শুধুই দেখি...
জানাজা বহন করার নিয়মঃ
জানাজা বহনের সময় নিম্নবর্ণিত নিয়মগুলো মেনে চলতে হয়।
১. দুগ্ধপোষ্য শিশু বা তার চেয়ে কিছু বড় শিশুর মৃতদেহ দুই হাতে নিয়ে
কবরস্থানের দিকে যেতে হবে। এ রকম লাশ একাই বহন করা যায়। কিছুক্ষণ পথ
চলার পর আর একজন বহন করবে। এভাবে পালাক্রমে কয়েকজন লাশ বহন
করতে পারবে।
২. প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের লাশ খাটে করে বহন করতে হয়। খাটের
চারকোণায় চারজন খাট বহন করবে।
৩. খাট বহনের সময় লাশের মাথার দিক সামনে রাখতে হবে।
৪. জানাজা নিয়ে দ্রুত হাঁটা সুন্নত। তবে এমন জোরে হাঁটা উচিত নয় যাতে
খাটের উপরের লাশ দোল খেতে থাকে।
৫. জানাজার সঙ্গে গমনকারীগণ জানাজার পিছনে যাবে। এরকম করা মোস্তাহাব
তবে জানাজার সামনে হাঁটাও জায়েজ। তবে জানাজার ডানে বামে হাঁটা উচিত
নয়।
জানাজার নামাজের সময়ঃ
জানাজার নামাজের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। যে কোনো সময়
জানাজার নামাজ পড়া যায়।
সূর্যোদয়ের সময়, ঠিক দ্বিপ্রহরে এবং সূর্যাস্তের সময়
ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়া নিষেধ। কিন্তু জানাজার নামাজ পড়া নিষেধ নয়। তবে
খেয়াল রাখতে হবে জানাজা যদি নামাজের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের আগে এসে থাকে
তবে নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর জানাজার নামাজ পড়তে হবে। এরকম
অবস্থায় নামাজের নিষিদ্ধ সময়ে জানাজা নামাজ পড়া জায়েজ হবে না। কিন্তু
নিষিদ্ধ সময়ের ভিতর যদি জানাজা আসে তবে তখন জানাজার নামাজ পড়া
সম্পূর্ণই জায়েয হবে।
জানাজার নামাজের নিয়মঃ
জানাজার নামাজের সামনে মৃতের কাফন ঢাকা লাশ রাখতে হয়। ইমাম
লাশের সিনা বরাবর দাঁড়াবেন। পিছনে সারিবদ্ধভাবে মোক্তাদীরা দাঁড়াবেন।
ইমাম মোক্তাদী উভয়েই ‘আমি এই মৃতের দোয়ার জন্য জানাজার নামাজ
পড়ছি’ এই রকম নিয়ত করবেন। তারপর ইমাম আল্লাহু আকবর জোরে উচ্চারণ
করে কানের লতি বরাবর দুই হাত তুলে নাভি বরাবর বাম হাত রেখে ডান হাতের
বৃদ্ধা এবং কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে বাম হাতের কব্জি বেঁধে বাকী তিন আঙ্গুল বাম
হাতের উপরে বিছিয়ে ছানা পড়বেন।
যেমন অন্যান্য নামাজের শুরুতে ছানা
পড়তে হয়। তারপর পুনরায় আল্লাহু আকবর জোরে উচ্চারণ করে চুপে চুপে দরূদ
শরীফ পড়বেন। দরূদ শরীফ পড়া শেষে পুনরায় আল্লাহু আকবর জোরে বলে চুপে চুপে দোয়া পড়বেন।
জানাজার নামাজের দোয়াঃ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফির লিহাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া
গয়িবিনা, ওয়া ছগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উনসানা। আল্লাহুম্মা
মান আহ্ইয়াইতাহু মিন্না ফা আহ্ইহি আ’লাল ইসলাম, ওয়ামান তাওয়াফ্ ফাইতাহু
মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহু আ’লাল ঈমান, বিরহমাতিকা ইয়া আরহামার রহিমীন।
অর্থঃ হে আমাদের আল্লাহ্! তুমি আমাদের মধ্যে জীবিত, মৃত, উপস্থিত,
অনুপস্থিত, ছোট, বড়, পুরুষ, মহিলা সকলের গোনাহ্সমূহ দয়া করে মাফ করে
দাও। হে আমাদের আল্লাহ্! আমাদের মধ্যে যাকে তুমি জীবিত রাখতে চাও তাকে
দ্বীন ইসলামের উপরে জীবিত রেখো। আর যাকে মৃত্যু দান করতে চাও তাকে
ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু দান কোরো।
এই দোয়া পড়ার পর পুনরায় জোরে তকবীর বলে প্রথমে ডানে এবং পরে
বামে আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্ বলে সালাম ফিরাতে হবে। এই
নিয়মেই জানাজার নামাজ পড়তে হয়।
এ সম্পর্কে আরো কিছু জরুরী নিয়ম কানুন জেনে রাখা প্রয়োজন। যেমন-
১. জানাজার নামাজ চার তকবীরের সঙ্গে পড়তে হয়। প্রথম তকবীরের সময়
কানের লতি বরাবর দুই হাত কেবলামুখী করে উঠাবার পর নাভি বরাবর হাত
বেঁধে দাঁড়াতে হয়। পরের তিন তকবীরের সময় হাত উঠাতে হবে না। হাত বাঁধা
অবস্থায় রেখেই প্রথম তকবীর বলে ছানা, দ্বিতীয় তকবীর বলে দরূদ শরীফ,
তৃতীয় তকবীর বলে দোয়া এবং চতুর্থ তকবীর বলে সালাম ফিরাতে হয়।
২. ইমাম তকবীর এবং সালাম জোরে বলবেন। মোক্তাদিরা চুপে চুপে
বলবেন। ছানা, দরূদ শরীফ, দোয়া, সালাম ইমাম মোক্তাদী সবাইকে চুপে চুপে
পড়তে হবে।
৩. জানাজার নামাজ ছুটে যাবার আশংকা থাকলে পানি নিকটে থাকা সত্ত্বেও
তায়াম্মুম করে জানাজার নামাজে শরীক হওয়া যায়।
৪. জুতা পায়ে রেখেও জানাজার নামাজ পড়া যায়।
কিন্তু জুতার তলা এবং
জুতার তলার জমিন পাক থাকতে হবে। আর যদি জুতা খুলে জুতার উপরে পা
রেখে দাঁড়ায় তবে পায়ের সঙ্গে সংযুক্ত জুতার উপরের অংশ পাক থাকলেই
চলবে। জুতার তলা এবং জুতার তলার জমিন নাপাক থাকলেও জানাজার নামাজ
হয়ে যাবে।
৫. জানাজার নামাজের জন্য জামাত শর্ত নয়। একজনে পড়লেও ফরজ আদায় হয়ে যাবে।
৬. জানাজার নামাজ তিন কাতার করা মোস্তাহাব। ইমাম ছাড়া পাঁচজন
উপস্থিত থাকলে, ইমামের পিছনে প্রথম কাতারে দুইজন, দ্বিতীয় কাতারে দুইজন
এবং তৃতীয় কাতারে একজন এই নিয়মে দাঁড়াতে হবে। লোক সমাগম বেশী হলে ৫ কাতার অথবা ৭ কাতার অথবা যে কোনো বেজোড় সংখ্যক কাতার করা
ভালো।
৭. গায়েবী জানাজা পড়া জায়েজ নেই। জানাজার নামাজে লাশ উপস্থিত
থাকতে হবে।
৮. ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র যে শিশুর মৃত্যু হয়েছে তারও নাম রাখবে এবং
গোসলও দিবে। নিয়ম মোতাবেক কাফন এবং জানাজার নামাজ পড়তে হবে না।
শুধু এক খণ্ড কাপড় দিয়ে লাশ ঢেকে দিয়ে কবরে মাটি চাপা দিয়ে রাখলেই
চলবে।
৯. আর যে শিশু মৃত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছে তারও নাম রাখবে এবং
গোসলও দিবে। নিয়ম মোতাবেক কাফন এবং জানাজার নামাজ পড়তে হবে না।
শুধু একখণ্ড কাপড় দিয়ে লাশ ঢেকে দিয়ে কবরে মাটি চাপা দিয়ে রাখলেই চলবে।
দাফনের নিয়মঃ
মৃতদেহ দাফনের ব্যাপারে নিুবর্ণিত নিয়মগুলো জেনে নেয়া প্রয়োজন।
১. লাশ কবরে নামানোর জন্য তিনজন অথবা চারজন কবরে নামতে পারে।
তারা কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন এবং খাট থেকে লাশ নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে
উত্তর দিকে মাথা এবং দক্ষিণ দিকে পা করে লাশকে কবরে শোয়াবেন। লাশের
মুখ কেবলামুখী করে দিতে হবে।
২. মহিলাদের লাশ তাদের সঙ্গে যাদের বিবাহ হারাম ছিলো এই রকম
পুরুষেরা কবরে নামাবেন। যদি এরকম কেউ না থাকেন তবে দ্বীনদার,
পরহেজগার লোকেরা নামাবেন।
৩. লাশ কবরে রাখবার সময় বলতে হবেঃ
বিসমিল্লাহি ওয়া আ’লা মিল্লাতি রসূলিল্লাহ্।
অর্থঃ আল্লাহর নামের উপর এবং রসুলের দ্বীনের উপর সমর্পণ করছি।
৪. কবরে রাখার পর কাফনের বাঁধনগুলো খুলে দিতে হবে।
তারপর বাঁশ অথবা কাঁচা ইট কবরের উপর সমান করে বিছিয়ে দিয়ে কবর ঢেকে দিবে। কাঁচা পাতা ইত্যাদি বিছিয়ে মাটি দিবে। কবর মাছের পিঠের মতো করবে। চৌকোণা করবে না।
৫. মহিলাদের কবরে নামানোর সময় পর্দা করবে।
৬. কবর অর্ধহাত পর্যন্ত উঁচু করা যাবে। এর বেশী উঁচু করা মাকরূহ্। কিন্তু
কবর খোঁড়া মাটি দিয়েই যদি আধ হাতের বেশী উঁচু হয়, তবে মকরূহ হবে না।
৭. কবরের মাথার দিক থেকে মাটি দেয়া শুরু করবে। প্রথম মুষ্টি মাটি
দেয়ার সময় বলবে-
মিনহা খলাকনাকুম (এই মাটি থেকেই তোমাদের সৃষ্টি করেছি)
দ্বিতীয়বার মাটি দেওয়ার সময় বলবে-
ওয়া ফীহা নুঈদুকুম (আবার তোমাদেরকে মাটিতেই ফিরিয়ে দিবো)
তৃতীয়বার মাটি দেয়ার সময় বলবে-
ওয়া মিন্হা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা (এই মাটি থেকেই পুনরায়
তোমাদেরকে তুলবো)।
৮. মাটি দেয়া শেষে কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া মোস্তাহাব। পানি
মাথার দিক থেকে দেয়া শুরু করবে। তারপর একটি তাজা গাছের ডাল কবরে
পুঁতে দিলে ভালো হয়।
৯. দাফন শেষে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু দোয়া কালাম পড়ে মৃত ব্যক্তির
কবরে ছওয়াব রেসানী করা মোস্তাহাব।
সুম্মা আমীন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।