মুক্ত কর ভয়/ আপনা মাঝে শক্তি ধর/ নিজেরে কর জয়।
গত কয়েকদিন ধরে সব জায়গায় একটা বিষয়েই আলোচনা, একটাই কথা। বিডিআর- সেনাবাহিনী সংঘাত!!
আমি সাধারণ মানুষ। আমি জানিনা, কে বিডিআর, কে সেনাবাহিনী। আমি জানিনা কি করে একজন সেনাবাহিনীর সদস্য বিডিআর হয়।
আমি জানিনা কে ভাল, কে মন্দ। আমি শুধু এটুকু জানি, আমার দেশের যখনই কোন ধরনের সংকটকাল উপস্থিত, তখনই সেনাবাহিনী রাস্তায়। যখন আমার দেশের মানুষ ঘূর্ণিঝড়ে ভেসে যায়, তখনই বিডিআর সাহায্যের হাত বাড়ায়। আমি জানি, একাত্তরে ইপিআর-র ভূমিকা। আমি জানি, তখন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী গঠনের কথা।
আমি জানি যেকোন বিপর্যয়ে সেনাবাহিনী, বিডিআর আর এই দেশের সাধারণ মানুষ হাতে হাত রেখে কাজ করে। সবাই ভাই-ভাই।
কিন্তু গত কয়েকদিনের মাঝেই হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে গেল। যে বিডিআর সৈনিকদের উপর আমার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ভার নিয়োজিত, তারাই আজ হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে উঠল। তারাই আজ গুলি চালাল দেশের স্বাধীনতা রক্ষাকারী আর এক বাহিনীর উপর।
হতে পারে বিডিআর সৈনিকদের দাবি যৌক্তিক। হতে পারে তাদের উপর এতদিন অন্যায় করা হয়েছে। হতে পারে অপারেশন ডাল-ভাত নিয়ে অনেক নয়-ছয় হয়েছে। হতে পারে, যে সকল সৈনিকের ছুটি বাতিল করে তাদের দিয়ে দোকানদারি করানো হয়েছে, তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের দেওয়া হয়নি। তাই এই বিদ্রোহ।
কিন্তু, তাই বলে এভাবে??
এভাবে চেইন অব কমান্ড ভেঙে বিদ্রোহের নামে অফিসার হত্যা?? এভাবে হত্যার পর লাশের অসম্মান?? এভাবে অফিসারদের বাসায় গিয়ে গিয়ে লুটপাট- ভাংচুর?? এভাবে একজনের বাসায় আসা অতিথি খুন?? এই কি তবে বিদ্রোহ?? এই বিদ্রোহের স্বপ্নই কি তবে দেখে বাম দল গুলো?? এই নির্বিচার হত্যাই কি বিডিআরদের সকল দাবি পূরণ করে দেবে??
গত পরশু পর্যন্ত সবাই বিডিআর-র সাধারণ সৈনিকদের পক্ষে কথা বলছিল। পত্রিকার পাতায় পাতায় সৈনিকদের জয়গাঁথা, টেলিভিশনের পর্দায় টক-শোতে সেনাবাহিনীর র্দুনীতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা। আর হঠাৎ করেই গতকাল থেকেই শুরু হয়ে গেল বিডিআর-র সমালোচনা। খুব স্বাভাবিক। গতকাল থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল গণকবর।
আর সেখানে ফেলে রাখা লাশ।
কিন্তু কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর এখন পর্যন্ত আমি পেলাম না..
১. এখন পর্যন্ত যে সকল বিডিআর আত্মসমর্পণ করেছে/ ধরা পরেছে, তাদের কি হয়েছে?
২. যে সকল সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের জন্য আপাতত ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আরও হয়ত দেয়া হবে। কিন্তু যে সকল বিডিআর নিহত হয়েছে, তাদের পরিবারের কি হবে?
৩. এখন পর্যন্ত এটি পরিষ্কার নয়, এই হঠাৎ উত্তেজনা কি আকস্মিক? নাকি পূর্ব পরিকল্পিত? আকস্মিক উত্তেজনা হলে এত পরিকল্পিতভাবে সমস্ত অফিসারদেরকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হত না। আর পূর্ব-পরিকল্পিত হলে, সাধারণ বিডিআর সেনারা এভাবে নিজেদের চেহারা মিডিয়ায় প্রকাশ করত না।
৪. দীর্ঘদিন অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালিত হবার পর, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা চালুর মাত্র ৫৪ দিনের মাথায় এরকম একটি জাতীয় সংকট। প্রশ্নবিদ্ধ।
৫. বিরোধী দলের মন্তব্য, "সাধারণ ক্ষমা ছিল কৌশলগত ভুল। " এই পরিস্থিতিতে এমন মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। সবাইকে এগিয়ে আসতে এই সংকটময় পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানে।
এমন মন্তব্য করা উচিত না, যেটি সংকট ঘণীভূত করে।
৬. বিভিন্ন টিভি মিডিয়ায় পিলখানার যে চিত্র দেখানো হচ্ছে, তাতে ঐসব স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দূর্বলতা দেখা যাচ্ছে। এই সব স্থানের যথাযথ সংরক্ষণ প্রয়োজন। নয়তো, ঘটনার আলামত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৭. এই ঘটনায় বিডিআর-র এর পুরো মূল চালিকাশক্তি ধ্বংস হল, তা অপূরণীয়।
আর সেনা কর্মকর্তা যারা মারা গেলেন তাদের মেধার ক্ষতি অমূল্য।
৮. যখনই সারাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সারা দেশের মানুষ আজ জেগে উঠেছে, তখন এমন একটি ঘটনা যে আমাদের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে না নেয়।
বিডিআর, আর্মি দুইটাই আমার চাই। আমার দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যে যা যা প্রয়োজন, সবই আমার চাই। আমি নিরাপদে ঘুমুতে চাই।
আমি চাই আমার দেশের উপর অন্য দেশ খবরদারি করলে আমারই সেনাবাহিনীর কোন এক ভাই তার প্রতিরোধ করবে। আর তার পাশে এসে দাঁড়াবে আমারই আর এক ভাই বিডিআর-র অন্য এক সেনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।