তেমন কিছু কওনের নাই!
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলেও 'বিসমিল্লাহ' বাদ যাবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ শব্দটি বাদ যাবে না। শব্দটি যেখানে ছিল সেখানেই থাকবে। এ শব্দটি কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। "
সংবিধানের এ সংশোধনী সম্পর্কে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিষয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপি ও জামায়াত জাতিকে বিভ্রান্ত করছে ও অসত্য বক্তব্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংবিধানের এ সংশোধনী বাতিল হলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে বলে বিএনপি নেতা সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে শফিক আহমেদ বলেন, "আজ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এবং '৭২ এর সংবিধান বিরোধীরাই দেশে অরাজকতা হবে বলে প্রশ্ন তুলছে। "
সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকলে কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এতে মুক্তিযুদ্ধের মূল চার নীতি যা সংবিধানের মূল চার নীতি হিসেবে পরিচিত তা ফিরে আসবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা বাস্তবায়িত হবে। "
'আদালতকে ব্যবহার করে এই রায় নেওয়া হচ্ছে' বিএনপির এ অভিযোগ অস্বীকার করেন আইনমন্ত্রী। অভিযোগ খণ্ডন করে তিনি বলেন, "এটা ঠিক নয়। কেননা রায়টি হয়েছিল তাদেরই সরকারের আমলে।
২০০৫ সালে। ওই রায় সম্পর্কে এমন অভিযোগ আদালত অবমাননার শামিল। তারা এ রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। "
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, "একজন ব্যক্তি বা একজন বিচারপতি সামরিক শাসন জারি করতে পারে কি না? তারা সংবিধানকে রক্ষা করবেন এমন শপথ নিয়েও তা ভঙ্গ করেছেন। এসব সাংবিধানিক প্রশ্নের ভিত্তিই আদালত রায়টা দিয়েছে।
"
শফিক আহমেদ আরও বলেন, "দুঃখজনক হলেও সত্য এদেশে অন্যায়, অযৌক্তিক, বেআইনী ও অসাংবিধানিকভাবে একজন সিভিলিয়ান হয়েও খন্দকার মুশতাক সামরিক শাসন ও ফরমান জারি করেছিল। "
এ ধরনের ঘটনায় পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের এবং ১৯৭৩ সালে ইয়াহিয়া খানের জারি করা সামরিক শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। "
দেশে '৭২-এর সংবিধান (যা দেশের মূল সংবিধান) প্রবর্তিত হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, "একটি গণতান্ত্রিক দেশের মূল ভিত্তিই হচ্ছে ধর্ম নিরপেক্ষতা। এর অর্থ হলো ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ইসলাম ধর্মেও সেটাই বলা আছে।
মুক্তিযুদ্ধের যে অঙ্গীকার ছিল, ৩০ লাখ জনগণ যে উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গ করেছিল তার ভিত্তিতেই '৭২-এর সংবিধান রচিত হয়েছিল। আমার বিশ্বাস সেই সংবিধানই জনগণ গ্রহণ করবে। "
২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। ওইদিনই রায় স্থগিতের আবেদন জানায় তৎকালীন বিএনপি সরকার। তারপর থেকে এ রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে আছে।
১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী গ্রহণের সময় দেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্টের রক্তাক্ত পটপরিবর্তন ও তারপরের নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ক্রমশ বাংলাদেশের রাজনীতির ভাগ্যনিয়ন্তা হয়ে ওঠেন তিনি।
গত ৩ মে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত সরকারের করা আপিল প্রত্যাহারের আবেদন জানায় সরকার।
পরের দিন এ রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এবং সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবীকে চার সপ্তাহের মধ্যে 'লিভ টু আপিল' দায়েরের অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
হাইকোর্ট রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খন্দকার মুশতাক আহমেদ, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এবং জিয়াউর রহমানের শাসনকে বেআইনী ঘোষণা করেন।
তবে ওই সময়ে করা সরকারের 'জনস্বার্থে করা' বেশকিছু 'বেআইনি' কাজকে মওকুফ করে দিয়েছিল।
হাইকোর্ট রায়ে বলেছিল, সামরিক আইন সামগ্রিকভাবে অবৈধ ও অসাংবিধানিক এবং সামরিক আইনের অধীনে করা সকল কার্যক্রম, আইন ও বিধিও অবৈধ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত সরকার পরিবর্তন সংবিধানসম্মতভাবে হয়নি বলে হাইকোর্ট ওই ঐতিহাসিক রায়ের অভিমতে উল্লেখ করে।
সামরিক সরকারের বৈধতা নিয়ে করা ১৯৭৭ সালের ৭ নম্বর মার্শাল ল' রেগুলেশন (এমএলআর) চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট ওই রায় দিয়েছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।