শুধুই দেখি...
অজুর নিয়ম
বিস্মিল্লাহ্ বলে অজু শুরু করতে হবে। প্রথমে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত
তিনবার ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর তিনবার কুলি করতে হবে এবং মেছওয়াক
করতে হবে। মেছওয়াক না থাকলে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ভালো করে দাঁত মেজে
নিতে হবে। এরপর তিনবার নাকে পানি দিতে হবে।
বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে
নাক পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে
নিতে হবে। তারপর ডান হাতের এবং বাম হাতের কনুইসহ তিনবার ভালো করে
ধুয়ে নিতে হবে। এরপর সমস্ত মাথা একবার মাসেহ্ করে নিতে হবে। এরপর দুই
হাতের পিঠ দিয়ে ঘাড় মাসেহ্ করতে হবে।
সবশেষে ডান পা এবং বাম পা টাখনা
(পায়ের ছোট গিরা) সহ তিনবার ধুয়ে নিতে হবে।
উপরের নিয়মে অজু করলেই অজু হয়ে যায়।
জানা প্রয়োজন অজুর মধ্যে চারটি কাজ ফরজ। যেমন-
১. সমস্ত মুখমণ্ডল একবার ধোয়া
২. কনুইসহ দুই হাত একবার ধোয়া
৩. মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ্ করা
৪. টাখনাসহ দুই পা একবার ধোয়া।
অজুর মধ্যে দশটি কাজ সুন্নত।
যেমন-
১. বিস্মিল্লাহ্ বলে অজু শুরু করা
২. কবজিসহ দুই হাত তিনবার ধোয়া
৩. কুলি করা
৪. নাকে পানি দেওয়া
৫. মেছওয়াক করা
৬. সমস্ত মাথা একবার মাসেহ্ করা
৭. মুখমণ্ডল, হাত এবং দুই পা তিনবার করে ধোয়া
৮. কান মাসেহ্ করা
৯. হাতের আঙ্গুল খেলাল করা
১০.পায়ের আঙ্গুল খেলাল করা।
উপরে বর্ণিত ফরজ ও সুন্নত বাদে বাকী কাজগুলো মোস্তাহাব। জানা
প্রয়োজন যে, কোনো ফরজ বাদ পড়লে অথবা অসম্পূর্ণ হলে অজু হবে না। সুন্নত
বাদ পড়লে সুন্নতের ছওয়াব থেকে বঞ্চিত হতে হবে।
অজু সম্পর্কে আরো কিছু জরুরী নিয়ম কানুন জানা থাকা প্রয়োজন।
নীচে
সেগুলো দেয়া হলো।
১. মুখমণ্ডল ধোয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেনো মাথার চুলের গোড়া
থেকে থুতনি পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ধোয়া
হয়। দুই হাতের সাহায্যে ভালোভাবে মুখমণ্ডল ধুতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে
যেনো দুই ভ্রর পশমের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে যায়। যদি মুখ এবং চোখ
এরকম জোর করে বন্ধ করে রাখা হয়, যাতে চোখের পাতা অথবা ঠোঁটের কিছু
অংশ শুকনা থাকে, তবে অজু হবে না।
২. পুরুষগণ মুখমণ্ডল ধোয়ার পর ভিজা হাতের আঙ্গুল দিয়ে দাড়ি খেলাল
করবে। তিনবারের বেশি খেলাল করবে না।
৩. অজুর মধ্যে থুতনি ধোয়া ফরজ। থুতনিতে দাড়ি থাকুক বা না থাকুক।
৪. মুখ বন্ধ করলে ঠোঁটের যে অংশ স্বাভাবিকভাবে দেখা যায়, সে অংশ
ধোয়া ফরজ।
৫. দাড়ি, মোচ অথবা ভ্র অত্যধিক ঘন হওয়ার কারণে নীচের চামড়া না
দেখা গেলে চামড়া ধোয়া ফরজ নয়। পশমের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করে
দিলেই ফরজ আদায় হয়ে যাবে।
৬. হাতে আংটি থাকলে আংটির নীচের চামড়ায় পানি পৌঁছাতে হবে।
মেয়েদের চুড়ি, বালা, নাকের নথের নীচের চামড়াতেও পানি পৌঁছাতে হবে।
৭. নখের ভিতরে আটা বা চুন ঢুকে শক্ত হয়ে থাকার কারণে যদি নখের
ভিতরে পানি না যায়, তবে তৎক্ষণাৎ আটা বা চুন বের করে সেখানে পানি ঢেলে
দিতে হবে।
৮. এক অঙ্গ ধোয়ার পর আর এক অঙ্গ ধুতে এত দেরী করা ঠিক নয়, যাতে
ইতোমধ্যে প্রথম অঙ্গ শুকিয়ে যায়। এরকম করা সুন্নতের খেলাফ।
৯. প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় বিস্মিল্লাহ্ ও কলেমা পড়বে।
১০. পানি যতোই বেশি থাকুক না কেনো, এমনকি নদীতে অজু করলেও
প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করবে না। আবার এত কম পানিও ব্যবহার
করবে না, যাতে কোনো অঙ্গ শুকনা থাকার আশংকা থাকে।
১১. প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় হাত দিয়ে ঘষে মেজে ধোয়া সুন্নত।
শীতকালে এরকম করা বেশি জরুরী।
১২. হাতের বা পায়ের নখে নখপালিশ থাকলে তা ঘষে তুলে ফেলে অজু
করতে হবে।
১৩. অজু করার পর যদি দেখা যায় হাতের বা পায়ের কোনো অংশ শুকনা
আছে, তবে সে অংশে পানি প্রবাহিত করে দিতে হবে। শুধু ভিজা হাতে মুছলে
অজু হবে না।
১৪. ডান দিক থেকে অজু শুরু করতে হবে। কেবলামুখী হয়ে অজু করা
ভালো। অজু শেষে কলেমা শাহাদত পড়তে হবে। অজু শেষে সূরা কদর পড়লেও
ফজিলত পাওয়া যায়। এই কাজগুলো মোস্তাহাব।
১৫. অজু করার সময় কথাবার্তা বলা, ডান হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করা,
প্রয়োজনের বেশি পানি ব্যবহার করা, নাপাক স্থানে বসে অজু করা- এই সকল
কাজ মাকরূহ (অপছন্দনীয়)।
যে সকল কারণে অজু নষ্ট হয়ে যায়- সেগুলো নীচে উল্লেখ করা হলো-
১. প্রস্রাব, পায়খানা করলে।
২. পায়খানার রাস্তা দিয়ে বায়ু নির্গত হলে।
৩. শরীরের কোনো অংশ থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে।
৪. নিদ্রাভিভূত হলে।
৫. মুখ ভরে বমি করলে।
৬. নামাজের মধ্যে সশব্দে হাসলে।
৭. পাগল বা মাতাল হলে অজু নষ্ট হয়ে যায়।
৮. অট্টহাসি হাসলেও অজু নষ্ট হয়ে যায়।
৯. মলদ্বার দিয়ে কৃমি বের হলে অজু নষ্ট হয়ে যায়।
১০. যদি কারো নাক দিয়ে কোনো বস্তু ঢুকে মুখ দিয়ে বের হয়ে যায় তবে
অজু নষ্ট হয়ে যাবে।
১১. বেহুঁশ হয়ে গেলে অজু চলে যায়।
এ প্রসঙ্গে আরো কিছু নিয়ম ভালোভাবে জেনে নেয়া প্রয়োজন।
১. যদি মুখ দিয়ে থুথুর সাথে রক্ত আসে তবে দেখতে হবে, রক্তের অংশ
বেশী, না থুথুর অংশ বেশী। যদি রক্তের পরিমাণ থুথুর চেয়ে বেশী বা সমান সমান
হয়, তবে অজু ভেঙ্গে যাবে।
রং দেখে পরিমাণ বুঝে নিতে হবে। রং লাল হলে
অজু চলে যাবে। হলুদ হলে যাবে না।
২. কোনো কিছুর আঘাতে অথবা মেছওয়াকের কারণে রক্তের চিহ্ন দেখা
গেলে অজু যাবে না, যতক্ষণ না রক্ত প্রবাহিত হয়ে মুখ থেকে বের হয়ে আসে।
৩. অট্টহাসি হাসলে অজু নষ্ট হয়।
তায়াম্মুমও নষ্ট হয়। কিন্তু গোসলের
পবিত্রতা নষ্ট হয় না।
৪. স্ত্রী পুরুষকে অথবা পুরুষ স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু নষ্ট হয় না।
৫. নিজের অথবা অন্যের লজ্জাস্থানে হাত পড়লে অজু নষ্ট হয় না।
গোসলের পর কাপড় বদলাবার সময় যদি হাত লজ্জাস্থান স্পর্শ করে, তবে অজু
যায় না।
লজ্জাস্থানের প্রতি নজর পড়লেও অজু যায় না।
৬. যে ব্যক্তির অজু ছিলো হঠাৎ সন্দেহ হলো যে, অজু আছে কিনা, তবে ঐ
ব্যক্তির অজু শুদ্ধ আছে বলে ধরে নিতে হবে।
৭. প্রথম অবস্থায় অজু ছিলো না, পরে অজু করে নিয়েছে কি না- এ বিষয়ে
সন্দেহের উদ্রেক হলে অজু নেই ধরে নিতে হবে।
অজু তিন প্রকার। যেমন-
১. ফরজ অজু- নামাজ পড়ার জন্য যে অজু করা হয়।
২. ওয়াজেব অজু- যা কাবা শরীফ তওয়াফ করার জন্য করা হয়।
৩. মোস্ত াহাব অজু- যা শরীর পবিত্র রাখার জন্য করা হয়।
বে-অজু অবস্থায় কি কি করা যায় না, সে সম্পর্কে কিছু জ্ঞাতব্য বিষয় নিচে বর্ণনা করা হলো।
১. বে-অজু অবস্থায় কোরআন শরীফ অথবা ছিপারা স্পর্শ করা মাকরূহ তাহরিমী (অত্যন্ত অপছন্দনীয়)।
২. বিনা অজুতে কোরআনের আয়াত লেখাও মাকরূহ।
৩. নাবালক ছেলে মেয়েদেরকেও অজু সহকারে কোরআন শরীফ অথবা ছিপারা স্পর্শ করার শিক্ষা দেয়া উচিত।
৪. হাদিস, তফসীর, ফেকাহ্ এবং তাসাওয়ফের বইও অজু সহযোগে স্পর্শ
করা ভালো।
৫. পেশাব পায়খানার পর অথবা বায়ু নির্গত হলে অথবা ঘুম থেকে উঠলে
অজু করে নেয়া ভালো, কিন্তু না করলে কোনো গোনাহ্ হবে না।
ধন্যবাদ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।