আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা.........Pakhi's Notes

মানুষ যা কল্পনা করতে পারে, তা সে অর্জন করেত পারে।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা অবনী বাড়ি আছো দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া ‘অবনী বাড়ি আছো?’ বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস দুয়ার চেপে ধরে– ‘অবনী বাড়ি আছো?’ আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া ‘অবনী বাড়ি আছ যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো? ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো। এতো কালো মেখেছি দু হাতে এতোকাল ধরে! কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি। এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয় এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয় যেতে পারি যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি কিন্তু, কেন যাবো? সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো যাবো কিন্তু, এখনি যাবো না একাকী যাবো না অসময়ে। ।

আমি যাই যেখানেই থাকো এপথে আসতেই হবে ছাড়ান্ নেই সম্বল বলতে সেই দিন কয়েকের গল্প অল্প অল্পই আমি যাই তোমরা পরে এসো ঘড়ি-ঘন্টা মিলিয়ে শাক-সবজি বিলিয়ে তোমরা এসো কিছু মায়া রয়ে গেলো সকল প্রতাপ হল প্রায় অবসিত… জ্বালাহীন হৃদয়ের একান্ত নিভৃতে কিছু মায়া রয়ে গেলো দিনান্তের, শুধু এই – কোনোভাবে বেঁচে থেকে প্রণাম জানানো পৃথিবীকে। মূঢ়তার অপনোদনের শান্তি, শুধু এই – ঘৃনা নেই, নেই তঞ্চকতা, জীবনজাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক, বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু। এক অসুখে দুজন অন্ধ আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ দীর্ঘ দাঁতের করাত ও ঢেউ নীল দিগন্ত সমান করে বালিতে আধ-কোমর বন্ধ এই আনন্দময় কবরে আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ | হাত দুখানি জড়ায় গলা, সাঁড়াশি সেই সোনার অধিক উজ্জ্বলতায় প্রখর কিন্তু উষ্ণ এবং রোমাঞ্চকর আলিঙ্গনের মধেযে আমার হৃদয় কি পায় পুচ্ছে শিকড় আঁকড়ে ধরে মাটির মতন চিবুক থেকে নখ অবধি ? সঙ্গে আছেই রুপোর গুঁড়ো, উড়ন্ত নুন, হল্লা হাওয়ার মধ্যে, কাছে সঙ্গে আছে হয়নি পাগল এই বাতাসে পাল্লা আগল বন্ধ ক’রে সঙ্গে আছে … এক অসুখে দুজন অন্ধ ! আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ । আতাচোরা আতাচোরা পাখিরে কোন তুলিতে আঁকি রে হলুদ ? বাঁশ বাগানে যইনে ফুল তুলিতে পাইনে কলুদ হলুদ বনের কলুদ ফুল বটের শিরা জবার মূল পাইতে দুধের পাহাড় কুলের বন পেরিয়ে গিরি গোবর্ধন নাইতে ঝুমরি তিলাইয়ার কাছে যে নদিটি থমকে আছে তাইতে আতাচোরা পাখিরে কোন তুলিতে আঁকি রে —হলুদ ? একবার তুমি একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা কর – দেখবে, নদির ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছে পাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জল নীল পাথর লাল হচ্ছে, লাল পাথর নীল একবার তুমি ভাল বাসতে চেষ্টা কর | বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল - ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় সমস্ত পায়ে-হাঁটা পথই যখন পিচ্ছিল, তখন ওই পাথরের পাল একের পর এক বিছিয়ে যেন কবিতার নগ্ন ব্যবহার, যেন ঢেউ, যেন কুমোরটুলির সলমা-চুমকি-জরি-মাখা প্রতিমা বহুদূর হেমন্তের পাঁশুটেনক্ষত্রের দরোজা পর্যন্ত দেখে আসতে পারি | বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল চিঠি-পত্রের বাক্স বলতে তো কিছু নেই - পাথরের ফাঁক-ফোকরে রেখে এলেই কাজ হাসিল - অনেক সময় তো ঘর গড়তেও মন চায় | মাছের বুকের পাথর ক্রমেই আমাদের বুকে এসে জায়গা করে নিচ্ছে আমাদের সবই দরকার | আমরা ঘরবাড়ি গড়বো - সভ্যতার একটা স্থায়ী স্তম্ভ তুলে ধরবো | রূপোলি মাছ পাথর ঝরাতে ঝরাতে চলে গেলে একবার তুমি ভালবাসতে চেষ্টা করো | এবার হয়েছে সন্ধ্যা এবার হয়েছে সন্ধ্যা। সারাদিন ভেঙেছো পাথর পাহাড়ের কোলে আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে তোমারও তো শ্রান্ত হলো মুঠি অন্যায় হবে না - নাও ছুটি বিদেশেই চলো যে কথা বলনি আগে, এ-বছর সেই কথা বলো।

শ্রাবনের মেঘ কি মন্থর! তোমার সর্বাঙ্গ জুড়ে জ্বর ছলোছলো যে কথা বলনি আগে, এ-বছর সেই কথা বলো। এবার হয়েছে সন্ধ্যা, দিনের ব্যস্ততা গেছে চুকে নির্বাক মাথাটি পাতি, এলায়ে পড়িব তব বুকে কিশলয়, সবুজ পারুল পৃথিবীতে ঘটনার ভুল চিরদিন হবে এবার সন্ধ্যায় তাকে শুদ্ধ করে নেওয়া কি সম্ভবে? তুমি ভালোবেসেছিলে সব বিরহে বিখ্যাত অনুভব তিলপরিমাণ স্মৃতির গুঞ্জন - নাকি গান আমার সর্বাঙ্গ করে ভর? সারাদিন ভেঙ্গেছো পাথর পাহাড়ের কোলে আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে তবু নও ব্যথায় রাতুল আমার সর্বাংশে হলো ভুল একে একে শ্রান্তিতে পড়েছি নুয়ে। সকলে বিদ্রূপভরে দ্যাখে। চাবি আমার কাছে এখনো পড়ে আছে তোমার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া চাবি কেমন করে তোরংগ আজ খোলো? থুতনিপরে তিল তো তোমার আছে এখন? ও মন নতুন দেশে যাবি? চিঠি তোমায় হঠাত্ লিখতে হলো । চাবি তোমার পরম যত্নে কাছে রেখেছিলাম, আজই সময় হলো - লিখিও, উহা ফিরত্ চাহো কিনা? অবান্তর স্মৃতির ভিতর আছে তোমার মুখ অশ্রু-ঝলোমলো লিখিও, উহা ফিরত্ চাহো কি না? দিন যায় সুখের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে শীতের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে অর্ধেক কপাল জুড়ে রোদ পড়ে আছে শুধু ঝড় থমকে আছে গাছের মাথায় আকাশমনির ।

ঝড় মানে ঝোড়ো হাওয়া, বাদ্ লা হাওয়া নয় ক্রন্দনরঙের মত নয় ফুলগুলি চন্দ্রমল্লিকার । জয়দেবের মেলা থেকে গান ভেসে আসে সঙ্গে ওড়ে ধুলোবালি, পায়ের নূপুর সুখের চট্ কা ভাঙে গৈরিক আবাসে দিন যায় রে বিষাদে, ষাদে, মিছে দিন যায় … পাবো প্রেম কান পেতে রেখে বড় দীর্ঘতম বৃক্ষে ব’সে আছো, দেবতা আমার | শিকড়ে, বিহ্বল প্রান্তে, কান পেতে আছি নিশিদিন সম্ভ্রমের মূল কোথা এ-মাটির নিথর বিস্তারে ; সেইখানে শুয়ে আছি মনে পড়ে, তার মনে পড়ে ? যেখানে শুইয়ে গেলে ধিরে-ধিরে কত দূরে আজ ! স্মারক বাগানখনি গাছ হ’য়ে আমার ভিতরে শুধু স্বপ্ন দীর্ঘকায়, তার ফুল-পাতা-ফল-শাখা তোমাদের খোঁডা-বাসা শূন্য ক’রে পলাতক হলো | আপনারে খুঁজি আর খুঁজি তারে সঞ্চারে আমার পুরানো স্পর্শের মগ্ন কোথা আছো ? বুঝি ভুলে গেলে | নীলিমা ঔদাস্তে মনে পড়ে নাকো গোষ্ঠের সংকেত ; দেবতা সুদূর বৃক্ষে, পাবো প্রেম কান পেতে রেখে | ভিতর-বাইরে বিষম যুদ্ধ ইচ্ছে ছিলো তোমার কাছে ঘুরতে-ঘুরতে যাবোই আমার পুবের হাওয়া। কিন্তু এখন যাবার কথায় কলম খোঁজে অস্ত্র কোথায় এবং এখন তোমার পাশে দাঁড়িয়ে-থাকা কুঞ্জলতায় রক্তমাখা চাঁদ ঢেকেছে আকুল চোখ ও মুখের মলিন আজকে তোমার ভিতর-বাইরে বিষম যুদ্ধ পুবের হাওয়া। । মনে মনে বহুদূর চলে গেছি মনে মনে বহুদূর চলে গেছি - যেখান থেকে ফিরতে হলে আরো একবার জন্মাতে হয় জন্মেই হাঁটতে হয় হাঁটতে-হাঁটতে হাঁটতে-হাঁটতে একসময় যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে পৌঁছুতে পারি পথ তো একটা নয় – তবু, সবগুলোই ঘুরে ফিরে ঘুরে ফিরে শুরু আর শেষের কাছে বাঁধা নদীর দু - প্রান্তের মূল একপ্রান্তে জনপদ অন্যপ্রান্ত জনশূণ্য দুদিকেই কূল, দুদিকেই এপার-ওপার, আসা-যাওয়া, টানাপোরেন – দুটো জন্মই লাগে মনে মনে দুটো জন্মই লাগে (কবির ৩২ তম জন্ম দিনে (২৬/১১/১৯৬৫) লেখা এই কবিতাটি কবিপত্নি শ্রীমতী মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়ের সৌজন্যে প্রাপ্ত।

)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.