আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বর্গে ঋতুবতী

পাখি এক্সপ্রেস

১. মন ভালো থাকলেও টেবিলে কাঁচা ফুল থাকবে, খারাপ থাকলেও। ফুলের সাথে মন খারাপ বা ভালোর কোন সম্পর্ক নেই। বড়জোর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু টেবিলে ফুল রাখার বিষয়টি কবে উদ্ভব হয়েছে তা জানার প্রতি আগ্রহটা মোটেও ফেলে দেয়ার মতো নয়। শংকার বিষয় হলো নাজুর মাঝে সে আগ্রহ মোটেও নেই।

এ মূহুর্তে মিস্টার সেজানের সামনে বসে বরং একটি বিষয় বারবার জানতে ইচ্ছে হচ্ছে- কে কবে কোথায় কিভাবে মেয়েদের স্তনকে একটি লোভনীয় বস্তু হিসেবে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলো। মানুষের কপাল আর থুতনির দিকে তাকিয়ে তার ফিলোসোপি বলে দেয়ার বিরল ক্ষমতা থাকলেও সেজানের মনের অবস্থা বুঝতে পারছে না। হয়তো গভীর রাতে একটি মেয়ের সাথে একা থাকতে তিনি অশ্লীল কোন শংকাগ্রস্থ নতুবা নাজুর উন্নত স্তনে কোন রহস্য সন্ধান করছেন। সে যাই হোক লোকটা যে একটা উঁচু শ্রেণীর আবাল তা বুঝে নেয়া খুবই সহজ। গতরাত পার করতে নাজু স্বাভাবিকতার বাইরে না গেলেও মিস্টার সেজান বেশ কয়েকবার সিদ্ধান্ত বদল করেও সকালের রোদটা বেশ কড়াই মনে হচ্ছে।

শেষ রাতে একবার সাহস করে নাজুর চুল ধরেছিলেন। একটি মেয়ে যৌন কাজে কতোটা উদার হলে একজন পুরুষের সাথে একই কক্ষে রাত কাটাতে পারে- এমন ভাবনা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হতো না। কিন্তু পুরো শরীরে ভোল্টেজ এবং ফ্রিকোয়েন্সি উভয়ই সারারাত কাজ করেছিলো। সকালের চা’টা পর্যন্ত ঠিকমতো খেতে পারলেন না। মোবাইল টকিংয়ের অফার বা কফি উইথ মিস্টার অমুক নিয়ে অতোটা মাথা না ঘামালেও একসাথে কাজ করার দু’দিনের মাথায় বিয়ের প্রস্তাবটাকে বেশ এনজয় করা যায়।

নিজের জন্মের দিনের পরিবেশ কেমন ছিলো তা জানার সুযোগ না থাকলেও আন্দাজ করা যায় সেদিন পর্যাপ্ত আলো ও ফুলগুলোর পরিপূর্ণ সৌরভ ছড়ানোর ক্ষমতা ছিলো এবং নাজুর বাবা মা অবশ্যই সুষম খাদ্য গ্রহণ করতেন। আবার তাদের দু’জনার মাঝে বেশ গাঢ় প্রেম ছিলো। অন্তত আয়নার সামনে নগ্ন হয়ে এক নারীর দৃষ্টিতে নিজের শরীরটা দেখার পর এমনই মনে হয়। পুরুষের দৃষ্টিতে একবার দেখতে পারলে বোধ হয় ভালো হতো, কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন কোন পুরুষেরই দেখা পায়নি যাকে দেখে বুকে একটি কামড় বসাতে ইচ্ছে হয়। নিজ দেহের মতো কোমল না হোক কাঠুরিয়ার শরীরের মতো পেশীর বুনন দেখেও শরীরের কোথাও অনুভূতিগত পরির্ব্তন দেখেনি।

মনে প্রেম আসারও অনেক আগে হাত পায়ে মোজা পরা নারীদের দেখে নিজ শরীরটাকে নিষিদ্ধ, লোভনীয় অথবা সুস্বাদু কোন খাবার মনে হয়েছিলো। নইলে এমনভাবে ঢেকে রাখার কি কারণ থাকতে পারে। মনে আছে ছোটবেলায় পাশের বাড়ির উঁচু পেটের লায়লার একরাত ব্যবধানে পেট খালাস আর পুলের গোড়ায় খালের জলে ভাসমান নবজাতকের লাশ আবিষ্কারের পর দোররার শোঁ শোঁ আওয়াজের সাথে লায়লার কন্ঠে নরকের ডাকের সন্দিক্ষণে মসজিদের হুজুর কোন লজ্জা ছাড়াই নাপিতের কাজ করেছিলেন। লায়লার ন্যাড়া মাথা আর রক্তাক্ত শরীর গ্রাম থেকে বিতাড়িত হলেও সেই বীর্যবান পুরষের খোঁজ কেউই নেয়নি। দুপুরের ফর্সারোদে লায়লার ন্যাড়া মাথার চিকচিকানিতে একটুও আলো খুঁজে পায়নি লায়লা।

অনেক কষ্টের পর লায়লার বিচারের কারণ জানতে পেরে ভাসমান লাশটিকে জীবনের প্রথম ঋতুস্রাবের মতোই বিষাক্ত মনে হয়েছিলো এবং যতোবার বমি বমি ভাব আসলে ঘৃনার ষোলকলা পূর্ণ হয় ততোবারই ভাবটা এসেছিলো। সমসাময়িক বয়সে এক ফকিরনীর বসার স্থানে রক্ত দেখার পর পুরো সিঁড়ি ধুয়ে শেষ করলে বাড়ির কেউ একজন তাকে কিছু ন্যাকড়া দিয়েছিলো ‘হুনিত’ সামলে রাখার জন্য। ভাবনার চাকা ঘুরিয়ে মা আর জেঠীর মধ্যে ঝগড়ার সময় ভাষা হিসেবে ‘হুনিতের ত্যানার’ আগমনের বিষয়টি এবং বিশ পঁচিশ দিন পরপর বাবা কেন মায়ের সাথে না ঘুমিয়ে একা ঘুমোয় তার কারণ বুঝে নিলো। অবশ্য এ বয়সে এসে সে হুনিতকালে নির্বিঘেœ অফিস করতে নাজুর কোন সমস্যা হচ্ছে না। ২. : হ্যাঁ মিস্টার সেজান, আপনি বেশকিছু দিন যাবৎ আমাকে কিছু বলতে গিয়ে সাহস পান না।

আমি জানি আপনি শারিরীক দিক দিয়ে বেশ সুঠাম এবং চেহারাটা বোকাবোকা হলেও পরিপাটি। তো এখন কি আমি আপনার প্রেমে পড়ে যাবো? আপনার কি মনে হয়? : না, আমি আসলে আপনাকে বিয়ে করতে চাই। : খুব ভালো কথা। জানি কেন আমাকে বিয়ে করতে আপনি এতো আগ্রহী। ধরুন আপনি আমাকে মাথার দিক থেকে দেখা শুরু করলেন।

চোখ নিয়ে অতটা চাক্ষুস ভাবনা ভাবার মতো লোক আপনি নয়। নাক নিয়েও নয়। ঠোটের বিষয়ে এসে প্রথমেই কমলার কোষের কথা মনে করে একটু চেটে খেতে ইচ্ছে হয়েছিলো, তাই না? তারপর আস্তে আস্তে নীল হতে থাকলেন। এমনটিইতো মনে হয়। আপনার ঠোট আমার ঠোটের চাইতে মোটেও কম উন্নত নয়।

আমি এখন আপনার ঠোট খেয়ে দেখবো। ... কথাগুলো শুনে মিস্টার সেজানের গ্রামের বাড়ির ঠান্ডা জলের টিউবয়েলের কথা মনে পড়ে। কারণ তার পাশেই ধানের জমিন ছিলো এবং চৈত্র মাসে তা ফেটে যেতো। নাজু যতোই তার দিকে এগুচ্ছে ততোই তিনি ফেটে যাচ্ছেন। কিন্তু দেয়ালের পর আর কোন খালি যায়গা না থাকায় নিউটনের সূত্র পড়া থেকে বিরত হলেন।

অবশ্য নাজুর কোমল হাতে হ্যাঁচকা টানে পড়ে যেতেও অতটা দেরি হয়নি। : প্রথম বিষয় হচ্ছে আপনার মুখে খুব বিশ্রি গন্ধ। তারপর হলো আপনি খুবই বাজে পারফিউম ব্যবহার করেন। অবশ্য আপনি যে এক প্রজাতির বেশ্যা তা বুঝতেও আমার দেরি হয়নি। তাই বলছি আমি অতটা যৌনতাড়িত নয় যে ক্ষুধা মেটানোর জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মুরগীছানার রোস্ট খেতে হবে।

আশাকরি আমার ঠোট, স্তন এবং অন্যান্য আকর্ষন অতোটা টানবে না। হতাশ হবেন না, আপনার মুখের গন্ধ আর পারফিউমজনিত সমস্যা না থাকলে অন্তত পরখ করার খাতিরে হলেও আপনার পুরো শরীরটা একবার দেখে নিতাম এবং আমাকেও দেখাতাম। তারপর চুম্বকের অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে চাইতাম, ব্যর্থ হলে চুলের ক্লিপটা আপনার চোখে ঢুকিয়ে দিতাম। যতোগুলো ইন্দ্রিয় আছে দয়া করে সবগুলো আমার সৌজন্যে নেতিয়ে রাখুন আর শুনুন- আমি শরীরে পর্যাপ্ত পানির যোগান দেয়ার জন্যই টিউবয়েলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। ৩. : গতকাল বাবার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আপনার বাড়ি এবং বিশেষ করে আপনার বেডরুম দেখার সুযোগ হয়েছিলো।

রুমের দেয়ালজুড়ে শিশুদের ছবিগুলো মনে হয় দু’তিনদিন আগেই লাগিয়েছেন। আমাকে দেখানোর পর উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আপনার পিতৃত্ববোধ দেখে আমি আসলেই মুগ্ধ। আপনাকে সালাম। যতদূর জানি মেয়েরা গর্ভবতী হলে দেয়ালে শিশুদের ছবি টাঙ্গিয়ে রাখে কিন্তু আপনার বেলায় কি হবে? শিশুদের দেখলে মেয়েদের মাতৃত্ব জেগে উঠে।

এমন কথা কখনোই খুব শক্তভাবে মনে হয়নি। এমনটি হবারও নয়। অবশ্যই আপনি অথবা দোররা মারা হুজুররাও একসময় শিশু ছিলেন। একটি শিশু মানুষের মনে দ্বৈত সত্ত্বার সৃষ্টি করে। তার সরলতায় কোন সততা নেই।

বড়দের অনুকরণ করতে গিয়ে শিশুদের শারিরীক ভাষা অনেকটা মেয়লী হয় বলেই সবার কাছে খুব সুন্দর হিসেবে ধরা দেয়। বড় হয়ে সে যখন সবার সাথে তার শিশু সুলভতার প্রতারনা করে তখন সে আর শিশু থাকে না। সেও তখন কোন শিশুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। : এভাবে সব সুন্দরকে অনর্থক করে আপনি বাঁচবেন কিভাবে? : আপনার চোখে সুন্দরের অভাব থাকলেতো তার দায়ভার আমি নিতে পারি না। তাই না? : তার মানে আপনার সৃষ্টির মাহাত্ম অস্বীকার করছেন? আপনার জীবনে কোন পুরুষের আগন ঘটবে না? : আমি খুব সচেতনভাবেই একজন ফাউল লোকের সাথে কথা বলছি, এটা আমি জানি।

অন্তত আপনার মতো পুরুষের আগমন কখোনোই ঘটবে না। কারণ আপনার শরীর মাংসের হলেও আমার শরীর মধু দিয়ে ক্ষানানো, তাই না? হা হা হা... এরপর নিশ্চয় আপনার সাথে আমার আর কোন আলোচনা হওয়ার কথা নয়। : কিন্তু আপনি কি পুরুষ থেকে বাঁচতে পারবেন? যদি কখনো আক্রোশে পড়েন তবে আপনার সিকিউরিটি কি হবে? মানে আমি আপনার স্বামীর কথা বলছি। : আমি বরং একটি লেন্স আবিষ্কারের বিষয়ে চেষ্টা চালাই। যা ব্যবহার করলে আমি নগ্ন হয়ে চলতে পারলেও অন্যরা দেখবে আমি বোরকা পরিহিত।

কি বলেন? ৪. সবকিছুরই একটি গন্তব্য খোঁজার মতো মেয়ে নাজু নয়। যদি খুঁজতেই হয় তবে তার এতো সুন্দর শরীরের গন্তব্য কি? বিপরীত লিংগের আরো একটি সুষম শরীর বা সুন্দরী প্রতিযোগিতার প্রতিযোগী? অথবা উম্মুক্ত বাণিজ্যের এই সময়ে প্রস্টিটিউশন কার্ড সংগ্রহ? না এর কোন গন্তব্যই থাকতে পারে না, বরং এর ক্রিয়া থাকতে পারে। তা খুব স্বাচ্ছন্দেই চলছে। একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতাও মেনে চলেন বলে অফিসে কানাঘুঁষা হয়।

তো আর কি থাকতে পারে, একটি নতুন সংসার? সেই সংসারে একটি ঘর থাকবে, নিয়মিত রাতদিন বদল হবে এবং অন্তত তাদের বেডরুমে শক্ত একটি দরজা থাকবে এবং জানালায় ভারী পর্দাও থাকবে। রাতে কন্ঠ ছোট হয়ে এলে দেহের ভাষায় কথা বলতে হবে। এ পর্যন্ত এসে ভারী ভারী কিছু অংক কষতে হচ্ছে। অন্য অংকগুলো, যেমন- অসুস্থ হওয়া, বিবাহ বার্ষিকী, চুলে ফুল পরা বা সুন্দর দেখে ক’টা শাড়ী কেনার মতো বিষয়ের অংক খুব সহজেই কষে নেয়া যায়। এসব কষাকষির আগেই চোখের সামনে সেজান সাহেবদের মুখ খুব স্পষ্টভাবে ভেসে উঠে।

রাতের বেলা ঘরে জামাকাপড় পরে থাকতে মোটেও অভ্যস্ত নয়। শরীরটাকে একটু মুক্ত রাখলে নি:শ্বাস ফেলার মতো পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যায়। নিজের শরীরটা নাজুর খুবই প্রিয়। অনেক যতœ নেয়। শরীর খারাপ করলে বেশি বেশি কাজ করা যায় না।

কাজটাই যেহেতু মূখ্য সেহেতু শরীরটাও বিশেষ গুরুত্ব পায়। আয়নার সামনে বসে নিজ শরীরটা দেখতে গিয়ে স্তনের ওপর হাত বুলাতে বুলাতে সজোরে মুঠোচেপে ধরে ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলো। এতোজোরে এর আগে কখনোই নিজের স্তনে হামলে পড়েনি। কিন্তু মধু সংক্রান্ত হিসেক্ষের জের বের করতেই যতো ঝামেলা। শরীরের যে যে অংশে ব্যাপক মধু সংরক্ষিত আছে সেখানেতো ব্যাথা পাবার প্রশ্নই ওঠে না।

ওই স্থানসমূহ বাদে যতো অসুস্থতা আর ব্যথা থাকার কথা। তবে এটার আর বিশেষত্ব কোথায়? যৌন অনুভূতি দিয়ে? কিন্তু কেউ চাইলেই বোধহয় শরীরের সব প্রত্যঙ্গেই অনুভূতির সৃষ্টি করে নিতে পারে। আসলে এদেশের মানুষ সবদিকেই দরিদ্র। তাদের ক্ষুধা বেশি। কিছু ভোগ করার সুযোগ পেলে একেবারে চেটেপুটে খাবে।

নইলে পাশ্চাত্যের রমনীদের স্তন এতো উন্নত হলেও আমাদের এখানের বিবাহিত মেয়েদের বুকটাকে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের মতো মনে হয়। -নাহ্ এসব বালছাল ভাবার কোন অর্থই হয় না। তারচে’ ঘুমোনোই ভালো। ৫. অফিসে নতুন সুন্দরী রিসেপশনিষ্টের আগমনে সুন্দরপ্রিয় সেজান সাহেবের চাইতে নাজুই বেশি খুশি। আর আশেপাশে যেহেতু বেশ ক’টা চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট আছে সেহেতু অফিস ছুটির পর হানা দিলে একটাতে হলেও সেজান সাহেব আর নতুন কলিগকে পাওয়া যাবেই।

এরকম কিছু ভাবতে ভাবতে অফিসে ঢুকেই নতুন রিসেপশনিস্ট ফারিয়া’র দিকে ঝুঁকে থাকা সেজান মাহমুদকে বেশ অপ্রস্তুত দেখা গেলো এবং একটি বাক্যও শোনা গেলো- ‘না মানে, নাজু ম্যাডামও আপনার মতোই ভালো। ’ কথাটি শুনার পর একটু হাসি বিসর্জন দিতে নাজুর বিশেষ কোন সমস্যা হয়নি।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।