কেউই চির কাল বেঁচে থাকবে না, তাই কিছু করতে করতে অথবা করার চেষ্টায় মৃত্যুবরণই শ্রেয়। বাংলাদেশের উদ্ভবই দ্বি-জাতি তত্ত্ব নামের এক ঘৃণ্য অবাস্তব আর বর্ণবাদী মতবাদের অসারতা প্রমাণ করেই। সাম্প্রদায়ীকতা অথবা প্রতিক্রিয়াশীলতা বাংলাদেশের সংস্কৃতি হতে পারে না।
তবে আমরা উল্টোও যে দেখিনি তা নয়। বাবরী মসজিদ ভাঙার সময়, ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর, কয়েক সপ্তাহ আগে হাটহাজারীতে এবং এখন সাতক্ষীরায়।
আরও উদাহরণ আছে, যা আমার জানা নেই বা প্রচার মাধ্যম প্রকাশ করেনি।
আমরা, সকল শান্তিপ্রিয় মানুষেরা এমন ঘটনা ঘটুক তা চাই না। কিন্তু তারপরও ঘটে, কারণ আমরা চুপ করে থাকি। হ্যা, এটাই মূল কারণ। ভাল মানুষেরা চুপ করে থাকলেই প্রতিক্রিয়াশীলেরা সক্রিয় হয়।
একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় ধর্মানুভূতির বা তার আঘাত লাগা সংক্রান্ত ঘটনার অসারতা। প্রত্যেক ধর্মই অন্য ধর্মের বিরোধী, একে বারে শেকড় থেকে পাতা পর্যন্ত। প্রত্যেক ধর্মেই আছে- অন্য ধর্মের অনুসারীরা ঐ প্রথমোক্ত ধর্মের অনুসারীদের চেয়ে হীন এবং পরকালে শাস্তিযোগ্য। এক ধর্ম ঠিক ঠাক মানলেই অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি অমানবিক মনোভাব পোষণ করা হয়েই যায়, স্বাভাবিকভাবে।
তাই যারা কড়াকড়ি ধর্মের পথে চলে তারা যদি বহুধর্মের সমাজে বাস করে তবে তার ধর্মানুভূতি পদে পদে আঘাত পেতে বাধ্য।
এখন, সবাই সমান ধার্মিক নয় এবং অধিকাংশ মানুষের সার্বজনীনতাবোধ দলগত ধর্মবোধের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী। এটিই সুস্থ সমাজের ভিত্তি, অসাম্প্রদায়ীক বাংলাদেশের ভিত্তি।
কিন্তু এই যারা ধর্মও মানেন আবার অন্যধর্মের প্রতিবেশীকেও ভালবাসেন, অনেক সময় তারাও দেখা যায় চুপ করে থাকেন যখন ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে ঐ প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগায় ধর্মরক্ষকের দল, শারিরীক নির্যাতন করে, দেশ ছাড়া করে। সবাই বোঝে যে ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগা এক কথা আর খুন, ধর্ষণ, জ্বালানো পোড়ানো আরেক কথা। কিন্তু মানবিক আবেদন তখন ধর্মের ছত্রাকের নিচে হারিয়ে যায়।
এতই যদি প্রতিশোধবোধ জাগে তাহলে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের উত্তরে ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা হোক। না কি খুন, ধর্ষণ, জ্বালানো পোড়ানো না হলে ধর্মানুভূতি ঠিক মতো রক্ষিত হয় না ?
আর প্রথমেই যখন ধর্মানুভূতিতে আঘাত আসে, সর্বশক্তিমান তখন বোধহয় সর্বংসহ হয়ে পড়ে, আর যখন প্রত্যাঘাত করার জন্য উন্মত্ত আক্রোশ শুরু হয় তখন সর্বশক্তিমান অস্তিত্ত্বহীন হয় পড়ে?
আর কত কাল?
প্রসঙ্গত:
১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৩ এপ্রিল বিক্ষোভ সমাবেশ (প্রথম আলো)
২. সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৩ এপ্রিল সারাদেশে বিক্ষোভ(ইত্তেফাক) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।