আপনি পাথরের রাজ্যে, নিরেট পাথরের রাজ্যে আছেন । বুক ভরা পানির পিপাসা । আকাশে সূর্যের তীব্র জ্বালা ধরানো উপস্থিতি । বাতাস যা-ও আছে এক আধটু - আপনার নিশ্বাসেই খরচ হয়ে যাচ্ছে সব । বন্য ক্যাকটাস আর নাম না জানা বিষাক্ত গুল্ম ঘিরে রেখেছে চারপাশ ।
আপনার সামনে দশ-বারো হাত দুরেই সুন্দর একটা ঝরণা । আপনি কী করবেন ? পানি পান করবেন ? আপনাকে যদি বলা হয় "পানি না খেয়ে যতক্ষণ থাকতে পারবে শুধু ততক্ষণই তুমি বেঁচে থাকবে । যখনই পানি খাবে তোমার বুক ফুটো করে দেওয়া হবে । " কী করবেন ? না খেয়ে থাকবেন ? নাকি একটু শান্তিতে মরার জন্য পানি খেয়ে মৃত্যু ত্বরান্বিত করবেন ?
ক্রস ফায়ারে যারা মারা যাচ্ছে তারা কি উপরের ঐ অবস্থার থেকে ভিন্ন কোন অবস্থায় আছে ?কিংবা পাড়ায় - মহল্লায় গজিয়ে ওঠা বখাটেগুলো ? নেশাখোর, নারী নির্যাতক, খুনী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজরা কি স্বভাব কিংবা আমোদের কারণে তৈরী হচ্ছে ? নাকি পরিবেশ বাধ্য করছে বলে ? বিড়ালের সামনে ভাজা মাছ রাখবেন আর বিড়াল তা খেল বলে পিটিয়ে মেরে ফেলবেন - এটা কি মানবতা ?
আপনাকে যদি ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হয় তাহলে আপনাকে একচক্ষু হলে চলবেনা । আপনি চুরি করার সব ব্যবস্থা করে রাখবেন আবার চুরি করলে সাজা দিবেন এটা হতে পারেনা ।
আপনি অবৈধ অস্ত্র থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে পারবেননা আবার সবাইকে অস্ত্র রাখার অনুমতি দিবেন না এটা মেনে নেয়া যায়না । অবৈধ অস্ত্রধারীরা মানুষ মারবে আর মানুষগুলো অস্ত্র রাখা অন্যায় বলে নিরবে মরে যাবে- এটা কি ন্যায় বিচার হতে পারে ?
কিভাবে একজন বখাটে কিংবা সন্ত্রাসী তৈরী হয় ? আছে এ দেশে এ ব্যাপারে কোন ভাল গবেষণা ? অবিভাবকদের এ ব্যাপারে কখনো সচেতন করা হয় ?আপনার সমাজ যদি হয় বখাটে এবং সন্ত্রাসী তৈরীর নিপুণ কারিগর, তাহলে সেই বখাটে এবং সন্ত্রাসীদের শাস্তি দেয়ার বিধান কি মানবিক হতে পারে ?যে একবেলা পেট পুরে খেতে পারেনা তাকে যদি চুরির দায়ে সাজা দেয়া হয় এর চেয়ে মানবতার প্রতি অপরাধ আর কী হতে পারে ?
আপনি মহারাজ এতদিন লাঠিয়াল পোষলেন কেউ কিছু বলার সাহস পেলনা । আজ সেই লাঠিয়াল আপনার কোন হুকুম অমান্য করায় তাকে আপনি আপনারই নির্দেশে করা কোন অন্যায়ের শাস্তি হিসাবে শুলে চড়ালেন । বাহ্ কী চমৎকার আপনার বিচার । পাপী কোনদিনও ন্যায় বিচারের হাত থেকে রেহাই পায়না !!!
একটা সিস্টেম যখন পুরোপুরি কার্যকর না থাকে তখন ঐ সিস্টেম প্রকৃত অর্থেই অমানবিক আচরণ করে ।
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে ঘাতক- তাকে ঠেকানোর কোন পদক্ষেপ নেই । তার অসহায় শিকারকেই ধ্বংস করার মহোৎসবে মেতে উঠছে সবাই । আক্রান্তকে সব সময় মানুষ বাঁচানোর চেষ্টা করলেও আজ দেখি নিয়ম পাল্টে গেছে । অসুস্থকে সুস্থ করার দরকার নেই-তাকে মেরে ফেলাই সভ্যতা ।
যে দেশের সংসদে পতিতালয়কে সমাজের সেফটি বাল্ব বলা হয়, সে দেশে হোটেল থেকে যখন কোন যৌনকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় কী মনে হয় আপনার ? এই কাজ করে পুলিশ খুব ভাল কাজ করেছে ? খোঁজ নিয়ে দেখুন কোন নৈতিকতার কারণে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি, স্রেফ বখরার টাকা কম হয়েছে বলে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
আজ আমরা যারা বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লাফাচ্ছি- তারা কি একবারও ভেবে দেখেছি এই অন্যায়গুলো কেন তৈরী হচ্ছে ? কই আমি তো এমন কিছু করছিনা কিংবা সমাজ তো এমন কিছু করতে বাধ্য করছেনা _ এটা যদি আপনার উত্তর হয় তাহলে শুনুন, প্রতিটি জীবন স্বতন্ত্র । প্রতিটি জীবনের পাওয়া না পাওয়া স্বতন্ত্র । আপনাকে দিয়ে জগৎ মাপলে চলবে ? জগৎ দেখুন অন্যের জায়গায় দাঁড়িয়ে ।
যে লোকটি খুন করল তার যায়গায় দাঁড়িয়ে ভাবতে শিখুন কতটুকু কষ্ট সয়ে একজন লোক খুনী হয়ে উঠে । যে আজ কোন অন্যায় করল তার জায়গায় দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করুন কত বঞ্চনায় একজন মানুষ অমানুষ হয়ে উঠতে পারে ।
আপনি যাকে ভালবাসেন যখন জানবেন তার কোন অনৈতিক কাজের কথা- কী ভাববেন ? সে আসলে আপনাকে ভালবাসতনা ?
বালির বাঁধ টিকবেনা মান্যজন ! একে ধরে রাখার কসরৎ করে বৃথা সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই । হয় গ্রানাইটের বাঁধ দেন না হয় ভেঙ্গে ফেলুন ওই সস্তা বাঁধ । হয় সভ্য সমাজ নয় জংলী আইন । মাঝামাঝি কিছু নেই-সবই ভন্ডামী ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।