গুনাহগার, অযোগ্য, অধম... আমাদের পুরো বাসায় পিচ্চি ৪ টা।
আমার আপুর দুইটা আর সেজ ভাইয়ার দুইটা।
এর মধ্যে আপুর মেয়ে সুবাহ পড়ে ক্লাশ ওয়ানে
আর ভাইয়ার বড় ছেলে রাইয়ান পড়ে ক্লাশ টুতে।
প্রতিদিন সকালে সেকেন্ড ইনিংসের ঘুম ভাংগে
সুবাহ আর রাইয়ান এর স্কুলে যাওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতিতে।
আপু আর ভাবি পিচ্চি দুইটার নাশতা, ব্যাগ গুছিয়ে দ্যায়া নিয়ে
রিতিমত একটা ছোট খাট যুদ্ধ পর্ব শেষ করেন।
স্কুল শেষ করে আসার পর কড়া রুটিন,
নাশতা কর, CW, HW খাতা কমপ্লিট কর,
তারপর দুষ্টুমি, বান্দরামি, গোসল, ঘুম।
বিকেলে নাশতা কর, কিচুক্ষন কার্টুন দ্যাখ,
তারপর আরবী টিচার।
রাতে পড়ালেখা শেষ করে খেতে খেতে কার্টুন, এরপর ঘুম।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় পিচ্চি দুইটার পড়ালেখা ই আপু আর ভাবির
ধ্যান গ্যান স্বপ্ন সবকিছু।
এর মাঝে অবশ্য আপু চাকরি ও করে,
আর ভাবি সারাদিন ঘরের ইন্টেরিয়র নিয়ে ব্যাস্ত।
তো উনাদের সিরিয়াসনেস নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।
এটাইতো মায়ের দায়িত্ব।
আপুকে বলি তোরা দুইজন যে সিরিয়াস, সুবাহ আর রাইয়ান তো
এবার ক্লাশে ফার্স্ট হবে, ড্যাম সিওর।
আপু তো সাথে সাথেই রিঅ্যাকশান, "কি বলিস, অন্য বাচ্চাদের
মায়েরা যে সিরিয়াস, ৩/৪ টা ম্যম এর কাছে পড়ে, কোচিং করে,
বাসায় টিচার আসে। আমরা তো নিজেরাই পড়াই, আজকাল ফার্স্ট
হতে বাবা মায়ের টাকা লাগে বুঝলি?"
এর মাঝে একদিন দেখলাম, বাসায় নতুন বুয়া।
আমি কয়েকমাস হলে ছিলাম বলে আগে দেখিনি বুয়াকে,
শুনলাম উনি অনেকদিন ধরে বাসায় দিনে ১ ঘন্টা করে কাজ করছে।
বুয়াকে দেখলাম কাজ শেষ করে হুলুস্থুল করে বের হচ্ছে।
আম্মুকে জিগেস করলাম বুয়া কই যায়।
আম্মু বলল বুয়ার ছোট মেয়েটা ক্লাশ থ্রিতে পড়ে।
সুবাহ আর রাইয়ানের স্কুলেই, ওকে আনতে যাবে।
ব্যাপারটা ভালই লাগল, বুয়া নাকি কয়েকটা বাসায় কাজ করে,
কাজের ফাকে ফাকে মেয়েকে স্কুলে পাঠায়, নিয়ে আসে,
আর একটা ম্যাডাম এর কাছে পড়ায়।
আম্মুকে বললাম বুয়ার মেয়ের জন্যে কাগজ কলম লাগলে মাঝে মাঝে
দিয়ে দিও, আর পড়ালেখাটা যাতে কন্টিনিউ করে খোক রেখো।
তো, কয়েকদিন আগে বার্ষিক পরীক্ষার রেসাল্ট দিল।
ভাবি আর আপু দুইজনেরই মন খারাপ,
সুবাহ রাইয়ান দুইজনই খুব ভাল নাম্বার পেয়েছে,
কিন্তু সব পরীক্ষা মিলে ওদের রোল নাম্বার ১০ এর পরে।
একটু পর বুয়া এসে বলল, উনি আজ কাজ করতে পারবেন না,
আজকে বাসায় থাকবেন।
এই বলে চলে যাওয়ার সময় আম্মু বুয়াকে ডেকে জিগেস করলেন
"বুয়া, তোমার মেয়ের পরীক্ষার রেসাল্ট কি? পাশ করসে?"
বুয়া বলল, "জী খালম্মা, আমর মেয়ে তো ক্লাশে ফার্স্ট হইসে"
আম্মু বলল "মাশাল্লাহ, তোমার মেয়েকে নিয়ে এসে আমার বাসায়
খেয়ে যেও"
আপু আর ভাবির চেহারায় তেমন পরিবর্তন দেখিনাই,
এজ ইউজুয়াল মায়ের মন, নিজের সন্তান ভাল না করলে কিসুই ভাল পায়না।
কিন্তু আমি আর আম্মু খুবই খুশি হয়েছি।
আমার কাছে মনে হয়েছে সুবাহ রাইয়ান ভাল করলেও বোধয় এতটা খুশি হতাম না।
আপুকে বললাম, সুবাহ কে ৩/৪ টা টিচারের কাছে পড়তে দে, ফার্স্ট হয়ে যাবে ক্লাশে"
আপু মুখটা ভেংচি কেটে বলল "যা, ভাগ্"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।