আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাসন বাটি ধুয়ে রেখেছি , শীতল পাটি গুটিয়ে রাখা ; পহেলা বৈশাখ কেন যে এত দেরী করে আসতে ! ( শেষ পর্ব )

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে
পর্ব - ১ Click This Link এখন মাটির তৈরী সুন্দর সু্ন্দর বাসন কোসন পাওয়া যায় । এটা নতুন মাত্রা যোগ করেছে । গতবার সবার মন রাখতে থালা বাটি মিলিয়ে আনতে তিনবার যেতে হয়েছে আড়ং এ । এবার ওদের সংগ্রহ অনেক বেশী । আমার উপহার কেনার কাজ সহজ করে দিয়েছে , সস্তাও বটে ।

অনেকের জন্য নেয়া গেল কম পয়সায় , দেখলাম ফুলতোলা থালা বাটি , মগ পেয়ে খুশী তারা যাদের জন্য নেয়া । আর বিক্রেতা মেয়েগুলো এমন আন্তরিক , হাসিমুখে খুঁজে খুঁজে নিয়ে আসে , এগিয়ে দেয় পছন্দের জিনিসটা । আমি আমার ছোঁয়াচে রোগ থেকে খানিকটা ভাল লাগা জীবানু ওদের দিয়ে আসি , বলি একবেলার জন্য হলেও যেন বৈশাখের প্রথম দিনে আনন্দ করা হয় । হুমকি দিয়ে আসি যদি শুনতে পাই নষ্ট হল কাজ আর কাজ বাহানায় পুরোদিন তো এটো বাসন কোসন সব দিয়ে আসব ও ফিরিয়ে ! একটা পোষ্ট অনেকদিন আগে চোখে পড়ত, পান্তা ভাত খাওয়া নিয়ে পহেলা বৈশাখে । একা একা হাসতাম সেটা দেখে ।

কারনও ছিল এবং আছে । আমরা নতুন বছরের প্রথম দিন সকালে বিরুই চালের পান্তা ভাত ,ইলিশ , পুটি আর চিংড়ী মাছ ভাজি , ডাল ভর্তা , আলু ভর্তা , পাটালী গুড় এসবের আয়োজন করি খাবার জন্য । আমার সংসারে সাহায্য করতে যারা থাকে তারা সেদিন সাধারনত: অমত করে না ; সাথে খায় খুশী হয়ে । একবার দেখলাম একজন রাজী নয় । আমার মেয়ে ছোট মানুষ , বেঁকে বসল কেন পানি ভাত খাবে না সেই গৃহপরিচারিকা ? অশান্তি এড়ানো আমার কাম্য ।

তাই সেই গৃহপরিচারিকার পক্ষে কথা বলেছিলাম ; বলেছি তুমি ভাত রান্না করে খাও , সমস্যা নেই , তবু খুশী থাকো। সারা বছর সকালে আমরা হাতে তৈরী আটা রুটি বা পাউরটি খাই , গৃহ পরিচারিকা গরম ভাত খায় । কারন তারা ছোট বেলা থেকে রুটি খেয়ে অভ্যস্ত নয় নিজ বাড়িতে । আমার মনে হয় এ বিষয়টা অনেকে বোঝে আর তাদের খাদ্যাভাসে হস্তক্ষেপ করে না । আর নববর্ষের নতুন কাপড় পরিবারের সদস্যদের মত গৃহপরিচারিকারাও পায় , সাথে রমনাতেও যায় ।

ওদের অখুশী করে আমাদের খুশী কিভাবে পূর্ণতা পাবে ! দিনগুলো যেন কাটছে না , কবে যে নতুন বছরের প্রথম সূর্য্য আকাশ আলো করে উঁকি দেবে মনের আকাশ রাঙিয়ে ! আনন্দের আতিশয্যে নির্ঘুম রাত , কাঁচা আম ভর্তা আর গুড়ের পায়েস নিয়ে রমনায় যাওয়া , হাসিমুখে ভোরের আলোয় ধীর পায়ে লাইন ধরে প্রবেশ , ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই রমনা বটমূল , আকাশ ছাপিয়ে সূরের ঝর্ণাধারা , বাতাসে কানপেতে সে সূরের পেছনের কথা চিনে নেয়া , চারিদিকে আনন্দ প্লাবন ! সবার চোখে মুখে উদ্ভাসিত নির্মল অমূল্য খুশী রাশি রাশি ! উচ্ছাসভরে দুহাত ভরে কিনে নেয়া পালকী , ঢেকী ,তালপাখা , মুড়কী , বাতাসা , রেশমী চুড়ী , তরমুজ বীজের মালা -- আরো কত কি !!! ঈদের সাথে পার্থক্য হল নববর্ষের পোষাক , প্রসাধনে প্রতিযোগীতা নেই ; যা আজকাল ঈদে চোখে পড়ে ; কে কোন ব্রান্ডের , কোন ফ্যাশানের কি নিল । পহেলা বৈশাখে এখনও মনে হয় আমরা কেবল বাঙালী হয়ে , বাংলাদেশী হয়ে মেলায় ঘুরি ,নাগরদোলায় চড়ি । অকৃপন হয়ে ভাগ বাটোয়ারা করি প্রানের প্রকৃতি , আনন্দের স্বরূপ । রমনা থেকে হাসি মুখে বাড়ি ফেরা ,বেড়ানো , অতিথি আপ‌্যায়ন , মাটির আর কাঠের গয়নাগুলো খুলে রাখা , সূতি শাড়ির নষ্ট ভাজ দেখে হাসিতে গড়িয়ে পড়া , ক্লান্তিহীন সারাদিন কেটে যায় । মন ভাল করে দিয়ে যায় পহেলা বৈশাখ , পরের বার ঠিকসময়ে আসবে বলে কথা দিয়ে যায় ।

আর তো মাত্র দুদিন , তবু তর সইছে না ! আমার বর খুব মজা পায় আমাদের ছেলেমানুষী অপেক্ষা দেখে ; অপেক্ষা মানেই ছেলেমানুষী , অপেক্ষা মানে মজা , অপেক্ষা মানে কিছু পাওয়ার দিকে দুহাত বাড়িয়ে ছুটে যাওয়া , অপেক্ষা মানে আর কিছু নয় শুধু অপেক্ষা ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।