ধংসের দ্বারপ্রান্তে সভ্যতা
দেলোয়ার হোসেন সাঈদী: গনতন্ত্র যদি হারাম হয় সরকার পরিবর্তনের পদ্ধতি কি? কি ভাবে সরকার পতন হবে? কি ভাবে আর এক সরকার আসবে, সরকারে যাব কেমনে? সরকার পরিবর্তনের, সরকারে যাওয়ার পদ্ধতি কি? গনতন্ত্র যদি হারাম হয়, আল্লাহ্ তাআলা বলছেন: ‘পরামর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করা আল্লাহ্র হুকুম’ এটাই গনতন্ত্রের ইঙ্গিত, গনতন্ত্র হারাম কইরা নিজেকে জাহান্নামের জন্য তৈরি করেছে।
মতিউর রহমান মাদানী:
১. তার(সাঈদী) দাবি হচ্ছে সরকার পরিবর্তন করা।
২. সরকার পতন ঘটানো।
৩. ক্ষমতায় যেতে আকাঙ্ক্ষিত।
৪. যারা গণতন্ত্র হারাম করে তারা জাহান্নামে যাবে।
সরকার পতন ঘটানোর নাম ইসলাম নাকি সরকার সংশোধনের নাম ইসলাম। ইসলাম সরকার পতন ঘটানো শিক্ষায় না। ইসলাম সরকার পরিবর্তন করা শিক্ষায় না। ইসলাম শিক্ষায় সরকারের সংশোধন করা, তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী হওয়া।
হাদীসটি বুখারী, মুসলিমে রয়েছে: নবী করীম (সা একবার আমাদের ডাকলেন।
তারপর আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সা এর সাথে শপথ করলাম। যেসব শর্ত রাখলেন শপথে, যার উপর আমরা শপথ করলাম রাসূলুল্লাহ্ (সা এর সাথে। তাতে ছিল, মুসলিম নেতার কথা শুনব এবং আনুগত্য করব। সুখের সময় এবং খারাপ সময়। আমাদের থেকে অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও আনুগত্য করব।
আল্লাহ্ যাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিব না। যতক্ষণ পর্যন্ত না স্পষ্ট কুফরি দেখবে।
ইসলামের বিধান হচ্ছে শুনা এবং আনুগত্য করা। ইহুদীরা এর বিপরীত, নবী গণকে বলতেন তোমার কথা শুনলাম কিন্তু মানিনা তোমার কথা। সুতরাং মুসলিম, কুরআন-সুন্নাহ মানবে কিন্তু সরকারের কথা মানবে না, জায়েজ নয়।
আজকে যারা বোমা বাজি করছে, যারা অস্ত্র ধারন করছে, তারা ফাসেক (পাপী) নেতৃত্বের কাছ থেকে হোক আর সৎ হোক, তাদের কাছ থেকে নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিতে চাইছে। এই রকমই যারা বলে গনতন্ত্রের মাধ্যমে পতন ঘটাব, পরিবর্তন করব সরকার। নবী (সা বলেছেন: ‘আল্লাহ্ যাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিব না’। তাহলে কি করতে হবে, ভুল করছে তো শাসকরা, ফাসেকি কাজ করছে, মুসলিম কিন্তু ফাসেকি কাজ করছে, মদ পান করছে, হারাম কাজ করছে, যুলুম-অত্যাচার করছে জন সাধারনের উপর, স্বজন প্রীতি করছে। কি করতে হবে, নবী (সা বলেছেন: তাদের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া যাবে না, তাদের পতন ঘটান যাবে না, না অস্ত্র ধারন করে, না এই পদ্ধতির কথা যা সাঈদী সাহেব বলছেন।
যতক্ষণ পর্যন্ত না স্পষ্ট কুফরি দেখবে। আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে সেজদা করছে, নামায তারা পড়তে বাধা দিছে, নামাযের বিরুদ্ধে বলছে, ইসলামের বিরুদ্ধে বলছে, কুরআনের বিধানের বিরুদ্ধে বলছে, এ হচ্ছে স্পষ্ট কুফরি। কিন্তু কুরআনের আইনের বাস্তবায়ন করতে পারছে না, জিজ্ঞাসা করলে বলছে পারছি না তাহলে কাফের নয়, ফাসেক(পাপী)। এই ফাসেক অবস্থায় তাদের কাছ থেকে নেতৃত্ব ছিনিয়ে নেওয়া যাবে না। তাদের পতন ঘটান যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না স্পষ্ট কুফরি দেখবে।
তাহলে ফাসেক নেতাদের সাথে কি করবেন? উপদেশ দেবেন এবং সংশোধনের চেষ্টা করবেন। সংশোধনের জন্য উত্তম পন্থা অবলম্বন করতে হবে যে ভাবে সংশোধন হতে পারে।
কিন্তু গনতন্ত্রের প্রথম শর্ত যে Opposition থাকবে। কিন্তু ইসলামে বিরোধীদল থাকা নেই। পাঁচ বছর পরপর দল পরিবর্তন ইসলামে নেই।
ইতিহাসে গনতন্ত্র আব্রাহাম লিংকনের পূর্বে কোনো মুসলিম দেশে পাবেন না। প্রথম তৈরি করল ইহুদী, পরে দিল খ্রিস্টানদেরকে, তারপর তাদের কাছ থেকে ধার করে নিয়ে আসল মুসলিম ফাসেক শাসকরা। গনতন্ত্র ইসলামে নেই।
নবী (সা বলেছেন: আমার পরে খেলাফত থাকবে ৩০ বছর, এরপর খেলাফত রাজতন্ত্রে পরিবর্তন হবে।
পরামর্শ মানে কি গনতন্ত্র? নাকি দুটোতে আসমান আর জমিনের পার্থক্য আছে? পার্থক্যটি খুব সংক্ষেপে বুঝাচ্ছি।
আপনার ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য কি সবার সাথে পরামর্শ করবেন? নাকি আপনার যে যোগ্য ব্যক্তি, আপনার আব্বার সাথে, না আপনার আম্মার কাছে, আপনার ওস্তাদের কাছে, নেক লোক বা সৎ লোকের কাছে, জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে পরামর্শ করবেন, ঠিক না? পরামর্শ তাহলে রাস্তাঘাটে যাকেই পাবেন তার কাছেই পরামর্শ নেওয়া শুরু করবেন এই কাজ কোন আধা পাগলও করে না। করবে?
তাহলে আল্লাহ্ পাক কি করতে বলেছেন? পরামর্শ নিতে বলেছেন। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সূরা আছে। তাতে আল্লাহ্ বলেছেন: মুসলিমদের কাজ কর্ম সম্পাদিত হবে পরামর্শ ভিত্তিক… তাহলে পরামর্শ বুঝাগেল অযোগ্য লোকদের কাছে নিজের ব্যক্তি জীবনের ক্ষেত্রেও নেয় না, পরিবারের ক্ষেত্রে? ভাই আমার স্ত্রী খারাপ তালাক দিব না রাখব? এই পরামর্শ কি যার তার কাছে নিবেন? গ্রামের যাকে তাকে ধরবেন আর বলবেন পরামর্শ দেন ভাই আমার স্ত্রীকে রাখব, না রাখব না? সবার কাছে পরামর্শ নিবেন? না কোন আলেমের কাছে, জ্ঞানীর কাছে, যে পরামর্শ আপনার চাইতে ভাল দিতে পারবে, যে আপনাকে ভাল দিক নির্দেশনা দিবে তাদের কাছে নিবেন? চিন্তা করুন? যোগ্যদের কাছে পরামর্শ নেওয়া হয়, সবার কাছে পরামর্শ নেওয়া হয় না।
পক্ষান্তরে গণতন্ত্রে Election –এ ভোট সবার কাছে নেওয়া হয়।
সৎ লোকের একটি ভোট, জালেম, খুনি, সন্ত্রাসী, পাপী, বেনামাযি, কাফের, ইহুদী, খ্রিষ্টান, নাস্তিক, তসলিমা নাসরিন, সবার ভোটের মূল্য সাইদি সাহেবের ভোটের সমান। ঠীক না? তাহলে এটা কি ইসলাম সমর্থন করে? ইসলাম সমর্থন করে না, ইসলাম পরামর্শের সুরা (পরামর্শের কমিটি) সমর্থন করে।
এখানে আরও কিছু কথা বলেদি, কারন সাইদি সাহেব সৌদী আরবের সরকারের বিরুদ্ধে কিছু কথা বলেছে। সুরা (পরামর্শের কমিটি) এই সৌদী আরবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে শুনে রাখুন। সৌদী আরবে সুরা কাউন্সিল আছে যার নাম মজলিসে সুরা।
আর Chief –কে জানেন? টাই লাগানো লোকেরা? যারা নামাজ পরে না তারা? যারা ইউরপ-আমেরিকা থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রী নিয়ে এসেছে তারা? না… ইসলামিক রাষ্ট্র যে সৌদী আরব তার প্রমান শুনেন, ইমামে হারাম এবং হারেমাইন Affairs যিনি Chief রাঈস এবং তিনি হচ্ছেন মজলিসে সুরার Chief। তার নাম সলেহ্ বিন আব্দুল্লাহ। জুমার দিন বেশির ভাগ তার খুতবা হয়। তিনি মসজিদে হারামের একজন ইমাম, তিনি হচ্ছেন মজলিসে সুরার প্রধান। তিনি ইসলামিক Studies এর উপর Doctorate করা লোক।
একজন আন্তর্জাতিক আরবি ভাষার সাহিত্যিক।
তাই সবার ভোট সমান এর নাম পরামর্শ নয়, এ হচ্ছে কুরআনের বিকৃতি, এটি হচ্ছে কুরআনের অপব্যাখ্যা। আমাদের দেশের অন্ধ লোকদের বলা হচ্ছে সুরার (পরামর্শের কমিটি) নাম গনতন্ত্র, সুরার (পরামর্শের কমিটি) নাম গনতন্ত্র নয়।
(শায়খ মতিউর রহমান মাদানীর লেকচার অবলম্বনে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।