যদি কখনও সুযোগ পাই, সাত বাজারের চুড়ি এনে দেব, যত্ন করো!
আমাদের জীবন শুরুর আগ থেকেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। জীবন শুরু মানে ভূমিষ্ঠ হবার কথা বলছি না। তারও আগ থেকেই এই প্রক্রিয়ার শুরু। ভ্রুণ গঠনের যে প্রাথমিক প্রক্রিয়া, সেখানেও প্রতিযোগিতাই করতে। কারণ ডিম্বাণু একটি. শুধু একটি মাত্র শুক্রাণুই তাকে নিষিক্ত করতে পারবে।
কিন্তু শুক্রাণু প্রবেশ করে শত-কোটি। এর মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালীটাই পারবে ডিম্বাণুর বাহিরর খোলস ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করতে, একটি নতুন জীবন শুরু করতে। আর দুর্বলগুলো সব মারা পরবে, সার্ভাইভাল দ্য ফিটেস্ট! এখানেও প্রতিযোগিতা!
ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকেই এক আজব, অসম, ছোটাছুটির মধ্য দিয়ে সময় অতিক্রম করতে থাকি আমরা। শিশু বয়সে আদর পাবার প্রতিযোগিতা, কখন কান্না করার প্রতিযোগিতা, ধনী শিশুর না খাবার প্রতিযোগিতা, সেটা নিয়ে আবার মায়েদের অভিযোগের প্রতিযোগিতা; আর অন্য পক্ষে গরীব মায়ের একাধিক শিশু থাকলে খাবারের তীব্র প্রতিযোগিতা!
বাচ্চা বয়সেই শুরু হয়ে যায় ভাল-নামী দামী স্কুলে ভর্তি হবার এক আজব প্রতিযোগিতা। না পারলে কান্নাকাটি বা চেঁচামেচির প্রতিযোগিতা।
জীবনের প্রথম পাব্লিক পরীক্ষায় A+ এর প্রতিযোগিতা। এর পর শুরু হয় ক্রমান্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিযোগিতা, ভাল বিষয় বাছাই, গ্রেড বাড়ানোর, পাশ করার প্রতিযোগিতা। এর মাঝে কারও শুরু হয় প্রেম করার, প্রেমে পরার প্রতিযোগিতা। ছ্যাকা দেয়ার বা খাওয়ার। প্রেয়সীকে কাছে পাবার প্রতিযোগিতা, প্রেম নামক এক আজব মাকাল ফল খাবার প্রতিযোগিতা।
কে কত বেশী খেতে পারে, কার দখলে কত বেশী থাকে। উৎকট কিংবা বিকট।
চাকরীর এক কঠিন বা নিষ্ঠুর প্রতিযোগিতা, এটাই বাস্তবতা। অর্থ উপার্যনের তীব্র নেশা সুস্থ্য মানুষকে অসুস্থ্য করে তোলে।
ঘুরে ঘুরে যদি, দূরে দূরে তবু মেঘে মেঘে থাক ভালবাসা
ইচ্ছে হলে ভালবাসিস, না হয় থাকিস
যেমন থাকে স্নিগ্ধ গাংচিল।
এই স্নিগ্ধ গাংচিল আর কেউ থাকতে পারে না। ভাল না বাসলেও না।
ভালবাসুক আর নাই বাসুক, বিয়ে হয়েই যায়। আবারও একি সাইকেল, একি লুপে আমরা আবর্তিত হই। একি প্রসেস, শুক্রাণুর ডিম্বাণু দখলের প্রতিযোগিতা।
কখনও ভাবি, সব শুক্রাণুর গঠন তো আর এক না। মানে জিনেটিক কোড। যেটার নিষিক্তকরণের ফলে আজ একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, যদি অন্য আরেকটি শুক্রাণু নিষিক্ত করত তাহলেও কি এই শিশুই জন্ম নিত, নাকি অন্য আরেক বৈশিষ্টের অন্যরকম আরেক শিশুর জন্ম হত? কে জানে?
মৃত্যূতেই কি এর পরিসমাপ্তি? আমার তো মনে হয় না। পরের জীবনেও একি প্রতিযোগিতা। একটু ভিন্ন ধাঁচে।
পাল্লায় আমলের নেকি বেশী হওয়ার প্রতিযোগিতা। আমলনামা ডান হাতে পাবার ইচ্ছার প্রতিযোগিতা। এরপর জান্নাত বা বেহেশতে যাবার তীব্র প্রতিযোগিতা। কে কার আগে যেতে পারবে, কে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে থাকতে পারবে সেটার প্রতিযোগিতা। আবার অপর দিকে কে সবার শেষে জাহান্নাম বা দোজখে ঢুকবে সেটারও একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
এরপর অবশ্য আর প্রতিযোগিতা থাকবে কিনা জানি না। আর জানতে ইচ্ছা করে না।
মাঝে মাঝে এসব ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে। কতদিন শিশিরভেজা সবুজ ঘাসে খালি পায়ে হাঁটা হয় না। সকালের সোনালী রোদে চুল শুকাই না।
বিকালের লালিমা আভায় আড্ডা দেয়া হয় না। অথবা ঝুম বর্ষায় কাদাপানিতে ফুটবল খেলা হয় না।
"যেখানে লাল সূর্যের রংয়ে রাজপথে মিছিল
যেখানে কুয়াশার চাঁদর আকাশ থাকে নীল
যেখানে রিম ঝিম বৃষ্টি শুকনো মাটির টানে
অবিরাম ঝড়ে সবুজ সাজায় ......
মেঘে মেঘে, কিছু ভেজা পাখির দল
মেঘ হারিয়ে, নীল ছাড়িয়ে, খুঁজে ফেরে বাংলাদেশ"
বেঁধে রাখা সময়ের ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে পরতে ইচ্ছা করে।
"সারাটা পথ জুড়ে আমি একা
হেটে যাই আকাশ তারার পানে চেয়ে
নীল জোছনায় স্মৃতিরো ভীড়ে
হারিয়ে যায় মন আধারে। "
এজন্য আড্ডা ভালবাসি, ভালবাসি কবিতা, মিছিলের মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে, উত্তপ্ত পীচঢালা রাজপথে।
একত্রে কত শত মানুষ মিছিলে, কিন্তু সবাই একা।
"আরেকবার যেতে চাই রিম ঝিম ঝিম সুদূরপুর
অবাক রোদ ভেজা তপ্ত দুপুর
আরেকবার তোমাদের লাল, নীল রং আনন্দে
একলা রাস্তায় এক চিলতে রোদ্দুর।
সারা বেলা বন্ধ জানালা ...... "
সারা বেলা বন্ধ জানালা......!
লিরিক: শিরোনামহীনের বন্ধ জানালা এলবাম থেকে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।