আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীরার জন্মদিন (গল্প)

তাহমিদুর রহমান

বারান্দায় অনেকক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছে নীরা। খুব অস্থির লাগছে তার। আজকে নীল যখন অফিসের জন্যে বের হচ্ছে ঠিক তখনই ওর হাত থেকে একটা গ্লাস পড়ে ভেঙ্গে গিয়েছে। তখন থেকেই ওর মনটা ছটফট করছে। নীল ওকে বলেছে, -অ্যারে একটা গ্লাসই তো।

এতে এত চিন্তার কি আছে? নীরা বলেছিল, -তাই বলে তোমার বের হবার সময়েই অঘটনটা ঘটল? আমার খুব ভয় হচ্ছে জান? -কিসের ভয়? নীল হেসে এগিয়ে আসে। ল্যাপটপটা টেবিলের উপর রেখে নীরাকে জড়িয়ে ধরে। আঙ্গুল দিয়ে থুতনি উঁচু করে বলে, -কি হয়েছে? -কিছু হয়নি। -তাহলে যে... -আজকে অফিসে যেও না। আমার মনটা ভাল নেই।

-সেকি! এ অবেলাতে থেকে যেতে বলছ? ব্যাপারখানা কি? -ধুর। সবসময় শুধু শয়তানি... -আমি শয়তান? তাহলে তুমি কি? -শয়তানের বউ। নীরা হাসে। নীল নীরাকে চেপে ধরে ওর ঠোঁটে চুমু এঁকে দেয়। তারপর চুলগুলো কানের ওপাশে সরিয়ে দিতে দিতে বলে, -আজকে না গেলে চাকরি আর থাকবে না।

একটা জরুরী মিটিং আছে। -আচ্ছা। ঠিক আছে যাও। তবে কথা দাও আজকে তাড়াতাড়ি চলে আসবে। একদম দেরি করবে না।

নীরার কন্ঠে অনুনয় ঝরে পড়ে। নীল এবারও হাসে। বলে, -কথা দিলাম। তারপর নীল সেই যে চলে গেল এখনও আসল না। এখন বাজে রাত সাড়ে দশটা।

ও কোনদিনও এত দেরি করে না। আজ এত দেরি করছে কেন? কোন কাজে ব্যস্ত থাকলে একটা ফোন করবে তো। তা না করে, মোবাইলটাও অফ করে রেখেছে। নীরা নীলের অফিসেও ফোন দিয়েছিল। অফিস থেকে জানিয়েছে যে, নীল মিটিং শেষে সাইটে ভিজিট করতে গিয়েছিল তারপর আর অফিসে ফেরেনি।

তখন থেকে নীরার চিন্তা আরো বেড়ে গেছে। বারবার গ্লাস ভাঙ্গার কথা মনে হচ্ছে ওর। কেন যে অলুক্ষনে ঘটনাটা তখন ঘটল। ওদের বিয়ে হয়েছে মাত্র ছয়মাস। এই যুগেও যে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয় ওদেরকে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না।

তবে নীরা ছবি দেখেই নীলকে পছন্দ করেছিল। তবু কেন যেন লজ্জায় কাউকে বলতে পারেনি। অবশ্য নাও বলেনি কখনো। তারপর সামনা সামনি দেখা হল। নীল সেদিন নীরার চাইতেও বেশি লজ্জাবোধ করেছিল।

মাঝে মাঝে এ নিয়ে নীরা নীলের সাথে হাসি তামাশা করার চেষ্টা করে। এভাবেই একদিন শুভদিনে ওদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। নীরার মনে আছে সেদিন রাতে খুব বৃষ্টি হয়েছিল। নীল ওর ঘোমটা সরিয়ে দিয়েছিল। সারারাত ওরা দুজনে খুব গল্প করেছিল।

নীল এমনিতে চুপচাপ। সেদিন যে ও এত কথা কিভাবে বলেছিল, কে জানে? ভাবে নীরা। সে রাতের পর নীরাই সবসময় বকবক করে আর নীল সারাক্ষন হুঁ-হাঁ করে। মাঝে মাঝে দু’একটা কথা বলে। নীলের প্রতি নীরার একটা অভিযোগ আছে।

দেখতে দেখতে ছয়মাস পার হয়ে গেল তবু ওরা হানিমুনে যেতে পারেনি। নীরার ইচ্ছা কক্সবাজার থেকেই ঘুরে আসে। বাইরের দেশে যাওয়ার দরকার কি? কিন্তু নীল নাছোড়বান্দা। বলে, -কয়েকদিন ওয়েট কর। তোমাকে নিয়ে নেপাল বেড়াতে যাব।

-ধুর। তার চেয়ে কক্সবাজার হয়ে সেন্টমার্টিন যাই চল। -নাহ। ওগুলো আর কত দেখব? -তাতে কি? প্রতিবার গেলে মনে হয় আরেকবার যাই। -আচ্ছা কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন হয়ে নেপাল যাব।

-হুম। সময়ই বের করতে পার না আর দিল্লি হয়ে চীনে যাবার শখ। নীল হাসে। বলে, -এবারের প্রজেক্টটা শেষ হোক। তারপরেই একমাসের ছুটি নিব।

তারপর শুধুই ঘোরাঘুরি। -হুম। এ তো কবে থেকেই শুনছি। নীল নীরাকে পিছনদিক থেকে জড়িয়ে ধরে। ওর নরম কাঁধে নিজের থুতনি রাখে।

-আমাকে বিশ্বাস হয় না বুঝি? -আমি কি তা বলেছি? -তাহলে যে... -তোমাকে বলছি এই কারনে যে আমি খুব করে চাই তোমার কথা সত্যি হোক। -তাই নাকি? নীল নীরাকে নিজের থেকে ঘুরিয়ে ফেলে আর নীরা সুনীলের বুকের কাছে নাক ঘষতে থাকে। নীরা ঘড়ির দিকে তাকায়। রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গিয়েছে। এর মধ্যেই একঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে।

এখনো নীল ফিরে আসেনি। নীরার চোখ ছলছল করছে। ভাবছে, কি করবে, কাকে ফোন করবে? কেন যে আজ সকালে ওকে যেতে দিল? নীরা মনে মনে বলে, আল্লাহ তুমি ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনো। আমি কখনোই আর ওকে আমার কাছে থেকে যেতে দিব না। এদিকে নীল দশ মিনিট যাবৎ বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

বারটা বাজতে আর পাঁচ মিনিট বাকি। বারটা বাজলেই নীরার জন্মদিন। ওকে দারুন একটা সারপ্রাইজ দিবে আজ। ভাবে নীল। অফিস থেকে আসার পথে কেক কিনে এনেছে।

একটা শাড়ীও। আর কিছু কেনার সময় পাইনি নাহলে গহনা জাতীয় কোন জিনিসও কিনত মনে হয়। যদিও নীরা গহনা তেমন পছন্দ করে না। এদিক দিয়ে নীরা কিছুটা অন্যান্য মেয়েদের থেকে আলাদা। ওকে সাধারন অবস্থায় দেখলে বেশ লাগে।

নীল অস্থিরবোধ করে। এখনো বারটা বাজে না কেন? আজ সারাদিন খুব খাটুনি গিয়েছে। তবে একটা লাভ হয়েছে। ছুটি পাওয়া গিয়েছে। এবার নীরাকে নিয়ে হানিমুনটা সেরে আসা যাবে।

ভাবে নীল। নীরা শুনে যে এত খুশি হবে সে ভেবেই নীলের ভাল লাগছে। নীরা বারান্দা থেকে বেডরুমে আসে। নীলকে আবার মোবাইল করে। নীলের মোবাইল এখনো বন্ধ।

মানুষটার যে কি হল? আমার কথা কি একটুও মনে নেই? মনে মনে ভাবে নীরা। নীরার হঠাৎ কান্না পেয়ে যায়। বারটা বেজে গেল এখনো আসার নাম নেই। ঠিক এসময়ে কলিংবেল বেজে উঠে। তড়িৎ গতিতে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।

সাথে সাথে দরজা খুলে দেয়। -হ্যাপি বার্থডে টু ইউ... নীল এতটুকু বলতেই নীরা ওর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে। নীরা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। নীল অবাক হয় বেশ। জিজ্ঞেস করে, -কি হয়েছে নীরা? -সারাদিন কোথায় ছিলে? -কেন অফিসে।

-না তুমি অফিসে ছিলে না। আমি ফোন করেছিলাম। -আর বল না। সাইটে ঘুরতে ঘুরতে খুব খারাপ অবস্থা। -একটা ফোন তো করতে পারতে? তোমার মোবাইল বন্ধ কেন? -ফোন করিনি এ জন্যে সরি।

আর মোবাইল বন্ধ কারন চার্জ দিতে ভুলে গেছি। -কত সহজে বলে দিলা। আমি কত দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম জান? -কেন? সকালের সেই ভাঙ্গা গ্লাসের জন্যে। নীল হাসে। নীরা বাম হাতে দিয়ে নীলের বুকে আলতো করে বাড়ি দেয়।

তারপর সরে দাঁড়ায়। -ভিতরে চল। এবার নীরা নীলের হাতের জিনিস লক্ষ্য করে। -তোমার হাতে কি? -হ্যাপি বার্থডে নীরা। চল কেক কাটবে।

-আজকে ৩ জানুয়ারি? -ইয়েস ম্যাডাম। -আমার একদম মনে ছিল না। -হুম। মনে থাকবে কি করে? সারাদিন তো টেনশনেই ছিলে মনে হয়। -অনেক ধন্যবাদ নীল।

-হুম। রান্না হয়েছে তো? তুমি টেনশনে থাকলে আবার রান্না কর না। নীরা হাসে। -রান্না করেছি। তোমার ফেভারিট ইলিশ মাছ ভাজা।

-ওয়াও। -তুমি কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে আস। আমি খাবারের আয়োজন করছি। নীরা রান্না ঘরের দিকে যেতে থাকে। নীল বাধা দেয়।

নীরা বলে, -কি হল? খাবে না? -খাব পরে। আগে চল কেক কাটবে। -পরে কাটলে হয় না। -না হয় না। -তুমি না একটা পাগল।

-আমি পাগল? তুমি কি? -আমি পাগলের বউ। দুজনে একসাথে হেসে উঠে। নীল মোমবাতি দিয়ে কেক সাজায়। নীরা কেক কাটার ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ দেখায় না। নীল জোর করে ওকে কেক কাটায়।

জন্মদিনের উপহার দেয়। নীরা রেগে গিয়ে বলে, -তুমি খালি বাজে খরচ কর। -এটা বাজে খরচ? -নাতো কি? -বারে। আমার সুন্দরী বউটাকে একটা জন্মদিনের গিফট দিব না? তা কি হয়? -সুন্দরী না ছাই। নীল হাসে।

কাছে টেনে নেয় নীরাকে। আঙ্গুল দিয়ে নীরার মুখ উঁচিয়ে ধরে। বলে, -তুমি অনেক সুন্দর। -যাও। নীরা লজ্জা পায়।

মাথা নামিয়ে নেয়। বলে, -তোমার সাথে আজ আমার কথা বলাই উচিত না। -কেন? -তুমি আমার কথা একদম চিন্তা কর না। চিন্তা করলে অন্তত একটা খবর দিতে। সারাদিন আমি কত টেনশনে থেকেছি।

-সরি বলেছি তো। -সরি বললেই হল? -হুম। অভিমান? -হুম। -একটা খবর দিতাম। কিন্তু এখন আর বলব না।

-কি? -বলব না। -বলো। -না -আচ্ছা অভিমান তুলে নিলাম। নীল মজা পায়। তারপর খবরটা নীরাকে দেয়।

-পনেরদিনের ছুটি পেয়েছি। কালকে থেকেই আমাদের হানিমুন। -সত্যি? -হুম সত্যি। নীরা নীলকে জড়িয়ে ধরে। তারপর বলে, -আমি তোমাকে খুব ভালবাসি নীল।

-আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি নীরা। ওরা দুজন দুজনকে শক্ত করে ধরে রাখে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।