থাইল্যাণ্ডে এসেছি গত মাসের শেষের দিকে। সারাদিন ট্রেনিংয়ের শেষে সন্ধ্যা বেলায় আমরা মাঝে মাঝে ঘুরতে বের হই। গত দুই দিন ধরে চেংমাই ঘুরে দেখলাম।
আমরা মোট দশজন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছি এই কোর্স করতে। মজার ব্যাপার হল দশজন ছেলেমেয়ে এসেছে দশটা দেশ থেকে।
তাই cross-cultural communication করতে গিয়ে ভারি মজার মজার সব ঘটনা ঘটছে। সবার যোগাযোগের কমন ভাষা ইংরেজি । তবু সবারই আগ্রহ অন্য ভাষার দু একটা শব্দ শিখে নেওয়া্র ব্যাপারে। কোন বন্ধু যেন নিজেকে দলছুট বা একা না ভাবে, সে ব্যাপারে শিক্ষকসহ সবারই সমান খেয়াল।
কিগ্যান নামে এক শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান ছেলে যেই টের পেল যে আমি রাস্তাঘাট চিনি না, অমনি সে সবাইকে ছেড়ে আমার সাথে হাটতে হাটতে চলে এল আমার সাথে।
পুরোটা পথ হাটতে হাটতে আমাকে রাস্তা চেনানোর জন্য অসংখ্য চিহ্ন মুখস্থ করাল। ওর দুটো ক্যামেরা আছে বলে আমাকে একটা দিয়ে রেখেছে যাতে আমি সেটা দিয়ে ইচ্ছেমত ছবি তুলতে পারি। প্রত্যেকেই প্রত্যেককে নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আর যে গার্লস হোস্টেলে আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে সেখানকার মেয়েগুলোও ভীষণ ভাল।
এবার আসা যাক, থাইল্যাণ্ডের জীবন যাত্রা সম্পর্কে।
দুই সপ্তাহয় আমি তেমন একটা ঘোরার সময় পাই নি। আমি যে এলাকাটায় থাকি সেটার নাম চেত ইয়োদ। পাশেই একটা মন্দির আছে এই নামে। সেই মন্দিরের নামেই নামকরণ। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে করে আসতে বিশ মিনিট লাগে।
জায়গাটা সুপার হাইওয়ের এক পাশে।
বেশ মফ:স্বল মফ:স্বল ভাব আছে জায়গাটায়। কারণ জায়গাটা খুব ফাকা আর নিরিবিলি। বেশিরভাগ মানুষই স্বাধীনভাবে চলাচলের জন্য বাইক চালায়। যাদের বাইক নেই, তারা প্রায় ১৫ মিনিট পায়ে হেটে হার্বারে যায়।
সেখান থেকে 'সং তাও' নামে এক রকমের যান পাওয়া যায়- বাহনটা আমাদের দেশের টেম্পোর থাই সংস্করণ আর কি। এছাড়াও আছে টুকটুক- বাংলাদেশের রিকশার মতই অনেকটা। তবে আমাদের রিকশার মত অত সুলভ নয় জিনিসটা। যে যানবাহনই নিতে চান না কেন, আপনাকে হার্বারে বা কোন বড় রাস্তার সামনে গিয়ে দাড়াতে হবে। আমাদের দেশে যেমন বাসার গেট খুলেই 'এই রিকশা' বলে হাক দিয়ে রিকশা দাড় করে ফেলা যায়, এখানে সে উপায় নেই।
একা চলাচলের ব্যাপারে আমার এখনো তেমন কনফিডেন্স আসে নি কারণ আমি থাই বলতে পারি না আর ওরা থাই ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না। ইংরেজি বলা তো দুরের কথা, বোঝেও না। তাই দু একটা ছোটখাট কেনাকাটার জন্য আমি কয়েক পা দূরের সেভেন/ইলেভেন স্টোর ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার ঝুকি নিই না। অন্য কোথাও ঘুরতে গেলে দল বেধে যাই।
তবে থাইরা খুবই হাসিখুশি।
এমনকি রাগ প্রকাশের জন্যও ওদের বিশেষ রকমের হাসি আছে। আপনাকে দেখলেই চিনুক না চিনুক, চোখাচোখি হওয়া মাত্রই 'সোওয়াদিখা/সোওয়াদিখাপ' বলে হাত জোড় করে মাথা নুইয়ে স্বাগত জানাবে। মেয়েরা বলে 'সোওয়াদিখা' আর ছেলেরা বলে 'সোওয়াদিখাপ'। অচেনা মানুষকে এভাবে স্বাগত জানানোর ব্যাপারটা আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে।
পোশাক আশাকের ব্যাপারে পশ্চিমাদের সাথে তেমন একটা পার্থক্য আমার চোখে ধরা পড়ছে না।
কখনো কখনো আমার বয়সী মেয়েদের পোশাক আশঙ্কাজনক রকমের সংক্ষিপ্ত। আমার সাথে থাকা পশ্চিমা রুমমেটদেরও হার মানায়।
বার আর ক্যাফের ব্যাপারে আমি রীতিমত লা-জওয়াব। রাস্তার পাশের খাবারগুলোর স্বাদ অসাধারণ। দামেও সস্তা।
একটা সসেজ কিংবা বেকড ব্যানানা কিনতে লাগছে ১০ বাথ। বেকড্ ব্যানানা! শুনতে অদ্ভূত লাগছে না? কিন্তু স্বাদটা অসাধারণ! পকেটে টাকা একটু বেশি থাকলে ঢুকে পড়া যায় কোন ক্যাফে তে। ওখানে কফির ধরণ বুঝে দাম। তবে এক কাপ ল্যাটে পাওয়া যায় ৫০-৬০ বাথের মধ্যে। দামটা আমার কাছে মোটামুটি সস্তাই মনে হল।
এখনো স্টারবাক্সে যাওয়া হয় নি। আমাদের কারোরই অত ট্যাকের জোর নেই কিনা।
তবে জেনে রাখা ভাল যে, আপনি যদি রবিবারে চেংমাইয়ের ধারে কাছে থাকেন তবে নাইট বাজারটা ঘুরে আসতে পারেন। দারুণ দারুণ জিনিস পাবেন ওখানে। তবে দামাদামি করতে হবে।
অনেকক্ষণ বকবক করলাম। বিদায় নিই আপাতত। ঘড়িতে বারটা বেজে গেছে। যাওয়ার আগে বলি, কাপখুন খাআআআ (ধন্যবাদ)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।