আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিরোনামহীন শিমুল



১. বিশ্বাসই হাচ্ছল না শিমুলের, ভুল শুনলো না তো। আবার ও জিজ্ঞেস করলো, "ফাইনাল সিলেকশনে আমার নাম আছে?" ফোনের ওপাশের কন্ঠ আবারো তাকে নিশ্চিত করলো, জ্বি আছে। খুশিতে আর তর সইছে না শিমুলের। পাবালিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাষ্টার্সে পড়ছে শিমুল। এই খুশির কারন একটি বিদেশী দাতা সংস্থা শিমুলকে তার কোর্স থিসিস পেপার'টি তৈরীর গবেষনা কাজে আর্থিক সহয়তা দিবে।

মাস কয়েক আগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে শিমুল সেখানে আবেদন করেছিল। সংস্থাটি আজ নিশ্চিত করলো সারা দেশ থেকে ২০ জনের থিসিস পেপার নির্বাচিত করা হয়েছে, আর এর মধ্যে শিমুলের'টিও আছে। ২. এই খুশির মাঝে একটু বিরক্তি'র কারন হলো তার গবেষনার প্রশ্নপত্র ও মেথডলজি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি তার দিক থেকে হয়নি হয়েছে তার গবেষনার সুপারভাইজারের কারনে। অনেক পরিশ্রম করে, সেকেন্ডারী মেটেরিয়েল পড়ে- শিমুল খসরা প্রশ্নপত্র ও মেথডলজি তৈরী করেছে অনেক আগেই।

কিন্তু সুপারভাইজার মহোদয়ের নাগাল সে পাচ্ছে না। ডিপার্টমেন্টের নোটিশ বোর্ডে যেদিন কে কোন শিক্ষকের আন্ডারে থিসিস করবে তার তালিকা ঝুলানো হলো, সবচাইতে অখুশি হয়েছিল শিমুল তার সুপারভাইজারের নাম দেখে। তার বান্ধবী'রা অবশ্য টিপ্পনি কেটে বলেছিল, শিমুল তোর কপাল আরো খুলে গেলো'রে। "গাজি", আড়ালে সবাই এই স্যার'কে পাজি নামেই ডাকে। ৩. আজ টানা ছয় দিন শিমুল প্রতিদিন ক্যাম্পাসে আসে, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে।

কিন্তু স্যারের সাথে থিসিস বিষয়ক কোন কথা সে বলতে পারছে না। এতো ব্যস্ত একটা ব্যক্তি যে কেনো আবার স্টুডেন্ট'দের থিথিস সুপারভাইজার হয়ার আগ্রহ দেখায় শিমুল তা বুঝে না। এমন সময় হটাৎ গাজি স্যারকে দেখা গেল লবি থেকে বের হয়ে ক্যাফেটেরিয়ার দিকে যাচ্ছে। শিমুল দেরী করে না। তাড়াতাড়ি পিছু নেয়।

শিক্ষক ক্যাফেটেরিয়ার ঠিক দরজার মুখে স্যারের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয় শিমুল। হ্যা শোন, তোমার থিসিস নিয়ে আজ কথা বলবো। তুমি তো শহরে থাকো তাই না। জ্বি শিমুল উত্তর দেয়। তাহলে তুমি আজ আমার সাথে আমার গাড়িতে চলো।

তোমাকে বাসায় পৌচ্ছে দেব আর যেতে যেতে থিসিস নিয়ে কথা বলবো। আমি এক ঘন্টা পর বের হবো। তুমি আশে পাশে কোথাও থেকো। ৪. মনের সাথে একটা ঘন্টা প্রচন্ড যুদ্ধ করেছে শিমুল। স্যারের গাড়ি'তে করে যেতে যেতে থিসিস নিয়ে কথা বলার প্রস্তাবটা'তে সায় দিবে কিনা।

মেয়েদেরকে গাজি স্যারের লং ড্রাইভের প্রস্তাব এবং এটা নিয়ে ক্যাম্পাসে কানাঘুসা আলোচনা আনেক দিনের। শিমুল কখনো ভাবেনি এর মুখোমুখি তাকে একদিন হতে হবে। প্রস্তাবটা শিমুল গ্রহন করলো, কারন স্যারের সাথে থিসিস নিয়ে কথা বলাটা তার জন্য ভীষন জরুরী। ওদিকে বিদেশী দাতা সংস্থা'টির খসড়া রিপোর্ট দেয়ার ডেটলাইন ও ঘনিয়ে আসছে। ৫. বাসায় ফিরে শিমুল ফিরে দেখার চেষ্টা করছে।

গাড়ীতে করে শহরে আসার পুরো ৪৫ মিনিট স্যারের সাথে কি কি আলোচনা হলো। থিসিস নিয়ে একটা বিন্দুও স্যার আলোচনা করেননি। আলোচনা করেছেন পড়ালেখার পর আমি কি করতে চাই, স্যারের সাথে কোন কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সাথে ভালো যোগাযোগ আছে, ইত্যাদি। শিমুল গাড়ী থেকে নামার সময় স্যার বললেন, তুমি আগামী মঙ্গলবার ২টার সময় আমার অফিসে আসো। তোমার থিথিসটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

শিমুল বললো আগামী সপ্তাহ থেকে তো ক্যাম্পাস গ্রীষ্মকালিন ছুটি। বিশ্ববিদ্যালয় চলাকালিন সময়ে আমার সময় বের করা ভীষন কঠিন। বোঝই তো ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা কমিটির দ্বায়িত্ব, কেন্দ্রীয় প্রায় ৫/৬ টি কমিটি'র সাথে যুক্ত - কিভাবে সময় পাবো বলো। এখন দেখো চিন্তা করে। শিমুলকে চিন্তা করার সময় দেয় না গাজী স্যার, ড্রাইভারকে গাড়ী চালানোর ইশারা করে।

৬. পাহাড় ঢাকা এই ক্যাম্পাসটা ক্লাশ চলাকালিন সময়েও মাঝে মাঝে গা'ছমছম করা অনুভুতি সৃষ্টি করে। আর আজ তো ক্যাম্পাস ছুটি। কাধে একটা ঝোলা ব্যাগ নিয়ে শিমুল ডিপার্টমেন্টের ঢোকার মুখের সিঁড়িতে বসে আছে। ব্যাগে থিসিস সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজ পত্র। একটা অজানা শঙ্কা মনের মাঝে কেন যে উঁকি দিচ্ছে শিমুল বুঝছে না।

২টা বাজার সাথে সাথেই স্যারের দরজায় টোকা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো শিমুল। গভীর মনোযোগ দিয়ে একটা খাতা দেখছিলো স্যার। শিমুল'কে দেখে, ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম আজকে তোমার সাথে আমার থিসিস নিয়ে বসার কথা। শিমুল তার তৈরী করা খসড়া প্রশ্নপত্র ও মেথডলজি'র কাগজ গুলো স্যারকে এগিয়ে দেয়। স্যার এটা যদি আজকে দেখে ফাইনাল করে দিতেন।

অব্শ্যই কেন নয়, স্যার চেয়ার থেকে দাড়িয়ে বলেন। তারপর দরজার দিকে এগিয়ে যান এবং নিঃশব্দে দরজার ছিটকানি'টা আটকে দেন। শিমুল চেয়ার থেকে দাড়িয়ে যায়। গাজী স্যার এগিয়ে এসে ডান হাত দিয়ে শিমুলের গালে আলতো করে স্পর্শ করেন। একটা চিৎকার দিয়ে শিমুল পিছিয়ে যায়।

গাজী বলছে, "বি স্মার্ট শিমুল"। একটু ভেবে শিমুল স্মার্ট হবার সিদ্ধান্ত নেয়। স্যারের দিকে এড়িয়ে যায় - বা'হাতে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে গাজীর গালে একটা চড় মারে। তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। শেষাংশ: এই ঘটনার পর শিমুলের বন্ধুরা গাজীর গাড়ীতে মাঝারী আকারের শক্তিশালী একটা বোমা মারে।

এতে গাড়ীর ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘটনা ঘটিয়ে গাজী'র মোবাইলে বন্ধুরা ফোন করে বলে, ভবিষতে এই ধরনের আর কোন ঘটনা যদি আপনার দ্বারা ঘটে ভুলে যাবেন না আপনার মেয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তার ক্ষেত্রেও ঠিক সেই রকম ঘটনা ঘটবে। ঘটনাটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখানে মূল চরিত্রে'র নাম পান্টে শিমুল দেয়া হয়েছে।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গাজি'র নাম হুবহু তাই রাখা হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।