আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শোকাহত জাতিসত্তার অশ্রু , সংহতির রুদ্র প্রত্যয়



শোকাহত জাতিসত্তার অশ্রু , সংহতির রুদ্র প্রত্যয় ফকির ইলিয়াস -------------------------------------------------------------- এমন মর্মান্তিক ঘটনা কল্পনাও করা যায় না। কি নৃশংস মানসিকতা, কি জঘন্য পরিকল্পনা। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ বাংলাদেশ ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক দিন। বর্বরতম দিন। এমন খুন, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ একাত্তরে ঘটেছিল এই বাংলার মাটিতে।

হায়েনারা ছিল পাকিস্তানি। এবার স্বদেশী দুর্বৃত্তরাই তা করেছে। ঘরে দরজা ব করেও প্রাণে রক্ষা পাওয়া যায়নি। তারা কপাট ভেঙেছে। লুটপাট করেছে স্বর্ণালঙ্কার, অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র।

কোন দাবি আদায়ের জন্য এমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ কি কেউ করতে পারে?­ না পারে না। বিডিআরের অনেক দাবি ছিল। সেকথা চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডিজি মে. জে. শাকিল আহমেদও বলেছিলেন। সে সাক্ষাৎকার আমি দেখেছি। এক্সক্লুসিভ ওই সাক্ষাৎকারে তিনি অনেক কথা বলেছিলেন।

তার দাবি ছিল সব সৈনিকের পক্ষে। দাবি পরণের কাজ তো তার ছিল না। তিনি দাবি জানিয়েছিলেন সরকারকে। আর সরকার তা পরণ করার মালিক। সে সময় দেয়া হয়নি।

ডিজিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। না দাবি-দাওয়ার জন্য এমন হত্যাযজ্ঞ, তা আমি বিশ্বাস করি না। কেউ বিশ্বাস করছে না। এর নেপথ্যে অন্য কারণ ছিল। অন্য ষড়যন্ত্র ছিল।

যা ছিল সুদরপ্রসারী। ঘাতকরা তারই অংশ বিশেষ বাস্তবায়ন করেছে নৃশংসভাবে। জাতি হারিয়েছে তার বীর সন্তানদের। পিলখানার হত্যাযজ্ঞ কাঁপিয়ে দিয়েছে বাংলার মাটির ভিত। এতো শোক কীভাবে বইবে জাতি? কীভাবে বইবে এই মৃত্তিকা? টিভিতে প্রোগ্রাম দেখেছি তিনদিন।

শোকে মুহ্যমান জাতি। টিভির পর্দায় চোখ রাখলেই অশ্রুর বন্যা নামে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছি বার বার মনের অজান্তেই। স্বজনরা কাঁদছে। প্রিয়তমা স্ত্রী কাঁদছেন তার স্বামীর জন্য।

সন্তান পিতার জন্য। মা-বাবা পুত্রের জন্য। আর এই বাংলাদেশের মাটি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকেছে তার সন্তানদের বুকে ধারণ করার জন্য। হে পাষণ্ড! হে নির্মম বিবেক! তুমি ধ্বংস হয়। তুমি নির্বাসিত হও চিরতরে।

এমন ধ্বংসলীলা মানুষ আর দেখতে চায় না। পিলখানা হত্যাযজ্ঞ নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে তিনটি। সবাই কাজ করছেন। সহসাই এর রিপোর্ট জাতি জানতে পারবে­ আশা করা যাচ্ছে।

কিন্তু কথা হচ্ছে, যারা এর নেপথ্যে, সেসব গডফাদাররা ধরা পড়বে তো? পিলখানায় ওইদিন বহিরাগত খুনিরা ঢুকেছিল এটা প্রায় নিশ্চিত। বিডিআরের কিছু বিপথগামী সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজশে তারা সেখানে ঢুকেছিল। প্রত্যক্ষদর্শী বিভিন্ন অফিসারের ভাষ্য অনুযায়ী, একটি পিকআপ ঢুকেছিল অস্ত্রসহ। ছিল অস্ত্রের বাক্স। তা সবাই আমরা টিভিতে দেখছি, শুনছি।

এসব ভাষ্য বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ঘাতকদের আচরণ সৈনিক সুলভ ছিল না; কিংবা ঘাতকরা প্রায় সবাই ছিল বয়সে কম, খাটো প্রকৃতির’­ এসব বক্তব্য জোর দিয়ে খতিয়ে দেখা দরকার মনে করি। অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, নতুন পোশাক তৈরি কারা করেছিল? কীভাবে? সন্দেহ নেই, একটি চক্র বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেয়ার মতলবে মেতেছি। বিডিআর বনাম সেনাবাহিনী মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে তারা ভাঙতে চেয়েছে আমাদের সশস্ত্র শক্তির মেরুদণ্ড। যেসব মেধাবী কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে এরা ছিলেন এই দেশ গঠনে নিবেদিত প্রাণ।

দেশের সব শক্তি বিনষ্ট করার এই পাঁয়তারা তাই ভেবে দেখার মতো। দেখতে হবে এদের উৎস কোথায়? পিলখানা ঘটনার পর ‘বিডিআরের’ নাম বদল করে দেয়ার কথাও উঠেছে আমরা পত্রপত্রিকায় দেখছি। এমন রক্তপাতের পর সরকার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে বিডিআরের সব সদস্য কিন্তু আপরাধী নয়। যারা এটি করেছে তারা পথভ্রষ্ট, বিপথগামী এবং ষড়যন্ত্রকারী।

একই কায়দায় জাতির জনক নিহত হন সপরিবারে কিছু বিপথগামী সৈনিকের হাতে। পনেরোই আগস্টের সেই কালো রাতের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাম পরিবর্তন না করেই ব্যাপক উদ্যম, সাহসে ও শক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। সুনাম কুড়িয়েছে দেশে-বিদেশে। বিডিআরও সেই সুনাম বয়ে চলেছে দীর্ঘদিন থেকে। সরকার চাইলে নাম পরিবর্তন করতেই পারে।

তবে তার চেয়ে এই বাহিনী আরও অধিক কর্মউজ্জ্বল, জাতিশীল এবং সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা অধিক জরুরি মনে করি। ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যা ঘটেছে এর শিকড় উন্মোচিত হওয়া উচিত। এমন ঘটনা গোটা জাতিকে শঙ্কিত এবং অরক্ষিত করে তুলেছে। এমন দীর্ঘ পরিকল্পনার কথা দেশের শীর্ষ গোয়েন্দারা কেন জানতে পারলেন যা­ সে দাবি উঠছে বারবারই। ঘাতকরা কাদের কাছ থেকে মদদ পেয়েছে, কাদের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলেছে, কি কথা হয়েছে­ তা খতিয়ে দেখলে মুখোশ উন্মোচন সহজ হবে বলে মনে করি।

মনে রাখতে হবে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্খা এফবিআই, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড, অনুসানের পথ বাতলে দিতে পারবে। তবে স্বদেশী কিংবা বিদেশী শত্রু কে বা কারা তা চিহ্নিত করতে হবে বাংলাদেশকেই। বাংলাদেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্খাগুলোকেই। ২৫ ফেব্রুয়ারির মর্মান্তিক ঘটনায় সেনাবাহিনী অপারেশন করা অপরিহার্য ছিল কিনা তা নিয়ে যুক্তিতর্ক হতেই পারে। তবে বুঝতে হবে, রাষ্ট্রের শীর্ষ নির্বাহী এবং তার পরিষদ বিচক্ষণতার সঙ্গেই পরিস্খিতি মোকাবেলা করেছেন।

সরকারি কোন গাফিলতি অধিক প্রাণহানির কারণ হয়েছে কিনা তালাশ করে দেখার সময় কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। যৌথভাবে দায় মেনেই এগিয়ে যেতে হবে সবাইকে। উপমহাদেশ এখন মৌলবাদী কালো দানবের থাবার দখলে। এই লেখাটি যখন শেষ করব তখনই দেখলাম, পাকিস্তানে নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটদল। সাতজন পুলিশ নিহত হয়েছেন।

খেলোয়াড়রা আহত হয়েছেন। বাংলাদেশে একটি মৌলবাদী চক্র হুঙ্কার দিচ্ছে­ ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেই দেখুক না। ’ এই দাবি যখন জনগণের প্রাণের দাবি তখনই পিলখানা হত্যা নতুন অনেক কথার জন্ম দিচ্ছে। জাতি সংহতি চায়। নিরপরাধকেই যেন কোনভাবেই আক্রান্ত না হন সে বিষয়টি খেয়াল রাখা বড় জরুরি এখন।

নিউইয়র্ক, ৪ মার্চ ২০০৯ ------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ৬ মার্চ ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।