বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
কবি পল এলুয়ার্দ। পরাবাস্তববাদের অন্যতম পথিকৃৎ; যদিও পরবর্তী জীবনে কার্ল মার্কসের অর্থনৈতিক তত্ত্বে আস্থা খুঁজে পেয়েছিলেন। ভীষনই স্বাধীনতাকামী ছিলেন এলুয়ার্দ।
লিখেছিলেন-
পৃথিবীর শক্তিতেই
আমি ফিরে পাই আমার শক্তি;
এবং তোমাকে জানতেই
তোমার একটি নাম দিতেই
আমার জন্ম হয়েছে-
স্বাধীনতা ।
প্যারিসের বাইরে সেন্ট দেনিস নামে একটি জায়গা আছে। সেখানেই ১৮৯৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর কবি পল এলুয়ার্দ-এর জন্ম। সুখেশান্তিতেই কবির বাল্যকাল অতিবাহিত হয়েছিল । অবশ্য ১৬ বছর বয়েসে যক্ষা ধরা পড়লে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় এলুয়ার্দের।
তারপর সুইজারল্যান্ডের একটি যক্ষা নিরাময় কেন্দ্রে কিশোর এলুয়ার্দ কে ভরতি হতে হয়। ঐ স্বাস্থকেন্দ্রেই গালা নামে একটি রাশান কিশোরীর (ইলেনা আইভানোভা দিয়াকোনোভার) সঙ্গে পরিচয় হয় এবং সেই পরিচয় অনিবার্যভাবেই গড়ায় প্রেমে দিকে। ১৯১৭ সালে বিয়ে করে দু’জন। সিসিল নামে একটি মেয়েও হয় ওদের। এলুয়ার্দ-এর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক অবশ্য টেকেনি গালার।
বিখ্যাত চিত্রকর সালভাদর দালির আকর্ষন উপেক্ষা করতে না-পেরে কবি পল এলুয়ার্দ কে ছেড়ে চলে যান গালা।
যা হোক। এসব অসুস্থতা, প্রেম ও বিরহের মধ্যেই চলছিল এলুয়ার্দ-এর কবিতা লেখা । উৎসুক মন ছিল তাঁর-বিশ্ব কবিতায় আশরীর নিমগ্ন হয়েছিলেন। জাপানি হাইকুও লিখেছেন।
হাইকু হল তিন লাইনের জাপানি কবিতা। এলুয়ার্দ-এর একটি হাইকু-
আহ! অজস্র শিখা, আগুন
আলো, ছায়া!
আমাকে অনুসরন করছে সূর্য
এভাবেই গালার অনুপস্থিতি ভুলে থাকতেন কবি।
১৯১৮ সালের পর পরাবাস্তববাদের গুরু দের সঙ্গে পরিচয় হতে থাকে এলুয়ার্দ-এর। আদ্রে ব্রেতোঁ প্রমূখ ...। ১৯২৪ সালে ফ্রান্সে ফেরেন এলুয়ার্দ।
প্রবলভাবে জড়িয়ে পড়েন সুরিয়ালিষ্ট আন্দোলনের সঙ্গে। ১৯৪২ সালে অবশ্য ফরাসী কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দেন এলুয়ার্দ এবং স্তালিনবন্দনায় ব্যবহার করেন কবিতাকে -এতে সুরিয়ালিস্টরা ভীষন ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে; কাজেই সুরিয়ালিষ্টদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা আসে কবির। ১৯৫২ সালের ১৮ নভেম্বর এই মহান কবির মৃত্যু।
প্যারিসের এক সেমিট্রিতে কবির সমাধি ...
স্বাধীনতা কবিতায় এলুয়ার্দের স্বাধীতাস্পৃহার দুর্দন্ত প্রকাশ ঘটেছে।
আমার স্কুলের নোটখাতায়
আমার টেবিলে এবং গাছগুলোয়
বালির ওপর তুষারের ওপর
আমি তোমার নাম লিখি
প্রতিটি পঠিত পৃষ্ঠায় কিংবা
প্রতিটি খালি পৃষ্ঠায়
রক্তিম পাথুরে পৃষ্ঠায় কিংবা ছাইরঙের পৃষ্ঠায়
আমি তোমার নাম লিখি
সোনালি ছবির ওপর
সৈন্যদের অস্ত্রের ওপর
রাজাদের মুকুটের ওপর
আমি তোমার নাম লিখি
অরণ্যে কিংবা মরুভূমিতে
সবগুলি নীড়ে প্রতিটি ঝোপে
ছেলেবেলার প্রতিধ্বনিতে
আমি তোমার নাম লিখি
রাত্রির বিস্ময়ে
দিনের সাদা রুটিতে
ব্যস্ততম ঋতুতে
আমি তোমার নাম লিখি
আমার নীল কাঁথায়
পুকুরের দীপ্যমান সূর্যে
হ্রদের টলটলে চাঁদে
আমি তোমার নাম লিখি
প্রান্তরের পর দিগন্তে
পাখিদের ডানায়
ছায়াময় বায়ূকলে
আমি তোমার নাম লিখি
মেঘেদের ফেনায়
আর্দ্র দিনের ঘামে
একটানা কালচে বৃষ্টিতে
আমি তোমার নাম লিখি
ঝলমলে আঙ্গিকে
রঙের বিন্যাসে
বাস্তবিক সত্যে
আমি তোমার নাম লিখি
ছুটির দিনের পথে
অবারিত পথঘাটে
এখানে-সেখানে
আমি তোমার নাম লিখি
আলো দেওয়া প্রদীপ কি
নিভে যাওয়া প্রদীপে
আমার পারিবারিক মিলনমেলায়
আমি তোমার নাম লিখি
দ্বিখন্ডিত ফলে
আমায় আয়নায় কিংবা ঘরে
আমার শূন্য বিছানায়
আমি তোমার নাম লিখি
আমার লোভী কুকুরের বশ্যতায়
ওর সতর্ক কানে
ওর অগোছালো থাবায়
আমি তোমার নাম লিখি
আমার দরজার খিলে
সব পরিচিত জিনিসে
আগুনের পবিত্র বাস্পে
আমি তোমার নাম লিখি
সুষম মাংসে
আমার বন্ধুদের ভুরুতে
বাড়ানো প্রতিটি হাতে
আমি তোমার নাম লিখি
বিস্ময়ের কাচে
ব্যস্ত ঠোঁটে
স্তব্দতার চূড়ায়
আমি তোমার নাম লিখি
আমার তছনছ আশ্রয়ে
আমার হেলে পড়া বাতিঘরে
আমার বিষাদের দেওয়ালে
আমি তোমার নাম লিখি
আবেগশূন্য অনুপস্থিতিতে
নগ্ন নির্জনতায়
মৃত্যুর মিছিলে
আমি তোমার নাম লিখি
ফিরে পাওয়া স্বাস্থে
অতিক্রান্ত বিপদে
স্মৃতিশূন্য আশায়
আমি তোমার নাম লিখি
পৃথিবীর শক্তিতেই
আমি ফিরে পাই আমার শক্তি;
এবং তোমাকে জানতেই
তোমার একটি নাম দিতেই
আমার জন্ম হয়েছে-
স্বাধীনতা ।
ভীষনই স্বাধীনতাকামী ছিলেন এলুয়ার্দ।
(উৎসর্গ: সূর্য-কে। প্রায়ই আমার ভুলক্রটি শুধরে দিয়ে যিনি আমায় কৃতজ্ঞ করে রাখেন)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।