আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ও সার্টিফিকেটধারী জ্ঞানহীন সমাজ

জানতে ও জানাতে ভাল লাগে

প্রত্যাশা করা হয় সমাজের সবচেয়ে জ্ঞানবান ও বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ হবেন বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষকগণ। তারা শুধু পাঠ কক্ষে নয় গোটা সমাজে জ্ঞানের দীপ্তি ছড়াবেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এমন কারো কথা শুনলেই একসময় পুলকিত হয়ে উঠতাম। মনে হতো জগতে এমন কোন বিষয় নেই যা সে জানে না। তিনি যে বিষয়ে পড়ান সে বিষয়ে তার গভীর ধারণা আছে।

মৌলিক গবেষণাও হয়ত আছে। জ্ঞানের ভারে ন্যুজ বলে মনে হতো। ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করত তাঁকে। মজার বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালেয়ে ভর্তি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই ভূল ধারণা মনের মধ্যে বাসা বেধেছিল। এখন সেই কথা মনে পড়লে খুব আফসোস লাগে।

নিজেকে খুব বোকা মনে হয়। ভুল ভাঙ্গতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর। হোচট খেতে শুরু করি। মনের মধ্যে তৈরি হয়ে থাকা বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ভক্তি বালির বাধের মতো একে একে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। নিজের বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান তো দূরে থাক কাজ চালানোর মতো জ্ঞান নেই অধিকাংশ শিক্ষকের।

বেশিরভাগ জনই ক্লাস নেন ছাত্র জীবনে করা নোট দেখে দেখে। প্রতিদিনের বিরক্তিকর, একঘেয়ে ক্লাস। বৈচিত্র নেই, আনন্দ নেই। উপস্থাপনার ভঙ্গি । ভুলে ভরা উচ্চারণ।

পাঠ্য বইয়ের বাইরে জ্ঞানের পরিধি খুবই সীমিত। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। দু'একজন শিক্ষক আছেন যারা অনেক পড়াশোনা জানেন। দিনরাত বইয়ে ডুবে থাকেন। এঁরা ডিপার্টমেন্টে আসার সাথে সাথে চারপাশ আলোকিত হয়ে ওঠে।

ক্লাসে ঢোকার সাথে সাথে জ্ঞানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়ায়। কিন্তু সংখ্যায় এঁরা খুবই কম। কালে ভদ্রে দেখা যায়। একটা কথা খুব জোর দিয়ে বলতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যতনা জ্ঞান অর্জনের যায়গা তার চেয়ে অনেক বেশি সার্টিফিকেট অর্জনের।

অনেক বিষয়ই এর জন্য দায়ী। কিন্তু আমার বিবেচনায় জ্ঞান ও মেধাহীন শিক্ষক সমাজের দায় সবচেয়ে বেশি। আগে এই অবস্থা ছিল না। একসময় সবচেয়ে জ্ঞানবান ও উজ্জ্বল মানুষেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। এখন এই অবস্থা কেন? একটা প্রধান কারণ নিয়োগ প্রক্রিয়া।

সাধারণত ভাল রেজাল্টধারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়ার বিধান চালু আছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দেখেছি যেসব ছাত্র ছাত্রীরা দুই তিনটা বই দেখে নোট করে উত্তর মুখস্থ করত, ভাল লাগুক না লাগুক ক্লাসের সামনের বেঞ্চে নিয়মিত হাজির থাকতো এবং শিক্ষকদের তৈল মর্দনে পারঙ্গম ছিল অধিকাংশ সময়ই ভাল রেজাল্ট জুটতো তাদের কপালে। প্রচলিত নিয়মের বাইয়ে যেয়ে যারা একাডেমিক বিষয়ের বাইরেও অনেক বই পড়ত, ডিবেট, মিউজিক, মুভিসহ এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিসের সাথে জড়িত থাকত একাডেমিক রেজাল্টে তাদের নাম থাকত নিচের দিকে। তারা সারা দুনিয়াকে নিজের মধ্যে ধারন করার চেষ্টা করত। জ্ঞান অর্জন ও বিতরণকে উপভোগ করত।

শিক্ষক হিসাবে তাদের অনেকেরই আউট স্ট্যান্ডিং পারফরমেন্সের ক্ষমতা ছিল। কিন্তু তাদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হতো না কখনই। এভাবেই মেধাহীন শিক্ষক দিয়ে ভরে গেছে প্রতিটি ইউনিভার্সিটি। মেধাবীরা ঘুরছে রাস্তায়, একটা সন্মানজক সরকারী চাকরীর আশায়। মেধাহীন শিক্ষক দিয়ে ইউনিভার্সিটি গুলো ভরে যাওয়ার আরেকটি কারন রাজনৈতিক নিয়োগ।

এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে হয়ত কারি কারি অনার্স মাস্টার্সে দেশ ভরে যাবে। কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত লোকের সাক্ষাত পাওয়া যাবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.