এবার বিদায়ের পালা ...
না না পাঠক,মোটেই ভয় খাবেননা। সেই শৈশবের দস্যিতার রোমহর্ষক বিবরণ দিয়ে সাহোতে নিজের ইমেজে কালিমা লেপনের বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। সবচেয়ে বড় কথা হল সেই মাসুম বয়সে কি না করেছিলাম,সেইসব পুরনো কাসুন্দি ঘেটে আর লাভ কি। একবার নাহয় তাবত শিশুদের পরম আরাধ্য লজেন্স দৌড়ে পাশের জনকে ফেলেই দিয়েছিলাম,আর আরেকবার না হয় আমার কল্যাণে আমারই এক সহপাঠি ফোকলা দেঁতো হয়েছিল,এ তো পিচ্চিকালেই অনেকেই হরহামেশাই করে। এসবের চেয়ে মোদ্দা কথাটি হল সেই বইয়সেই আমার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিভা(বুদ্ধিবৃত্তিক না বলে আধ্যাত্মিক বলাটাই বোধহয় যুক্তিসংগত হবে) কিভাবে বিকশিত হয়েছিল, তা নিয়েই আজ কিঞ্চিত বাতচিত করব।
পৃথিবীর সব শিশুর যেখানে মা,বাবা ইত্যাকার মধুরশব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে মুখের বোল ফোটে ,সেখানে আমি কি,কেন শব্দ দিয়ে আমার ভোকাবুলারির খাতা খুলেছিলাম। প্রশ্নের পর প্রশ্নে আমি সবাইকে একেবারে জেরবার করে ফেলতাম। কোথায়,কবে ,কেন কি হয়েছিল ইত্যাদি বিচিত্র সব প্রশ্নবানে আমার মামা খালাদের সবসময় জর্জরিত করাই আমার কাজ ছিল। আর আমার কি পরম সৌভাগ্য,নেহাত পিচ্চি ছিলাম বলে আমার এসব জ্যাঠামিকে তারা হাসিমুখে প্রশ্রয় দিয়ে সাধ্যমত জবাব ্দেওয়ার চেষ্টা করতেন। মোটকথা আত্মীয় অনাত্মীয় কেউই আমার হাত থেকে রেহাই পেতনা।
এক্ষেত্রে একটা কথা বলে রাখা ভাল,অন্যান্য শিশুদের মত আবদার পূরণ না হলেই আমি ট্যাঁ ট্যাঁ করে কেঁদে সবাইকে জ্বালিয়ে মারতামনা। বরং নিত্যনতুন প্রশ্নে সবাইকে ব্যতিব্যস্ত রাখতেই আমার সব মনোযোগ নিবন্ধ ছিল। তবে আমার এহেন জ্ঞানলিপ্সার কারণে প্রায়ই বিভিন্ন ঝক্কির সৃষ্টি হত। বিশেষ করে রূপকথার গল্পের সময় তো কথাই নেই। "এক দেশে ছিল এক রাজা"বলে যেইনা গল্প শুরু হত,অমনি আমার
জিজ্ঞাসা,রাজা কে ,রাজা কোথায় থাকে,রাজা কি করে ইত্যাদি ইত্যাদি ।
আর আমার পিঠেপিঠি ছোটবোনেরও গল্প শোনার খায়েশ ওখানেই মাঠে মারা যেত। ফলে অচিরেই উচ্চগ্রামে কান্না করে সে পুরো বাড়ি মাথায় তুলত । আর এরপর আমার কি হত ,সে কথা আর নাই বা বললাম। বিপত্তির শেষ কিন্তু এখানেই নয়। জগত সংসারের রহস্য উদ্ঘাটনে এতটাই নিমগ্ন ছিলাম যে ,মাঝে মাঝেই ঘুমের ঘোরে বিছানা থেকে একেবারে পপাত ধরণীতল।
ভাগ্যিস,মেঝেতে পুরু কার্পেট ছিল, তাই বড় কোন অঘটন ঘটেনি।
আর একবারের ঘটনা। এটি আমার মায়ের মুখে শোনা। তখন আমি আমার আমার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিভার বলে আত্মীয় মহলে পরিচিত নাম। সে সময় আমার বয়স তিন কি চার বছর।
ঈদ পরবর্তী পুনর্মিলনে তখন আমরা সপরিবারে নানার বাড়ি। আমি আবার পরিবারের বড় নাতি ছিলাম, তাই আমার ছিল ভিআইপি খাতির। তো নানাবাড়িতে পৌছোনোর পর মা বাবার কথামত নানাভাই আর নানুমনিকে সালাম করলাম। এরপর একে কে বড় মামা,মেঝ মামা, বড় খালামনিএবং ছোট খালামনিকে সালাম করলাম। তার পর পরই আমার সেই ঐতিহাসিক মন্তব্য,"এবার তোমরা সবাই আমাকে সালাম কর"।
আমার শৈশবের ইঁচড়ে পাকামি এখানেই শেষ নয়। তবে সে গল্প আরেকদিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।