...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা,
যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
১. একা
ঘুম থেকে উঠেই ত্রীনার সাথে কিছুক্ষন কথা না বললে নিহনের দিনটা শুরুই হয় না। অবশ্য মহাকাশের এই চির অন্ধকার জীবনে দিন রাত বলে কিছু নেই। তারপরও ঘুমের সময়টাকে রাত ধরে নিহন একটা দিন রাতের নিয়ম দাঁড় করিয়ে নিয়েছে। হলোগ্রাফিক মডিউলটা অন করে ত্রীনার সিকিউরিটি কোডটা ঢুকালো। রুমের মাঝে এসে হাজির হলো ত্রিনা।
ঠিক রক্তমাংসের ত্রিনা নয়। তবুও তো ত্রিনা। পৃথিবী থেকে সাড়ে সাত লক্ষ আলোবর্ষ দূরে থেকেও তো সে তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে দেখতে পারছে, কথা বলতে পারছে।
-আজ পৃথিবীতে কি বার ত্রীনা?
প্রতিদিনের মতো হলোগ্রফিক আবয়বের ত্রিনাকে জিজ্ঞেস করে নিহন। সে জানে আজ কি বার তবুও এই ছেলে মানুষী প্রশ্নটা সে প্রতিদিনই করে।
যদিও বার, দিন,সন বলে তার কাছে কোন কিছুর কোন অস্তিত্ব নেই। এখানে সূর্য নেই, দিন নেই রাত নেই। মহাকাশ যানের গোলাকার জানালাটি তাকালে দূরে সমান্তরাল টিরি গ্যালাক্সি দেখা যায়। আজ থেকে তিন মাস আগেও সেটাকে যেমন দেখেছে, আজও তেমনই দেখছে নিহন। অথচ এই মহাকাশযানটা আলোর চেয়ে কয়েকশোগুন বেশী বেগে ছুটে চলেছে।
-আজ সোমবার নিহন।
সেই চির পরিচিত হাসি দিয়ে উত্তর দেয় ত্রিনার হলোগ্রাফিক ছবিটি।
-আজও কি বৃষ্টি হয়েছে? আজও কি শহরের পথঘটা ভেসে গেছে বৃষ্টির জলে?
নিহন পাগলের মতো জানতে চায়। তার খুব ইচ্ছে হয়ে পৃথিবীতে সত্যিকারের বৃষ্টি দেখতে। রিমঝিম শব্দ শুনতে।
ত্রীনাকে পাশে নিয়ে সে আবার কবে সত্যিকারের বৃষ্টি দেখতে পারবে কে জানে। নিহন ত্রিনার চোখের দিকে তাকায়। সেই মায়া, সেই ভালোবাসা যা সে ছয় বছর আগে দেখেছে এই মহাকাশ যানটিতে করে আট লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের টিরি গ্যালাক্সির উদ্দেশ্যে একা যাত্রা করার আগে।
এখনও নিহনের সেই দিনটির কথা মনে আছে যেদিন সে মহাকাশযানটি তে করে যাত্রা শুরু করে। নিরাপত্তার কারনে কেবল দূর থেকে একবার দেখার করতে পেরেছে ত্রীনা।
ওর চোখদু'টো যেন বার বার বলছিলো, 'নিহন তুমি যেওনা। '। কিন্তু নিহনের কিইবা করার আছে। এয়ার ডিফেন্সের মেধাবী পাইলট নিহনকে একটি স্পেসাল মিশনে পাঠানো হচ্ছে আট লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের টিরি গ্যালাক্সিতে। আসার সময় সে কেবল সাথে আনতে পেরেছে ত্রীনার মস্তিষ্ক ম্যাপিং করা একটি হলোগ্রাফিক মডিউল।
যেখানে হুবহু ত্রীনার মতো চিন্তা করতে পারে, ত্রীনার সব স্মৃতি বহন করে এমন এক ভার্চুয়াল ত্রীনা আছে। হয়তো আসল ত্রীনা নয়, কিন্তু নিহনের সেটা একবারও মনে হয় নি। হলোগ্রাফিক ত্রীনা পৃথিবীর আসল ত্রীনার মতোই। একটুতেই অভিমান করে, নিহন ঠিক মতো না ঘুমালে রাগ করে ঠিক যেমনটা আসল ত্রীনা করে। নিহন জানে পৃথিবীতে তার অপেক্ষায় প্রতি রাতে ত্রীনা আকাশের অনন্ত নক্ষত্র রাজির দিকে তাকিয়ে থাকে।
এটা ভাবতেই খুব ভালো লাগে তার।
মহাকাশ যানের ছোট্ট গোল জানালা দিয়ে দূরে টিরি গ্যালাক্সির দিকে তাকিয়ে থাকে নিহন। কবে পৌছাবে ওখানে। ঠিক ঠাক মতো মিশন শেষ করে আবার ফিরে যাবে পৃথিবীতে। ত্রীনার হাতে হাত রেখে বৃষ্টি দেখবে আবার।
২. ফেরা
মনিটরটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিহন। পৃথিবী। ধীরে ধীরে কাছে আসছে। স্পষ্ট হচ্ছে সাগর ,মহাসাগর, দ্বীপ, মহাদেশ। আর অল্প কিছুক্ষন পরই সে নামবে পৃথিবীতে।
টিরি গ্যালাক্সির মিশন শেষে আজ সে ফিরছে। নেমেই প্রথমে সে চলে যাবে ত্রীনার কাছে। সে শেষবারের মতো হলোগ্রাফিক মডিউলটা অন করে। এর পর আর এই ভার্চুয়াল ত্রীনার দরকার হবে না। সে ফিরে যাচ্ছে আসল ত্রীনার কাছে।
-ত্রীনা তুমি জানো, আর কিছুক্ষন পরই আমি পৃথিবীতে নামবো। তোমার কাছে যাবো। আসল তুমি।
-জানি নিহন। নিশ্চয়ই তুমি খুব খুশি আজ।
-অবশ্যই খুশি। আজ আমি কতদিন পর আমার ত্রীনাকে দেখবো তুমি কল্পনা করতে পারো। কতদিন বলো তো।
-এই মহাকাশযানের হিসেবে মাত্র তিন বছর। কিন্তু পৃথিবীর হিসেবে সেটা সাড়ে আটশো বছর।
-সাড়ে আটশো বছর।
প্রচন্ড ধাক্কা খায় নিহন। সাড়ে আটশো বছর পার হয়ে গেছে পৃথিবীতে। কিন্তু তাকে তো বলা হয়েছে মাত্র তিন বছর পর সে ফিরে আসবে। সে ফিরে যেতে পারবে তার ত্রীনার কাছে।
-হ্যা নিহন। আলোর চেয়ে বেশী বেগে চলার কারনে তুমি এর মাঝে পৃথিবীর হিসেবে সাড়ে আটশো বছর পর করে ফেলেছো।
-তাহলে ত্রীনা। ত্রীনা কি আর বেঁচে নেই?
- আমি দুঃখিত নিহন। আসল ত্রীনা বেঁচে নেই।
কিন্তু আমিতো আছি। আমি থাকবো সবসময়। আমি কখনো মরে যাবো না। সবসময় তোমার কাছে থাকবো।
প্রচন্ড আক্রোশে হলোগ্রফিক মডিউলটা ছুড়ে ফেলে নিহন।
মনিটরের বাইরের অতি প্রিয় পৃথিবীটাকে তার অচেনা মনে হয়। সেখানে ফিরে যাবার কোন জায়গা নেই তার। সে ফিরতে চায় না এই পৃথিবীতে।
৩.পরিশেষ
সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারনে টিরি গ্যালাক্সি থেকে সফলভাবে অভিযান শেষ করে আসা মহাকাশযানটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয় যদিও মহাকাশযানটিতে কোন প্রকার যান্ত্রিক ত্রুটি চিন্হিত করা যায় নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।