টিএফআই সেলে ডিএডি তৌহিদ ও রহিমের স্বীকারোক্তি
বিডিআর সদর দফতরে ঢাকা সেক্টরের সহকারী পরিচালক (এডি) আব্দুল আউয়ালকে হত্যা করে বিদ্রোহী জওয়ানরা ডিএডিদের নেতৃত্ব গ্রহণ করে। সদর দফতরের ৪টি ব্যাটালিয়নের ১৪ জন ডিএডি’র মধ্যে ১০ জন ডিএডি পিলখানা হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব দেয়। তারা স্ব স্ব ইউনিটের বিডিআর সদস্যদেরকে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করার নির্দেশ দেন। টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে ডিএডি তৌহিদুল আলম ও ডিএডি আব্দুর রহিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক শাকিল আহমেদের হাতে থাকা ছড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সিপাহী আল মামুন ও নায়েক সুবেদার ওয়ালিউল্লাহকে গতকাল রবিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে সিআইডি। অপরদিকে সাভারের আশুলিয়া ও ধানমন্ডির দারুস সালাম থানায় গ্রেফতার হওয়া ৯২ জন বিডিআর সদস্যকে পিলখানা হত্যা ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গতকাল গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩৪ জনে। অন্যদিকে, ছবি দেখে সনাক্ত করা প্রায় ১২০ জন বিডিআর সদস্যের মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৫ জন সদস্য পলাতক রয়েছে। বাকি সদস্যরা বিডিআর সদর দফতরে যোগ দিয়েছে।
তারা গত ২ মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে সদর দফতরে এসেছে। তাদেরকে পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার করা হবে।
সূত্র জানায়, সংঘটিত ঘটনার সময় বিডিআরের সদস্যরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা সেক্টরের সহকারী পরিচালক আব্দুল আউয়ালকে হত্যা করে। এ ব্যাপারে ডিএডিদের আগেই পরিকল্পনা ছিল বলে ডিএডি আব্দুর রহিম জানিয়েছে। সহকারী পরিচালক পদটি বিডিআরের আভ্যন্তরীণ পদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদ।
ঢাকা সেক্টরের সহকারী পরিচালকের সঙ্গে হামলার ব্যাপারে তারা কোন যোগাযোগ করতে পারেনি। এ কারণে আগেই পরিকল্পনা নেয়া হয় যদি প্রতিবাদ করে তাহলে সহকারী পরিচালককে জিম্মি করা হবে। কিন্তু বিডিআরের বিদ্রোহী সদস্যরা তাকে হত্যা করে। যে মুহূর্তে দরবার হলে বিদ্রোহীরা বিদ্রোহ করে তখন ডিজি সদস্যদের দাবির বিষয়ে এসএসএমকে (সেন্ট্রাল সুবেদার মেজর) দায়িত্ব দেন। কিন্তু বিডিআর সদস্যরা এসএসএম নূরুল ইসলামকেও হত্যা করে।
জিজ্ঞাসাবাদে ডিএডি তৌহিদ ও ডিএডি আব্দুর রহিম জানিয়েছেন হামলার পরিকল্পনা মূলত ডিএডিরাই করেছে।
গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ডিএডি তৌহিদ জানিয়েছেন, তার নেতৃত্ব নেয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করে। তবে দরবার হলের ভেতরে কিভাবে ঘটনার সূত্রপাত ঘটবে তা তার জানা ছিল।
এদিকে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিডিআর সদর দফতর থেকে বাহিরে ও ভেতরে আসা-যাওয়ার যে তালিকা রয়েছে তাতে গরমিল ধরা পড়েছে।
অনেকেই গভীর রাতে বিডিআর সদর দফতরে প্রবেশ করেছে। তবে এরা বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে ভেতরে প্রবেশ করেছিল কি না তা গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে।
সিআইডি’র সূত্র জানায়, পিলখানা হত্যাকান্ডের পর গ্রেফতারকৃত আল মামুন ও ওয়ালিউল্লাহ পালিয়ে যায়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তারা পিলখানায় যোগদান করে। ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে তাদেরকে সনাক্ত করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এর মধ্যে আল মামুনের দেয়া তথ্য মতে জওয়ান ব্যারাক থেকে উদ্ধার করা হয় মহাপরিচালকের হাতের লাঠি।
আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, নায়েক সুবেদার ওয়ালিউল্লাহ ও সিপাহী আল মামুনকে গতকাল সিআইডি ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠায়। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম আব্দুর রহিম ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শুনানিকালে আসামিদের পক্ষে কোন আইজীবী ছিল না।
অপরদিকে ২৭ ফেব্রয়ারি পিলখানা থেকে পালাবার সময় রাজধানীর দারুস সালাম পুলিশ ২০ জন বিডিআর সদস্যকে গ্রেফতার করে। আশুলিয়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করে ৭৪ জনকে। এদের মধ্যে সাভারের নবীনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক দুই বিডিআর সদস্য জুয়েল মিয়া ও খায়রুল ইসলামকে ৪ মার্চ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। একই দিন রিমান্ডে নেয়া হয় ডিএডি তৌহিদসহ ৫ জনকে। এই ৭ জনকে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
৭ ফেব্রয়ারি গ্রেফতার দেখানো হয় ৬ জনকে। এরা হচ্ছে নায়েক নূরুল ইসলাম, বিডিআরের পেইন্টার ইয়াছিন হোসেন, সিপাহী নজরুল ইসলাম, শাহীন, সোহেল চৌধুরী ও খায়রুল ইসলাম। সোহেল চৌধুরী ও খায়রুল ইসলাম বিডিআর সদস্য কিনা তা নিশ্চিত করা যায়নি।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সংশ্লিষ্ট পুলিশের রেকর্ড কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৪ মার্চ ডিএডি তৌহিদসহ ৭ জন, ৫ মার্চ ২২ জন, ৬ মার্চ ৭ জন , ৭ মার্চ ৬ জন ও গতকাল ৯২ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।