...দেখো হঠাৎ ফেরারী কোনও স্মৃতিই কাঁদাবে্...
শীতের সকালের মিষ্টি রোদ্দুরে ঘুম ভাংলো অনিকের
আড়মোরা ভেঙ্গে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা খেতে বসল সে। শীতকাল সবসমই তার খুব প্রিয়।
পাশের ঘর থেকে সুমনের গান ভেসে আসছে…
“আজি জানলার কাছে ডেকে গেছে এক পাখির মতন সকাল…”
আজ অনিকের আর বাসা থেকে বের হতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু সুন্দর সকালটা তার ঘরে বসে কাটানো হল না, বেশ কয়েকটা কাজ সারতে হবে আজ, তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পরে নিল সে, ঘর থেকে বের হল;
২
কয়েকদিন আগে একটা ব্যাগ হারিয়ে ফেলেছে অনিক। কিভাবে যে হারালো এটা সে মনে করতে পারছে না, মনে হয় কোনো বাসের সিট এর উপর ফেলে এসেছে; ব্যাগের ভেতরে তার পাসপোর্ট আর পরীক্ষার সার্টিফিকেটগুলো ছিল; বাধ্য হয়ে এখন থানায় যেতে হচ্ছে ডায়েরি করতে; এর আগে অনিকের থানায় যাওয়ার কোন অভিজ্ঞতা হয় নি, ভেতরে ঢোকার পর তার অনুভূতিটা ঠিক সুখকর হল না; অনেকগুলো টেবিল এ বসে ইউনিফর্ম পরা পুলিশগুলো কাজ করছে। হইচই আর চিতকার এর ভেতর কাজ চলছে।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তার পালা আসল, এর মাঝে সে যা দেখল তা ভুলে যাওয়াই ভালো;সবাই ডায়েরীর মধ্যে কাগজ গুজে দিচ্ছে, আর পুলিশগুলো সেগুলো নির্বিকারভাবে পকেটে পুরে রাখছে, খুবই সহজ এবং সাভাবিক ভংগিতে, একটুও আড়ষ্টতা নেই তাদের এই ব্যবহারে;
“কি সমস্যা আপনার?” অনিক সম্বিত ফিরে পেল পুলিশ অফিসার এর ডাকে।
অনিক সবকিছু ব্যাখ্যা করল;
“আপনারা যে কি সব করেন! এত্ত অসাব্ধান! আপনাদের জন্য আমাদের ঝামেলা পোহাতে হয়। ”
অনিক সবকিছুই হজম করে গেল; সব শেষ হওয়ার পর সে চেয়ার থেকে উঠে দাড়াল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে বের হতে চায় সে;
“এই যে!চলে যাচ্ছেন যে”, পেছন থেকে ডাক পড়ল আবার;
“থানায় কি কখনো আসেননি নাকি? সব ছোটলোকে দেখি দেশ ভরে যাচ্ছে, ভদ্রতাবোধ টুকুও নেই দেখি। ”
অনিক কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো, অনেকগুলো মুখ সে দেখতে পেল, সবাই এসেছে তাদের সমস্যা নিয়ে, সবগুলো মুখই বোবা;
পকেটে হাত দিল সে, কিছু কাগজের স্পর্শ পাওয়ার জন্য;
৩
থানা থেকে বের হয়ে অনিকের খুব ক্লান্ত লাগল; আজকে আর কোন কাজ করতে ইচ্ছে করছে না; বাসায় ফিরতে চায় সে; প্রচন্ড ভীড় ঠেলে বাসে উঠল সে; অনেকটা পথ; সিট খালি হতেই বসে পড়ল; আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণের ভেতরে সে অন্য জগতে চলে গেল; কতক্ষ্ণ ঘুমিয়েছে সে ঠিক বলতে পারল না, ঘুম ভাংলো হইচইয়ের শব্দে।
-“ব্যাটা, তেলের দাম বাড়ছে কয় টাকা?তুই ভাড়া ৯ টাকা চাস?”
-“স্যার, ৯ টাকা অনেকদিন ধরেই ভাড়া”, ১০ কি ১১ বছরের একটা ছেলে করুণ চোখে বলল।
-“তুই আমারে শেখাস?তুই কয়দিন এই রুট এ হেল্পারগিরি করিস? প্রতিদিন ৮ টাকা দিয়ে যাই”
-“স্যার, ভাড়া ৯ টাকা, আপনি জিগান সবাইরে”
-"তোর এত্ত বড় সাহস!মুখে মুখে তর্ক করিস!!! ………। ”
"…………………………………………………………"
"…………………………………………………………"
"…………………………………………………………"
আচমকা লোকটা প্রচন্ড জোড়ে ঘুসি মারে ছেলেটার নাকে, রক্ত পড়তে থাকে তার নাক দিয়ে;
৪
বাসের কিছু লোকজন ছেলেটার গায়ে হাত তোলার ঘটনাকে মেনে নিতে পারে না, কিন্তু বেশীরভাগ মানুষকেই খুশী দেখা যায়; ছেলেগুলো যে ভাড়া নিয়ে অনিয়ম করে এবং কবে কে ১ টাকা বেশী ভাড়া দিয়েছে এই গল্প জুড়ে দেয়; অনেকেই বলে যে এদের নিয়মিত মার দেওয়া উচিত; নিয়মিত টাকা মেরে খাচ্ছে; এ সব অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলেই নয়; উচিত শিক্ষা হয়েছে;
৪
অনিক ভাবে আর ভাবে;
মানুষগুলোকে মেলানোর চেষ্টা করে!
ইশ!
মানুষগুলো যদি সবজায়গায় প্রতিবাদী হতে পারত; অন্যায়গুলো বুঝতে পারত; সাহস দেখাতে পারত!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।