সাহিত্য আলোকপাত- চিলেকোঠার সেপাই(আখতারুজ্জামান ইলিয়াস)
সে কথায় আমল না দিয়ে আনোয়ার বলে" তাহলে ছয় দফাই তোমাদের ফাইনাল? ছয় দফা দিয়ে সাধারণ মানুষের লাভ কি হবে?"
আলতাফ জবাব দেয়, " আমাদের সমস্ত দুর্ভগের কাড়ন হল পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ। ছয় দফার রাষ্ট্রীয় কাঠামো এমন করার ব্যবস্থা রয়েছে জাতে একটি অঞ্চল আরেকটি অঞ্চলকে শোষণ করতে পারে না। আমরা যা উপার্জন করবো খরচ করবো আমরাই। আমাদের তাকা পাচার হয়ে যেতে পারবে না। ট্যাক্স বসাতে পারব আমরা।
প্রাচীনকালে বা মদ্দজুগে বাঙালি ব্যবসা করেনি?"
বলতে বলতে আলতাফের গলা থেকে রাগ কিংবা বিরক্তি ঝরে পড়ে। সে খুব অভিভূতও, আবেগে তার গলা জরিয়ে আসে, " বাঙালি এককালে জাভা, বালি, সুমাত্রায় জেত মসলা কিনতে, নিজেরা কাপর নিয়ে জেত বিক্রি করতে। বাঙালি তাতির তইরি কাপর ইউরোপে বেস্ট কোয়ালিটি কাপর বলে দাম পেয়েছে। সেই দক্ষতা আমরা আবার দেখবো। ওয়েস্ট পাকিস্তান আর্মির পেছনে বাঙ্গালির রক্ত-পানি-করা তাকার অপচয় ঘটবে না।
আমরা আলাদা আর্মির কথাও বলেছি। "
আনোয়ার বলে, " হ্যাঁ, বাঙালি আর্মির পেছনে পিপলের টাকা খরচ হবে, তাতে মানুষের লাভ কি?"
" সেটা নির্ভর করবে আমাদের অপর। বাঙালি আর্মি আমাদের লোক, আমাদের মানুষের সেনাবাহিনী । আমাদের সেনাবাহিনী আমাদের নির্যাতন করবে কেন?"
" শোষণ কি কেবল আঞ্চলিক?"
" এখানে প্রধানত এবং প্রথমত তাই। "
" তাহলে কোটি কোটি বাঙালি যে হাজার বছর ধরে এক্সপ্লয়েটেড হয়ে আসছে সে কার হাতে? দেশের ভেতরেই এক্সপ্লয়টার থাকে, বিদেশিসির কোলাবরেটর থাকে।
গ্রামে গ্রামে থাকে। জমিতে থাকে, মিল ফ্যাক্টরি হলে হলে সেখানেও থাকবে। ট্যাক্স বসাবার রাইট চাও? কে বসাবে? কার ওপর? এই দুই বাঙালি কি একই ধরণের? শোন যারা কাপর বুনেছে, তারা বাইরে গিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করেনি। তারা কাপর পরতেও পারত না ঠিক মত। বাঙালি সেনা বাহিনী হলেই বাঙ্গালির উদ্ধার হবে? বাঙালি আর্মি তখন চেপে বসবে বাঙ্গালির উপরেই, বাঙালি ছাড়া আর কার ওপর দাপট দেখাবার ক্ষমতা হবে তার? পাঞ্জাবি সোলজারের উর্দু গালাগালি সুনতে খারাপ লাগে, বাঙালি কর্নেল সায়েব বাঙলা ভাষায় " শুয়োরের বাচ্চা" বললে কি তার পা জরিয়ে ধরে বলবো, " আ মরি বাঙলা ভাষা!" তোমরা ওয়েস্ট পাকিস্তানের হাত থেকে ইম্যানসিপেসনের কথা বলছও, কিন্তু কাদের জন্য?"
" ইস্ট পাকিস্তানের পিপলের জন্য।
"
" না। ট্যাক্স বসাবার রাইট পিপল পায় না, পিপলের রাইট শুধু ট্যাক্স দেওয়ার। বাঙ্গালির হাতে পাওয়ার চাও তো? মানে বাঙ্গালিদের এক্সপ্লয়েট করার লাইসেন্স চাও?"
উপরের লেখা গুলো আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসের ৫৬ পৃষ্ঠা থেকে উদ্ধৃত করলাম। উপন্যাসটি ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের সময়কালীন প্রেক্ষাপটে রচিত। আলোচ্য সংলাপে দুটি চরিত্র রয়েছে - একজন ছয় দফা তথা প্রগতিশীলতার পক্ষে আরেকজন শোষক শ্রেণীর পূজক, চামচা, তোষামোদকারী...
ছয় দফার পক্ষে কথা বলে আলতাফ নতুন কে স্বাগত জানায়, প্রাচীনকালে বা মধ্য যুগে বাঙ্গালির ব্যবসা করার কথা তুলে ধরে সুদূর জাভা, বালি, সুমাত্রায়।
সে নিজ জাতির ইতিহাস স্বীকার করে এবং তা নিয়ে গর্ব করে। বাঙালি তাঁতির তৈরি কাপড় ( যেমন জামদানি) যে ইউরোপে এককালে সমাদৃত হত তা তুলে ধরে। সে বলে সেই দক্ষতা আমরা আবার দেখাবো ... বর্তমান গার্মেন্টস শিল্প করে আমরা তা দেখিয়েছি।
ছয় দফার বিপক্ষে থাকা আনোয়ার শাসক শ্রেণীর দালাল, সে শাসক কে শোষক বলে মেনে নেয়, সে দুর্বল হৃদয়ের অধিকারী । সে বাঙালি কর্নেল এর রূপক গালি ব্যবহার করে পা জড়িয়ে " আ মরি বাংলা ভাষা" বলে বাহান্নর ভাষা আন্দোলন কে কটাক্ষ করে।
যে তোষামোদকারী সে নতুন কে ভয় পায় কিংবা শক্তির পক্ষেই তার অবস্থান, আত্মপরিচয় তার বিস্মৃত, ক্ষমতায় আসীন হওয়া মানে তার কাছে "এক্সপ্লয়েট করার লাইসেন্স"!!!!তাদেরকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড় কখনোবা চিহ্নিত করেছে মীর জাফর কখনোবা শান্তি কমিটি আর বর্তমানে ছাত্র শিবির অধুনা ছাগু(বাশের কেল্লা বা সোনার বাংলার ব্লগার কিংবা আমার দেশের মাহমুদুর রহমান) হিসেবে। এরা দেশের কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন তো দূরে থাক প্রণয়নই করতে পারে নি। বঙ্গবন্ধু যেমন ৬৬ তে পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তির সনদ ছয় দফা দিয়েছিল ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রণয়ন করা হয়েছে উন্নয়নের রূপকল্প ২০২১। বাস্তবায়ন হয়ত পুরোটা করতে পারে নি , কিন্তু অনেকাংশে এগিয়েছে - ২০১৫ সালের দারিদ বিমোচন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ২০১৩তেই এসে, প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপর... এমন আর শত শত উদাহরন দেয়া যায়, তা না হয় অন্য পোস্ট এ।
একেবারেই এক্সপ্লয়েট যে হয়নি তা তা কিন্তু বলছি না খোন্দকার মোস্তাকের মত প্রতিক্রিয়াশীল কিংবা মোনেম খানের গুণ্ডারা আজও শাসক শ্রেণীর ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভুতের মত ভর করে আছে।
এযুগের গুণ্ডাপাণ্ডারা আজ আমার নিজের সংগঠন ছাত্রলীগের ওপর ভর করেছে। চট্রগ্রামে সিআরবির লিমন- বাবরেরা এর সর্বাধুনিক দৃষ্টান্ত। এদের চিহ্নিত করে প্রকৃত বিচার আমি চাই(মানে রাখতে হবে ঘরের শত্রু বিভীষণ)। যদি মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক দালালদের বিচার চাইতে নির্ঘুম রাতের পর রাত অবস্থান নিতে পারি তবে ওই নিরপরাধ শিশুর হত্যার বিচারের জন্যও গলা ছাড়তে হবে। তবেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবো, পারব ওইসব দালাল মীর জাফর , গোলাম আজম , ছাগু এবং সিন্দাবাদের ভুতদের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে।
বঙ্গবন্ধু দালালদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার বেবস্থা করলেও ওই সিন্দাবাদের ভুতদের নিস্তার না পাওয়ার কারনেই হয়তোবা তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে যেতে পারেননি। নয়তবা বাংলার ইতিহাস আজ অন্য রকম ভাবে লেখা হত যেমনটা কিউবাতে লিখেছেন কাস্ত্রো। তাই ইংরেজি ভাষায় একটা কথা বলতে চাই - IT IS HIGH TIME.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।