পথে নেমেছি; পথই আমায় পথ দেখাবে।
বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া যে কোন ধরনের ফল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। খুব একটা কষ্ট না করেও নানা ধরনের ফল-ফুলের গাছ আমাদের এখানে উৎপাদন করা যেতে পারে। এক সময় বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপাদনে ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। সাধারণত বিরল প্রজাতির কিছু ফল ছাড়া কোন ফলই আমাদের দেশে আমদানি করতে হত না।
বাংলাদেশে যে সব ফল উৎপাদিত হয় তা গুণগতমানের দিক থেকে অত্যন্ত উন্নত। কিন্তু ফলের উৎপাদন কমে যাবার কারণে বর্তমানে বিদেশ হতে নানা ধরনের ফল আমদানি করে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতে হয়। একজন সুস্থ মানুষকে প্রতিদিন যে পরিমাণ ফল গ্রহণ করতে হয় তা আমাদের পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অথচ আমাদের দেশে এমন অনেক ফল রয়েছে যা একটু চেষ্টা করলেই উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এমনি একটি সম্ভবনাময় ফল হচ্ছে সফেদা।
বাংলাদেশে যতগুলো মিষ্টি জাতীয় ফল পাওয়া যায় তার মধ্যে সফেদা অন্যতম। সফেদা ফল যে কোন ফলের সাথে তুলনীয়। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া সফেদা উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। ফলে দেশের সর্বত্রই সফেদা জন্মাতে পারে। তবে বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা প্রভৃতি জেলায় সফেদা ফল বেশি জন্মে।
সফেদা ফলে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন 'এ' ও ভিটামিন 'সি' পাওয়া যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট সফেদা ফলের কয়েকটি উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশে নানাজাতের সফেদা ফল পাওয়া যেতে পারে। আকারের ভিত্তিতে সফেদা ফলকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। একটি বড় জাতের সফেদা এবং অন্যটি ছোট জাতের সফেদা।
বড় আকারের সফেদা ওজনে বেশি বলে তা অর্থনৈতিক বিচারের বেশি গ্রহণীয় কিন্তু স্বাদের দিক দিয়ে ছোট সফেদার কোন তুলনা নেই। সফেদা গাছ বহুবর্ষজীবি একটি গাছ। ফলে একবার একটি গাছ বপন করলে তা হতে বছরের পর বছর ফল পাওয়া যাবে। সফেদা গাছ সাধারণত ৩০/৩২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। একই সাথে ফল এবং কাঠ পাওয়া যায় এমন গাছ হচ্ছে সফেদা।
বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে সফেদা ফল গাছ ভাল জন্মে। সফেদা ফল গোলাকার এবং কিছুটা লম্বাটে। ফল পরিপক্ক হবার পর তা গাছ থেকে তুলে আনতে হয়। তবে গাছে পাকলে সেই ফলের স্বাদ তুলনামূকভাবে বেশি। সফেদা ফলের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে কাঠবিড়ালি ও বাদুর।
তাই ফল পাকার সময় হলে বাদুর এবং কাঠবিড়ালির উপদ্রব বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় বেশিরভাগ পাকা ফলই এরা খেয়ে ফেলে।
সফেদা ফলের চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে কলম পদ্ধতিই সবচেয়ে ভাল। বীজ থেকেও গাছ জন্মানো যেতে পারে। তবে বীজ হতে সৃষ্ট গাছে ফল আসতে বিলম্ব হয়।
খামার হিসেবে সফেদা চাষ করতে হলে ৬ বাই ৬ মিটার দূরত্বে গাছের চারা লাগানো যেতে পারে। সফেদা গাছ গরম সহ্য করতে পারে বলে গাছে কোন ধরনের পানি সেচ না দিলেও গাছ বেড়ে উঠতে পারে। ভাল ফল পেতে হলে কিছুদিন পর পর হালকা সেচ দেয়া যেতে পারে। এ ছাড়া কিছু সারও প্রয়োগ করা যেতে পারে। সারা বছরই সফেদা গাছে ফল ধরে।
তবে সেপ্টেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ফল পাওয়া যায়। সফেদা ফল বিক্রি হয়। এ ছাড়া সফেদা ফল দিয়ে জ্যাম-জেলি ইত্যাদি তৈরি করা যেতে পারে। প্রতিটি বাড়িতে একটি করে সফেদা ফলের গাছ লাগালে পরিবারের ফলের চাহিদার বিরাট অংশ পূরণ করা সম্ভব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।