আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাঠি হাতে প্রক্টর আসে ঐ, মাগো আমার পরম পিতা শামসুজ্জোহা কই?

জীবন একটাই; জীবনের জয় অনিবার্য..

তখন ১৯৬৯ সাল। দেশজুড়ে পাক কবল থেকে মুক্তির তীব্র লড়াই; গণঅভ্যুত্থান! এমন এক দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহাকে হত্যা করেছিল বেয়নেটে খুচিয়ে। পুলিশের গুলি থেকে ছাত্রদের বাঁচাতে জোহা মিছিলের সামনে বুক চিতিয়ে গুলি খেয়েছিলেন! সময়টা ছিল ১৯৬৯ এর ১৮ই ফেব্রুয়ারি। জোহা সেদিন বলেছিলেন, ‘আমার ছেলেরা তো শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে তাদের মনোভাব প্রকাশ করছে । এব্যাপারেও কেন তোমাদের আপত্তি ।

’ ছাত্রের উপর লাঠিচার্জের সময় যিনি ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারেন, তিনিই তো পিতা। তাই যোগ্য পিতার মতোই তিনি সাহসের সাথে বলেছিলেন, গুলীর পূর্বমূহুর্তে ডঃ জোহা চিৎকার করে ইংরেজীতে বলছিলেন-- please don’t shoot my students. They are like my sons. I want to talk with you. জোহার দিন আজ আর নাই। এটা ২০১১ সাল। গত ৬ এপ্রিল তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকার দলীয় কয়েকজন শিক্ষক দুই সাংবাদিককে মারধর করেছে । ক্ষমতা চর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মো. জাকারিয়া।

এই চিত্র আজ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে এক পেটোয়া প্রক্টর। বিএনপি, ফখরুদ্দিন ও আলীগ এই তিন আমলের সফল প্রক্টর হিসেবে তিনি ছিলেন ঐতিহাসিক ছাত্র নির্যাতক, দুই আগস্ট বর্ধিত বেতন-ফি বিরোধী আন্দোলনে পুলিশি বর্বরতার নির্দেশদাতা, ক্যাম্পাসে ব্যাঙ মেলা পণ্ডকারী, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিষ্ফোরক মামলা দায়েরের মূল হোতা। তিনি এখন গাছ বিক্রির জন্য গঠিত কমিটির মূল হোতা । জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকন পাঠাগার দখল করে নেয় প্রক্টরের নেতৃত্ব প্রশাসন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি জানেন, মাদকের আখাড়ায় সাধুরা কারা। আজ ছাত্ররা ন্যায্য দাবী নিয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করার প্রস্তুতি নিলে কোন প্রক্টর নাই, যে পুলিশি বেয়নেটকে আলিঙ্গন করতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের জানা উচিত, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের হাত ধরে দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই তিনি ৭৩ এর অধ্যাদেশর চালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পেটানোর পদ পেয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি করার চান্স পেয়েছেন! সুতরাং স্বাধীন দেশের স্বাধীন অর্ডিন্যান্সে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পেটানোর সুযোগ পাওয়ার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের উচিত জোহার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। সাংবাদিকরা বড় বেড়ে গেছে- ক্ষমতাসীন উপাচার্যদরে মুখ থামছে না। আমাদের উচ্চারণ ও কিন্তু থেমে নেই।

কিন্তু- ঈদের আগমনীতে বহুবছর আগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‌'ঈদজ্জোহার চাঁদ হাসে ঐ', পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চরম দুঃসময়ে বলি- 'লাঠি হাতে প্রক্টর আসে ঐ, মাগো আমার পরম পিতা শামসুজ্জোহা কই?' রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক লাঞ্চনার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচি।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.