্রী আকাশের দিকে বেফাশ ঢিল ছুড়ে ফেলেছেন। তবে 'তাদের উদ্দেশ্য ব্যবসায়ীদের চেয়েও খারাপ' বলেই মনে হয় এখন পর্যন্ত ফারুক খান বাণিজ্য মন্ত্রী আছেন। তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা কলম ধরবে না।

না হলে সাবেক আমলের এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কি লেখাই না হয়েছিল 'আল্লাহর মাল আল্লাই নিয়ে গেছেন' মন্তব্য করে এবং শেষে তার মন্ত্রীত্বও হারাতে হয়েছিল। আর আজ খোদ সরকারি দলের এমপির বাড়ি ডাকাতি হয়, কত কিছু হয় কিন্তু কারোরই কিছু হয় না। দায়িত্বশীলরা যে ভাষায় কথা বলে জনগণ হতাশ হলেও সবই সয়ে গেছে। অনেকেই অনেক কিছু বলে যাচ্ছেন, করে যাচ্ছে, সভ্য অসভ্যের প্রশ্ন তুলে দেশেকে নিয়ে তামাশা করছেন। সাংবাদিকররা সত্যকে তুলে ধরেন।

না। বাণিজ্য মন্ত্রী স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৪ টাকা দরে লবণ কিনতে হবে বলে জানান। অথচ তার সাথে প্রথম যে মিটিং ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের হয়েছিল সেখানে বাড়তি দামের উপর আরো পাঁচ টাকা বেশি দাম ঠিক করে জনগণকে আরো বোকা বানিয়ে বাড়তি দাম গেলানো হয়েছিল। সাংবাদিকরা সে সময় সত্যকে আসলেই ঠিক মতো তুলে ধরেনি। মাত্র দুদিন আগে বৈশাখি টিভিতে রাত্র এগারোটার এক টকশোতে বিএনপিপন্থী আইনজীবী সমিতির সভাপতি যিনি বারের নতুন সভাপতি হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন,সাক্ষাৎকারে অনেক কিছু বলছিলেন।

অনুষ্ঠানটি ছিল লাইভ। তিনি যতই বলেনই উপস্থাপক ততই গম্ভীর ও বিব্রত হচ্ছিলেন। কেননা যে সব বিষয় আসছিল তা তার মন মতো হচ্ছিল না। তবে অতিথি বেশ জোর দিয়েই বলে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে চালের দাম ১০ টাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে উপস্থাপক বলেই বসেন, কই এরকম সংবাদ তো দেখিনি।

অতিথি তাৎক্ষণিক ভাবে মজা করেই বিএনপির পল্টনের এক মহাসমাবেশে তার রেকর্ড শুনানো হয়েছিল বলাতে উপস্থাপক বেশ বিব্রত বোধ করলে। আমার এই অবস্থায় হাসি আসছিল। কেননা উপস্থাপক একজন সাংবাদিক হয়ে চেপে যেতে পারতেন। তাহলে বিষয়টি মেনে নেয়া যেত। কিন্তু সাংবাদিকরা এতবড় একটি বিতর্কিত বিষয় শোনেননি এবং তা নিয়ে তার কোনো ইনফরমেশন রাখেন না বা তার কোনো ইনফরমেশন নেই ভেবে কষ্ট হচ্ছিল।

অথচ এদের সময় সুযোগ মতো সমাজের বিবেক হিসেবে নিজেদের প্রচার করতে শুনবে। তাই বলা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রীর মন্তব্য ও সাংবাদিকদের মাত্রাজ্ঞান অবশ্যই বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। কোনো কোনো সাংবাদিক সত্যের পক্ষে নয়, কখনো কখনো সরকারের পক্ষে, কখনো কখনো বিরোধী দলের পক্ষে থাকনে। সে সময় তাদের বিবেক থাকে টানটান। আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি বিশেষই থাকেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।