সাবধান!! এখানে সিআইএ-র গোপন ক্যামেরা আছে
আজকাল সিনেমা দেখে এবং নিম্নস্তরের উপন্যাস পড়ে আমরা প্রেম বা ভালোবাসার নামে কেমন জানি পাগল হয়ে পড়েছি। প্রেম-ভালোবাসার উচ্চস্তরের বিষয়ে। এটা মানুষের জীবনের কাম্য হওয়া উচিত, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রেম-ভালোবাসার নামে বিশেষ করে আধুনিক সমাজের যে অভিশাপ আমাদের জীবনে নেমে এসেছে তা সত্যিই ভয়াবহ। আমাদের বর্তমান সমাজ অত্যন্ত অবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত।
এর ফলে নারীরাই বেশী কষ্ট ভোগ করতে বাধ্য হয়; বিশেষ করে প্রেমের ব্যাপারে।
নারী-পুরুষের আকর্ষণ স্বাভাবিক। বিয়ের আগে কৈশোরে ও যৌবনের প্রথম অবস্থায় মন থাকে অত্যন্ত রোমান্টিক ও আকর্ষণশীল। ফলে যে কোনো পুরুষের প্রতি এই সময়ে আকর্ষণ বোধ করা অস্বাভাবিক নয়। সিনেমা, পত্রিকা, উপন্যাস ও অন্যান্য মাধ্যম এই আকর্ষণকে অন্ধ করে তোলে।
ফলে বিচার করে হৃদয় দান করবার মতো শক্তি ও অবস্থা তার থাকে না। সমাজে সৎ লোকের সংখ্যা খুব বেশী নয়। ফলে শতকরা বহু ক্ষেত্রে অসৎচরিত্র ও অবিবেচক পুরুষের প্রলোভনে সরলমতি মেয়েরা তাদের হৃদয় দান করে সর্বনাশ ডেকে আনে।
এই হৃদয়দানের ফলে পবিত্র ও অপবিত্র যাই হোক না কেন, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় এটা অসাফল্যে পর্যবসিত হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে পুরুষরাই এই হৃদয়দানকে তুচ্ছ করে অন্য নারীর দিকে আকৃষ্ট হয়।
বহু ক্ষেত্রে পুরুষরাই একে সামাজিক খেলা মনে করে একের পর এক বহু মেয়ের সর্বনাশ করে। আবার বহু মেয়েই বুঝতে পারে, অল্প বয়সের প্রেম মোহ ছাড়া আর কিছুই নয়। স্বভাব, চরিত্র, আদর্শ, অবস্থা, শিক্ষা ইত্যাদি বহু বিষয়ে মিল না থাকলে প্রেম হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিশাপ। ফলে পুরুষের নিষ্ঠা সত্ত্বেও অনেক নারী মন উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়। আবার বহু ক্ষেত্রে বিজ্ঞ অভিভাবকগণ তাদের মিলনের অযৌক্তিকতা বুঝতে পেরে বাধা হয়ে দাঁড়ান।
কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকগণও অবিবেচনা ও হৃদয়হীনতার পরিচয় দেন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপাত্রে প্রেমদান বা নিবেদন করার জন্যে নারী যে প্রথম বয়স থেকেই অভিশপ্ত হয়, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এরূপ প্রেমগ্রস্ত ছাত্র-ছাত্রীর লেখা-পড়ার-যে সর্বনাশ ঘটে তাও সর্বজনবিদিত। এই প্রেমযজ্ঞে পুরুষের চাইতে নারীর ক্ষতি বেশী হয়।
পুরুষ দুশ্চরিত্র হলেও সমাজে অপাংক্তেয় নয়। তার বিবাহ বা পুনঃপ্রেম ঠেকে না। কিন্তু নারীর বেলায় এটা মারাত্মক। একবার যদি সে হৃদয় দান করে, পবিত্র হোক কিংবা অপবিত্র হোক, তার আর কোনো উপায় থাকে না। বাইরে তার অফুরন্ত বদনাম হয়।
অন্য কোনো পুরুষ তাকে বিয়ে করতে এগিয়ে আসে না। শতকরা ৯৫ টি ক্ষেত্রে বাল্য বা কিশোর কালের প্রেম অসফল হয় বলে শতকরা ৯৫ টি প্রেমেপড়া নারীরই জীবন হয় অভিশপ্ত ও অপমানকর।
হৃদয়ে একবার দাগ কাটলে সে দাগও সহজে মোছে না। বিশেষ করে সারল্য যার আছে। অসফল প্রেমের পর তেমন কোনো মেয়ের বাইরে বিয়ে হলে সেই বিয়েও জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করে।
পূর্বে অন্যদিকে আকৃষ্ট মন নতুন স্বামীকে আপন করে নিতে অনেক ক্ষেত্রেই অপারগ হয়। পুরুষ হয় সন্দেহশীল। অমিল ও তাচ্ছিল্যে ঘর হয় বিষময়। এর মারাত্মক ফল সন্তান সন্ততি পর্যন্ত গড়ায়। অসন্তুষ্ট স্বামী হয়ত চরিত্রহীন হয়ে বাইরে ঘোরে, নয়তো অন্য বিয়ের জন্য পাগল হয়ে ওঠে।
নারীরও শেষ পর্যন্ত নিজের সত্তা পংকিল আবর্তে বিলীন করে দিতে বাধ্য হয়। নিজের জীবনের উপরও সে শ্রদ্ধা ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে তিলে তিলে মরণের দিকে এগিয়ে যায়।
নারী-পুরুষের সম্পর্ক যেমন স্বাভাবিক, তেমনি জটিল। মানুষের শান্তির প্রায় ৮০ ভাগই নির্ভর করে এই সম্পর্কের উপর। এজন্য বিভিন্ন বয়সে এবং বিভিন্ন পরিবেশে পরষ্পর সম্পর্কের রূপ কি হবে তা নির্ধারণ ও অনুশীলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্যকরণীয়।
অথছ এমন একটি বিষয়ে আমাদের স্কুল-কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা দেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে অনকেটা আনাড়ীর মতোই হাতড়াতে হাতড়াতে আমাদের তরুণ-তরুণীরা ঘর সংসার পাততে অগ্রসর হয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয়ে অশিক্ষিত থাকার দরুন পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে তারা ভুল করে বসে। ভুল না করলেও বিবাহিত জীবনে পরস্পর সমঝোতার অভাবে স্বামী-স্ত্রী এবং গোটা পরিবারের পরিবেশ দারুণ তিক্ততায় ভরে ওঠে। ফলে, যে কারণে পরিবার শান্তির নিকেতন রুপে বিরাজ করতে পারত, তাই হয়ে ওঠে অশান্তি ও তিক্ততার কেন্দ্র।
এই তিক্ততা যে শুধু নিজ পরিবার বা পার্শ্ববর্তী পরিবারেও প্রভাব বিস্তার করে তা নয়- ছেলে-পিলের মারফত ভবিষ্যত বংশধরদের মধ্যেও একটা খারাপ উদাহরণ রূপে এটা কাজ করে থাকে। আর এজন্যেই তো প্রায় পরিবারে অনেক নারী-পুরুষকে বলতে শোনো যায়: বিয়ে না হলেই ভালো হত; আগে যদি বিয়েকে এত ঝামেলা ও অশান্তি বলে বুঝতে পারতাম, তাহলে বিয়েই করতাম না। জীবনের সর্ববিষয়ে মানুষকে শিক্ষিত ও উপযুক্ত করে তোলাই তো শিক্ষার উদ্দেশ্য। কিন্তু জীবনের শান্তি-অশান্তি, উন্নতি-অবনতি, এমন কি চরিত্র পর্যন্ত যে বিয়ে ও পারিবারিক জীবনের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে সে বিষয়ে আমরা কোনো শিক্ষাই দেই না। শিক্ষাজীবনে এর চাইতে লজ্জাকর প্রহসন আর কি হতে পারে।
আমাদের সমাজে প্রেমের পাত্র নির্বাচন অত্যন্ত দুরূহ বিষয়। বিশেষ করে নারীর পক্ষে। আগুনের দিকে পতঙ্গের আকর্ষণের মতো এটা অধিকাংশ মেয়েকে পুড়িয়ে মারে। রূপ দেখে বা দেহ-ভঙ্গি দেখে হৃদয় ও গুণগত বিষয়ের দিকে লক্ষ্য না করে তথাকথিত অন্ধ প্রেম করার ফল যে সমাজে কত মারাত্মক হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত প্রায় প্রতিটি পরিবারের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই বুঝতে কষ্ট হবে না।
অনেকে প্রেমের ব্যাপারে হয়তো পাশ্চাত্যের নজির আনবেন।
প্রেমে পড়ে বিয়ে হওয়া ভালো। কিন্তু পাশ্চাত্যে শতকরা ৭০ ভাগ প্রেমে পড়া বিয়ে যে কার্যত অসফল হয়, তা কারো অজানা নয়। তথাকথিত প্রেমে গুণের বাছ-বিচার নেই বলে দেহের চাইতে গুণের প্রতি আকর্ষণ কম বলে আমাদের দেশে সামন্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রেমের বিয়ে সাধারণত ঘৃণায় ও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
তবে একথা ঠিক যে, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু নারী আছেন, যাদের জীবন আদর্শস্থানীয়। যারা অন্য নারী ও পুরুষদের সম্মান ও মর্যাদা দেন, যারা পরানুকরণ ও প্রদর্শনীবাতিকগ্রস্থ নন।
সমাজে নারী শিক্ষিত হবে, পর্যাপ্ত স্বাধীনতা ভোগ করবে, দেশের ও সমাজের কাজে নিজেকে বিলিয়ে দেবে। অবশ্যই তার মনের শান্তি ও মর্যাদা রক্ষা করে । এটাই সকলের মনের কাম্য হওয়া উচিত। সত্যিকার শিক্ষার সঙ্গে নারী নিজের শক্তি যোগ না করলে আমাদের কল্যাণ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।