আজ একটা বিশেষ দিন। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)- মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে মোহনীয় নাম, মোহনীয় চরিত্রের এই মহান পুরষের জন্ম এবং একই সাথে প্রস্থান দিবস।
অনেকের মত আমার জন্যও দিনটি তাৎপর্যের। অনেকের মতো আমিও তার প্রতি প্রেমের মিছিলে মিশে ছিলাম। আছিও।
তবে দিন দিন আমি এ মিছিল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। সেটা আমার লোক দেখানো আধুনিকতার জন্যও হোক অথবা হোক ইদানিংকালের নবী প্রেমিকদের দেখে। ভয়ে।
আধুনিকতার প্রসঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের একটা কথাই তুলে দেই। এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমরা কোনো উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে একজন সক্রেটিস বা কাল মার্কসের নাম বলতে যতটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করি, ততটা একজন ইমাম গাজ্জালীর নাম বলতে করিনা।
কথা খুবই সত্য। কারন এই অর্ধশিক্ষিত সমাজ এখন ধর্ম বলতেই মৌলবাদীতা ধরে নেয়। যা অত্যন্ত বেদনার বিষয়।
আর, মোহাম্মদের ইদানিংকালের প্রেমিক? বলা যায়, তার প্রেমিক (আশেকান) হবার জন্য মোটামুটি যুদ্ধ চলে। কিছু তথাকথিত পীরেরা যেন তার প্রেমিক স্বীকৃতি দেবার 'এজেন্টশীপ' নিয়ে নিয়েছেন।
আমরা যারা এসব পীরকে 'পুছিনা' তারা ক্রমশ অসহায় হয়ে পড়ছি।
তাই আক্ষেপ চলে আসে অজান্তেই, হে রাসূল আমাদের বোধহয় আর হলোনা।
প্রচার প্রচারনার বহর দেখে আমি স্তম্ভিত হই। ব্যানার, লিফলেট, মিছিল, শোভাযাত্রা নিয়ে সেকি ভয়ংকর অবস্থা! রাস্তায় মিছিলে গোলাপজল ছিটানো হচ্ছে জগ, বালতি দিয়ে। একজন পীর সেই মিছিলের অগ্রভাগে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন।
কোনো পীরের আবার বিশাল বিশাল ব্যানার। যে ব্যানারে উপরে ছোট করে মোহাম্মদের প্রসঙ্গ ছোট করে লিখে বাকী পুরোটুকুই থাকে ওই পীরের গুনকীর্তন।
তাই আক্ষেপ আটকানো সম্ভব হয়না, হে রাসূল আমাদের বোধহয় আর হলোনা।
সেই দলের একজনের সাথে আমারও পরিচয় ছিল। তার কথা একটু বলি।
সে ভেতরে এক ধরনের সফটওয়্যার ইনস্টলড করে চলে ( আমার যদি ভুল না হয় এ সফটওয়্যার অনেকের মাঝেই থাকে)। সবসময় একই কথা বলে। কোনো কিছু মানেনা। বুঝতে চায়না। আশ্চর্যের বিষয়, সে না পড়ে নামায, না করে রোজা।
কসম, আমি মিথ্যা বলছিনা। তার ধারনা, পীর তাকে পার করবে।
একদিন সে আমার বাসায় এসেছে, আমি তাকে ধরেছিলাম তার পীরপূজা নিয়ে। সেকি ভয়ংকর চেহারা হয়েছিল তার। আমার সাথে এতো ভালো সম্পর্ক থাকার পরও আমি সেদিন তাকে একরকম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
তার যেহেতু সফটওয়্যার ইনস্টলড থাকে, তাই তাকে বোঝাতে না পেরে কথাবার্তা উপসংহারে বলেছিলাম, ভাই আমি আল্লাহরে বিশ্বাস করি। আল্লাহ আমাকে তার কাছে যাওয়ার সহজ রাস্তা দিয়েছেন। আমি কারো ঘাড়ে পাড়া দিয়ে আল্লাহর কাছে পৌছতে চাইনা।
কথাটা শেষ হওয়া মাত্র সে আমার কথার ভাবানুবাদ না করে আক্ষরিক অনুবাদ করে জ্বলে ওঠল। সে ভয়ংকর চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকালো।
বলল, ইশতিয়াক আপনে ধ্বংশ হইয়া যাইবেন। আপনে আমার বাবার ( পীরের) ঘাড়ে পাড়া দিতে চাইছেন। কথা ফিরায়ে নেন।
আমি তাকে অনেক বোঝাতে চাইলাম। আমি এইটা বুঝাইনি, আমি বলতে চাইছি আল্লাহকে পাওয়ার জন্য আমার কোনো ভায়া প্রয়োজন নেই।
তাকে বেশ কিছুক্ষন বোঝালাম। সে বুঝলনা। তার একই কথা, ইশতিয়াক আপনে ধ্বংশ ...। আপনে আমার বাবার...। কথা ফিরায়ে ...।
আমি শেষ পর্যন্ত ব্যার্থ হলাম এবং বিরক্ত হয়ে তাকে পাল্টা জানিয়ে দিলাম, যান আপনার বাবারে গিয়া বলেন আমারে আমারে ধ্বংশ কইরা দিতে। চল্লিশ দিন সময় দিলাম।
তো এই সব মানুষ গুলোইনবীর প্রেমিক হয়ে দাবড়ে বেড়াচ্ছে। সাধারণ মুসলমানরা একরকম অসহায় হয়ে পড়ছে। ইসলাম ধর্মের নামে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি।
কিছুদিন আগেও চলেছে এসব নিয়ে দুই পীরের মধ্যে সংঘর্ষ। রক্তয়ী সংঘর্ষ। হায় প্রেমিক।
যে মোহাম্মদের জীবনাদর্শে মধ্যে সামান্য ত্রুটি নেই আর প্রেমিকেরা কি করছে?
পবিত্র মেরাজে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে মোহাম্মদ (সাঃ) জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে আল্লাহ তুমি তো মুসাকে এমন জিনিস দিয়েছ সে যদি লাঠি দিয়ে আঘাত করলে সমুদ্রের পানি দ্বিখন্ডিত হয়ে যেত, ঈসা কোন মৃত ব্যাক্তির গায়ে হাত রাখলে সে জীবিত হয়ে যেত। অন্ধও চোখে দেখত।
আমাকে কি দিয়েছ? আল্লাহ উত্তরে বলেছিলেন, হে মোহাম্মদ আপনাকে দিয়েছি এর চেয়ে অনেক বড় কিছু। কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত পৃথিবীতে কেউ আপনার নাম নিলে তার মন ততক্ষনাৎ নরম হয়ে যাবে।
যে মোহাম্মদকে আল্লাহ সর্বোচ্চভাবে সন্মাণিত করেছেন, যাকে নিজের বন্ধু স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাকে নিয়ে এইসব বন্ধ হওয়া জরুরী।
শুধু ইসলাম ধর্মেও নবী নয়, শুধু মুসলমানদের পথপ্রদর্শক নয়।
বিশ্বমানবতার অকৃত্রিম এই মহাপুরুষের জীবনাদর্শকে সার্বজনীন করে প্রচার করা হোক।
কারণ এই বিশ্বভূখন্ডে এতো শুদ্ধতা নিয়ে তার আগে কেউ আসেনী। আর কেউ আসবেওনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।