আমি অনেক ভালো...হি...হি...হি... মাসুদা লাবণী:
নীরা ছিল সদা হাস্যোজ্জ্বল একটি মেয়ে। কিন্তু তার মুখে এখন বেশি সময়ই ঘন কালো মেঘ জমে থাকে। সাধারণ প্রেক্ষাপটে মা-বাবার অনাবিল আদর আর ভালোবাসায় বেড়ে ওঠার কথা ছিল তার। এক সময় ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সুখের নীড় গড়ার স্বপ্নও ছিল। কিন্তু ভাগ্য-দেবতা সর্বদাই নীরার সঙ্গে রসিকতা করেছে।
নীরা যখন তার মায়ের গর্ভে তখন তার বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। নীরার মা গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিধাতার অমোঘ ইচ্ছায় তিনি ব্যর্থ হন। নীরাকে রীতিমতো পৃথিবীর আলো দেখাতে বাধ্য হয়েছিলেন মা। নীরা এসব তার মায়ের মুখ থেকেই শুনেছিল।
জন্মদাতা বাবাকে কখনও দেখেনি নীরা। মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বাবা আমেরিকায় চলে যান। মা বিয়ে করেন অন্য এক পুরুষকে। নীরা বেড়ে ওঠে মায়ের অনাদর আর অবহেলায়, সত্ বাবার পরিবারে।
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা তাকে কেন এত অপছন্দ করেন-এই প্রশ্ন বিদ্ধ করত নিজেকে।
এক সময় নীরা অনুভব করে তার জন্মটাই ছিল মায়ের অনিচ্ছার। এভাবেই স্কুল আর কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বড় হয়ে ওঠে নীরা।
কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ ভর্তি হয় নীরা। বুক ভরা স্বপ্ন, একদিন অনেক বড় হবে। একদিন ভালোবাসার মানুষ হবে।
মানুষটি তার জীবনের সব কষ্ট মুছে দেবে। ঘুচে যাবে না-পাওয়া আর অতৃপ্ত বাসনাগুলো। নীরা মনে মনে সেই রাজপুত্রের আগমনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গোনে।
একদিন একটা ফোন এলে নীরার বুকটা কেঁপে ওঠে। রাতে সাধারণত নীরাকে কেউ ফোন দেয় না।
ফোন করার মতো কেউ নেই বললেই চলে। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করে সে। অচেনা নাম্বার। ওপাশ থেকে ‘হ্যালো’ বলতেই নীরার মনটা অদ্ভুত এক ভালো লাগার আচ্ছন্নতায় ভরে ওঠে। ওপাশের কণ্ঠস্বরটি এত মধুর, ভরাট আর মোহনীয় যে নীরা নিজেকে হারিয়ে ফেলে অচেনা এক রাজ্যে।
অপর প্রান্তে যেন তার স্বপ্নের রাজপুত্র দাঁড়িয়ে। নীরার মনে নানা প্রশ্ন উঁকি দেয়। কথোপকথনের সময় উঁকি দেওয়া নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে। সত্য-মিথ্যা জানার চেয়ে কৌতূহল বাড়ে কয়েকগুণ। নীরা আটকে যায় অচেনা এক যুবকের প্রেমের ফাঁদে।
এক পর্যায়ে দেখা হয় ওদের। নীরা তার প্রেমিক পুরুষটিকে দেখে অভিভূত হয়। কল্পনার চেয়েও সুপুরুষ তার ভালোবাসার রাজপুত্রটি। নীরাও দেখতে খারাপ নয়। তার শ্যামবর্ণ মুখের হাসি বড় মায়া কাড়ে।
তবুও নীরা এই রাজপুত্রের কাছে নিজেকে অযোগ্য মনে করে। এভাবে চলতে থাকে নীরার ভালোবাসার টানাপড়েনের অধ্যায়। নীরা রুপমের (রাজপুত্রের ছদ্মনাম) সঙ্গে ঘুরে বেড়াত। বেশ কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো।
নীরার স্বপ্ন ছিল দেশের বাইরে পড়তে যাবে।
ইতোমধ্যে বাইরে যাওয়ার কিছু প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। নীরার নামে কুমিল্লা শহরে একটি বাড়ি ছিল। ওর বাবা সেই বাড়ি বিক্রি করে নীরার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেন।
নীরা থাকত হোস্টেলে। আর রুপম বন্ধুদের সঙ্গে মেসে।
নীরা তার যাপিত জীবনের সব কথা রুপমের সঙ্গে শেয়ার করে। এমনকি তার নিজের অ্যাকাউন্টে বাবার জমা দেওয়া টাকার কথাও। নীরা ভাবে নিজে আগে দেশের বাইরে গিয়ে একসময় রুপমকেও নিয়ে যাবে।
একদিন হঠাত্ রুপম ফোন করে নীরাকে। রুপম জানায়, তার বাবা অসুস্থ, ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাবার অসুস্থতার কথা শুনে নীরা হাসপাতালে ছুটে যায়। পরিবারের সদস্যরা প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনে যাবে-এ কারণে দূর থেকে অসুস্থ বাবাকে দেখে।
নীরা হোস্টেলে ফিরে আসে। রুপমের বাবার জন্য কষ্ট হয় তার। রুপমকে ফোন দেয়।
কিন্তু রুপম ফোন রিসিভ করে না। একবার, দুইবার, তিনবার-নাহ্ রুপম ফোন ধরছেই না। একদিন পর রুপম নিজেই ফোন করে নীরাকে। জানায়, তার বাবার অপারেশন করাতে হবে। কিছু টাকার ব্যবস্থা হয়েছে, আরও ১ লাখ টাকা লাগবে।
নীরা নিশ্চুপ, ওপাশে রুপম কাঁদে।
নীরবতা ভেঙে নীরা জানায়, তার ব্যাংক অ্যাকউন্টে টাকা আছে। পরদিন সকালে ব্যাংক থেকে ১ লাখ টাকা তুলে রুপমের হাতে দেয় নীরা। রুপম টাকা নিয়ে দ্রুত চলে যায়। নীরা হোস্টেলে ফিরে আসে।
রাতে রুপমকে ফোন দিলে রুপম ফোন রিসিভ করে না। চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠে সে। পরদিন সকালে ফোন দেয়, ফোন বন্ধ। ফোন দিতেই থাকে। বন্ধ—বন্ধ—বন্ধ।
আর কখনই নাম্বারটা খোলা পায় না নীরা।
নীরা নির্বাক চেয়ে থাকে। তারপরও ভাবে—‘কেন এমন হয় মানুষগুলো?’
আদাবর, ঢাকা
http://www.shokalerkhabor.com/online/details_news.php?id=17744&&+page_id=+21 http://www.shokalerkhabor.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।