কাল্পনিক এই সুপারহিরোদের কদর সবসময়ই ছিল, আছে, থাকবে। হলিউডের পর্দায় যেখানে রাজত্ব করে চলেছেন ব্যাটম্যান আর সুপারম্যানরা, সেখানে পিছিয়ে নেই বলিউডও। ভারতীয়দের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেই আরও নতুন, আরও উন্নত এবং আরও শক্তি নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ফিরে এসেছে বলিউডের সুপারহিরো কৃষ।
সারাবিশ্ব যখন সুপারহিরোদের কর্মকাণ্ড দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সিনেমাহলগুলোতে, সেই উত্তেজনার পালে হাওয়া লাগাতেই রোশান পরিবার ফিরে এসেছে ‘কৃষ থ্রি’ নিয়ে। বাবা রাকেশ রোশানের পরিচালনা আর ছেলে হৃত্বিক রোশানের তুখোড় অভিনয়-- দুয়ে মিলে বলিউডের সর্বপ্রথম সুপারহিরো কৃষ সিনেমাপ্রেমীদের মনে বিশেষ এক জায়গা করে নিয়েছিল আগেই।
আর তাই স্বভাবতই পরপর দুটি সিনেমার পর এবার এই সুপারহিরো কী করবেন, তা নিয়ে আগ্রহের কোনো সীমা ছিল না সাধারণ দর্শকের।
প্রথমেই আসা যাক সিনেমার প্রধান অভিনেতা হৃত্বিক রোশনের প্রসঙ্গে। ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া তার সিনেমা ‘অগ্নিপথ’-এর পরে বড়পর্দা থেকে যেন হারিয়েই গেছেন হৃত্বিক। নতুন সিনেমা ‘ব্যাং ব্যাং’ এবং ‘কৃষ থ্রি’-র জন্য মাঝেমধ্যে সংবাদে এলেও জনসম্মুখে খুব কমই দেখা গেছে তাকে। এরই মধ্যে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে খবর এল, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন তিনি।
‘কৃষ থ্রি’-র জন্য একটানা প্রায় তিন মাস বিভিন্ন ধরনের স্টান্ট পারফর্ম করতে গিয়ে মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন হৃত্বিক।
ভক্তদের দুশ্চিন্তা দূর করে সফল অস্ত্রোপচারের পর বাড়ি ফিরলেন ৩৯ বছর বয়সী এই অভিনেতা। এরপর আরও একবার সংবাদের শিরোনাম হলেন হৃত্বিক, তবে এবার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে। গুজব উঠল স্ত্রী সুজানের সঙ্গে হৃত্বিকের ১৩ বছরের সংসার এখন ভাঙনের পথে। তবে বিষয়টি যে ছিল স্রেফ গুজব, তা খুব শীঘ্রই জানতে পেরেছে সবাই।
সুপারহিরোদের সিনেমা এখন বিশ্বজুড়ে মানুষের বিনোদনের অন্যতম প্রিয় মাধ্যম। হলিউডের উচ্চমানের স্পেশাল ইফেক্ট এবং সাহসী সব অভিনেতার সুপারহিরো চরিত্রে অভিনয় দেখে যারা অভ্যস্ত, তাদের তুষ্ট করার জন্য ‘কৃষ থ্রি’ ছিল হৃত্বিকের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। তার উপর পরপর দুটি সিনেমায় (‘কোয়ি মিল গায়া’ এবং ‘কৃষ’) সুপারহিরোর ভূমিকায় মারাত্মক পারফরম্যান্স এবং দুর্দান্ত অভিনয় করে হৃত্বিক নিজেই ভক্তদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে তুলেছিলেন অনেক বেশি। আর তাই এবারের কিস্তিতে কৃষকে তার নিজের সীমা ছাড়িয়ে যেতে হয়েছে।
এবার জানা যাক সুপারহিরো কৃষের পারফরম্যান্স দেখে কী বললেন সমালোচকরা।
হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার সমালোচক অনুপমা চোপড়া বলেন, “আয়রনম্যান কিংবা সুপারম্যান, যেই হোক না কেন, হলিউডের সুপারহিরোদের মতো হিন্দি সিনেমার সুপারহিরোরা শুধুমাত্র পৃথিবীকে রক্ষাই করেন না, তাদের নাচতে এবং গাইতেও হয়। পরিবারের মূল্যবোধ রক্ষা করতে হয়। আর এই কাজে হৃত্বিক রোশনের চাইতে পারদর্শী এখন পর্যন্ত কেউ নেই। ”
বছরের অন্যতম বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘কৃষ থ্রি’-তে মালমসলার কোনো ত্রুটি রাখেননি রাকেশ রোশান। ভক্তদের যেন একবিন্দুও নিরাশ হতে না হয়,তার জন্য সব ব্যবস্থাই করেছিলেন তিনি।
তারই ফলশ্রুতিতে প্রথমবারের মতো কোনো বলিউডি সিনেমায় ‘সুপার ভিলেন’-এর আবির্ভাব ঘটালেন তিনি। সুপারহিরো কৃষের লড়াই এবার ক্ষমতাশালী কোনো মানুষের সঙ্গে নয়, বরং একজন সুপারভিলেন ‘কাল’-এর সঙ্গে। কাল এমনই এক ভিলেন, যার ক্ষমতা এবং শক্তি কৃষের চেয়ে কম নয় কোনো অংশে। সুপারহিরো এবং সুপারভিলেনের এই জমজমাট লড়াই দেখতে তাই আর দেরি করেননি ভক্তরা।
বড়পর্দায় উপস্থিতি অনেক কমে যাওয়ায় অভিনেতা বিবেক ওবেরয়কে ভুলতে বসেছিলেন অনেকে।
এমনই সময় সম্পূর্ণ নতুন এবং মোটামুটি অবিশ্বাস্য রূপে সিনেমাপ্রেমীদের সামনে হাজির হয়েছেন বিবেক। বলিউডের প্রথম সুপারভিলেন ‘কাল’-এর ভূমিকায় তার অভিনয় সমালোচক এবং দর্শক সবাইকে করেছে মুগ্ধ। শারীরিক ভারসাম্যহীন কাল তার মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে নির্মাণ করে অতিমানব শ্রেণির কিছু প্রাণীকে। যাদের নিয়ে সে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে মানবজাতিকে। আর কালের ওই অশুভ পরিকল্পনাকে ভেস্তে দিতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামে কৃষ।
মানুষ এবং গিরগিটির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হল নতুন এক প্রজাতির নারী, যার নাম হল ‘কায়া’। কালের সহযোগী কায়ার ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রানৌত। সেই সূত্রে তাকে বলা যায় বলিউডের প্রথম নারী সুপারভিলেন। সমালোচকদের প্রশংসা তো পেয়েছেনই, দর্শকদের কাছেও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন কায়া।
অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়া সিনেমায় অভিনয় করেছেন কৃষের স্ত্রীর ভূমিকায়।
যদিও তিনি সম্প্রতি বলেছিলেন, তিনিই হলেন ‘কৃষ থ্রি’ সিনেমার মূল নায়িকা, কিন্তু সিনেমায় তার চরিত্রটি অনেকটা সংক্ষিপ্ত। সিনেমার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফ জাকারিয়া,ও রাজপাল ইয়াদাভ এবং নাসিরুদ্দিন শাহ।
অন্যসব দিক দিয়ে দর্শকদের চাহিদা পূরণ হলেও, ‘কৃষ থ্রি’ সিনেমার সংগীত মন ভরাতে পারেনি শ্রোতাদের। তবে সমালোচকদের মতে, গানগুলোর চিত্রায়ন হয়েছে চমৎকার। ‘রঘুপতি রাঘব’ গানটি জনপ্রিয় হলেও বাকি গানগুলো তেমন একটা শ্রোতাপ্রিয়তা পায়নি।
আগের দুই কিস্তির মতোই ‘কৃষ থ্রি’-র সংগীত পরিচালনা করেছেন রাকেশ রোশানের ভাই রাজেশ রোশান।
সমালোচকদের মধ্যে অধিকাংশই বলেছেন, ‘কৃষ থ্রি’-এর স্পেশাল ইফেক্ট, পোশাক, মেকআপ থেকে শুরু করে কলাকুশলীদের অভিনয়- সবই ছিল চমৎকার। কিন্তু যে বিষয়টির কারণে ‘কৃষ থ্রি’ হতে পারে হতাশাব্যাঞ্জক, তা হল কাহিনিতে নতুনত্ব নেই। গতানুগতিক সুপারহিরো মুভির কাহিনি থেকে ভিন্ন নতুন কিছুই খুঁজে পাননি সমালোচকরা। এরপরেও ‘বলিউড হাঙ্গামা’-এর সমালোচক তরণ আদর্শ ‘কৃষ থ্রি’-কে দিয়েছেন ৪ দশমিক ৫ তারকা।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া থেকেও ‘কৃষ থ্রি’ পেয়েছে ৪ দশমিক ৫ তারকা। বলা বাহুল্য, বাণিজ্যিক ধারার কোনো সিনেমা সমালোচকদের কাছ থেকে এমন সমাদর খুব কমই পায়।
শুরুতে ৪ নভেম্বর মুক্তির কথা থাকলেও পরবর্তীতে দিওয়ালির দিনই মুক্তি দেওয়া হয় ‘কৃষ থ্রি’। ১ নভেম্বর মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম দিন শুধুমাত্র ভারতেই ২০ কোটি ৪১ লাখ রুপি আয় করেছে সিনেমাটি। হিন্দি ভাষার পাশাপাশি তামিল এবং তেলেগু ভাষায় মুক্তি দেওয়ার ফলে লাভের অংক বেড়ে চলেছে দ্রুতগতিতে।
তবে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ এবং ‘ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-এর রেকর্ড ভাঙতে পারবে কি না ‘কৃষ থ্রি’-সময়ই বলে দেবে তা।
সুপাহিরো মুভি সিরিজ ‘কৃষের’ ক্ষেত্রে প্রথমেই দেখতে হবে সিনেমাটির মূল দর্শক কারা। ভারতীয় উপমহাদেশে বেশিরভাগ লোক সিনেমায় নাচ-গান এবং আবেগ দেখতেই বেশি পছন্দ করে। কৃষ হল এক কথায় ‘দেশি সুপারহিরো’, যার সঙ্গে হলিউডি সুপারহিরোদের মেলানো চলে না। আর যেখানে কমিক বুকের ভক্ত প্রায় হাতে গোনা, সেখানকার সামগ্রিক বাজারের হিসেব করলে ‘কৃষ থ্রি’কে বলা যেতে পারে মসলাদার কাহিনি আর সুপার পাওয়ারের এক ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।