আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাসন বাটি ধুয়ে রেখেছি , শীতল পাটি গুটিয়ে রাখা ; পহেলা বৈশাখ কেন যে এত দেরী করে আসতে ! ( পর্ব --১ )

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে
দুই ঈদের পরে সবচেয়ে প্রিয়দিন আমাদের পহেলা বৈশাখ । ২রা বৈশাখ থেকে অপেক্ষা করে থাকি কখন কবে আসবে পহেলা বৈশাখ ! এখন আবার ছেলে যোগ দিয়েছে মায়ের সাথে , আরো এক পা এগিয়ে আছেন উনি । প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে আর কতদিন বাকী । যখন উত্তর দেই সে বলে ইংলিশে বল , ইংলিশে বলি তবে শর্ত অনুযায়ী তাকে আবার বাংলায় বলতে বলি ; সে বলে । তেমন বিশেষ কিছু লাভ হয় কিনা জানি না , আমার জন্য একটুখানি স্বান্তনা আর কি ।

আমি কেমন দেশ , দেশের ভাষা ভালবাসি ,এমন একটা মহৎ ভাব জাগে ! নিজেকে কেনা চায় মহৎ ভাবতে ! তবে পড়ে যাচ্ছি যে কোন গ্যাঁড়াকলে কে জানে ! আগে মেয়ের জন্য করা হোত , এখন ছেলের জন্য -- তা হল সঞ্চয় প্রকল্প । মাটির বিভিন্ন আকৃতির ব্যাংক পাওয়া যায় ; আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য সংস্কৃতি মাথায় রেখে মনে হয় এখনো একাগ্র চিত্তে কাজ করে যাচ্ছে মৃৎশিল্পীরা । তাই মাটির বিভিন্ন জিনিস দেখলে মনে হয় এসব হারিয়ে যায় নি । এবছরের কলস ব্যাংকে ছেলে পয়সা জমাচ্ছে , এটা শেষ চৈত্রে ভাঙ্গা হবে । সারা বছরে ভালই জমে যায় ।

পরদিন রমনাতে খরচ করেও থাকে উদ্বৃত্ত । আগামীবছরের জন্য ঘোড়া ব্যাংকও কেনা হয়ে গেছে । ইনশাল্লাহ সামনের বছরের প্রথম দিনেই ঘোড়া তার উদরে কিছু পাবে , অভুক্ত আছে , আর তো মাত্র কটা দিন ; আমরাও উম্মুখ হয়ে আছি ছেলের মাটির ঘোড়ার মত , পহেলা বৈশাখ আমাদের নিজেদের একটা দিন আসবে বলে । বেশ কবছর হল , পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে যাওয়া নিয়ম হয়ে গিয়েছে । আমার উৎসাহ দেখে অনেকেই সংক্রামিত একই ব্যধিতে ।

সম্ভবত চার বছর আগের ১লা বৈশাখ , সেবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর ছিল , আমার এক ভাগ্নী তার ৪৫ দিন বয়সী ছেলে আলমাস সহ গিয়েছে । আলমাস তার নানীর কোলে শুয়ে জীবনের প্রথম ১লা বৈশাখ উপভোগ করতে ঢুকছে !!! তার নানীর হ্যান্ডব্যাগ আমার কাছে । ১০ জনের দলে সবার হাতেই কতকি ! আলমাসকে দেখে নিরাপত্তাকর্মীরা তার মা নানী সবাইকে তল্লাশী ছাড়াই প্রবেশ করতে দিল হাসিমুখে , কিছুটা অবাকচোখে ! আমার হাতে দুটো হ্যান্ডব্যাগ ! বোমা টোমা বহন করছি কিনা ভেবে সন্দেহ করলো মনে হয় । বেশ প্রশ্নবাণে জর্জরিত হলাম । হাসির দমকে ঠিক উত্তরও দিতে পারছিলাম না ।

যাহোক ফাড়া কাটল । সেইবার যে বোমা হামলা হয়েছিল রমনায় , সেবারে আরেক অভিজ্ঞতা । শেষ চৈত্রের রাতে বোনের ছেলে বন্ধুদের সাথে রমনায় ছিল । ভোরে আমরা প্রায় তৈরী , একজন ফোনে বোনের ছেলের খবর জানতে চাইল । বলল , শুনেছে বোমা হামলা হয়েছে সেখানে ।

বুঝে উঠতে পারছিলাম না কিছু । একফাকে আমার বর রমনা ঘুরে চলে এল , বলল জেনে এসেছে --বোমা হামলার খবর সঠিক নয় । বেশ সেজেগুজে খোশমেজাজে গেলাম রমনায় , পৌছুতে একটু দেরী হয়ে গেল বলে খারাপই লাগছিল । প‌ৌছে সব মন খারাপ দূর , বহুদূর পালিয়ে গেল । ঘুরছি , আনন্দ করছি ।

হঠাৎ দূর থেকে বোমা হামলার জায়গাটা চোখে পড়ল । এগিয়ে গিয়ে তাজ্জব বনে গেলাম , তারপর বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞেস করে যা শুনলাম তাতে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল ! তড়িঘড়ি করে বোনের ছেলেকে খুঁজে নিয়ে বাসায় ফিরলাম । ফেরার পথে কজন পুলিশ পেয়ে জানতে চাইলাম কেন ভোরে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল । জবাব দিল , যাতে মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে না পড়ে , সে জন্য তারা এমন করেছে । মেনে নিতে পারছিলাম না ।

পরে অবশ্য মনে হল ওরা তো কোন খারাপ উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলেনি । ১লা বৈশাখে কেউ এমনি করে বিধ্বংসী হতে পারে , কেউ রক্তপাত দেখতে চাইতে পারে --বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ! চলবে ...... শেষ পর্ব : Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।