.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)
শিল্পির তুলির আচড় আমরা দেখতে পাই কিন্তু লেখকের গল্পের আচড় কি দেখা যায়? সম্ভবত না। গল্প যখন সেলুলয়েডের পর্দায় চলচিত্র হয়ে ফুটে ওঠে, তখনও বেচারা লেখক থেকে যায় পরিচালকের অন্তরালে। কিন্তু 'কিউরিয়াস কেস অব বেনজামিন বাটন' এমন এক গল্পের উপর দাড়ানো যা নিজের মহিমায় তুলির মতই দৃশ্যমান আচড় ছেড়ে যাচ্ছে সেলুলয়েডে!
গতবছর বিশ্ব পরখ করেছে অনেক নামী-দামী চলচিত্র। ডার্ক নাইটের মাধ্যমে নুতন ভাবে শুরু হওয়ার ব্যাটম্যান সিরিজের দ্বিতীয় সাফল্য কিম্বা জেমস বন্ডের ২২তম মুভি কোয়ান্টম অব সোলেসের হল কাপিয়ে যাওয়া সফলতার পাশাপাশি টেকেনের মত স্বল্প বাজেটের কিন্তু দারুন জমজমাট মুভিও ছিল। ছিল রেসলার বা রেভুলেশনারী রোডের মত অসাধারন কিছু ছবি কিম্বা আন এক্সপেকটেড স্লাম ডগ মিলেনিয়ার।
কিন্তু এত কিছু স্বত্বেও কিউরিয়াস কেস অব বেনজামিন বাটন ঠিক অন্য কারো সাথে মেলে না। এক কথায় অপূর্ব এক গল্প।
একজন মানুষের মানব-মনের বিকাশগুলোকে যদি উল্টো করে দেয়া যায়, তার মাঝে প্রতিক্রিয়াগুলো কেমন হবে, সেটার এক অপূর্ব রুপায়ন এই মুভিটি। গল্পের ক্যানভাস সুবিশাল। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুরো জীবনটাই এখানে টাইম-ফ্রেম অথচ গল্প বলার যে ধরন, তা দর্শককে আটকে রাখে চুম্বকের মত।
আড়াই ঘন্টার সুবিশাল চলচিত্র হওয়া স্বত্বেও বিরক্ত লাগার অবকাশ নেই এক বিন্দু!
ব্র্যাড পিট কে আমার কখনওই তেমন একটা ভালো লাগেনা। কিন্তু সে বারবার এমন কিছু অভিনয় দেখায় যে ভালো লাগার সঙ্গাটা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। বিচিত্র কারনে অনাকাঙ্খিত এক শিশুর জন্ম থেকে বেড়ে ওঠার যে অসাধারন অভিনয় একাই দেখিয়েছে ব্র্যাড পিট, সেটা শুধু প্রসংশার দাবী রাখে বললে কম বলা হবে বরং বলতে হবে এক কথায় অসাধারন। ছবির নায়িকা, অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী কেইট ব্ল্যানশেটের অভিনয়ও নজর কাড়া। নাচ ও ডায়ালগের সমন্বয়ে একটা দৃশ্য রয়েছে।
ব্ল্যানশেট ওখানে যে অভিনয়টা দেখিয়েছে তাকে 'ফিনোমেনাল' বললেও সম্ভবত প্রসংশা অসম্পূর্ন থেকে যাবে। তবে শুধু এ দুজনই নয়, অন্যান্যদের অভিনয়ও নজর কাড়া ছিল পুরো মুভিতে।
দর্শক জনপ্রিয়তা কেমন পেয়েছিল তার একটা ছোট্ট উদাহরন দেই। ডাবলিনে রিলিজ হবার পর আমি তিনবার মুভিটা দেখার চেষ্টা করি। প্রতিবার লাইনে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় আমার চোখের সামনে আমি স্ক্রিনে টিকেট শেষ হয়ে যেতে দেখি।
শেষ পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি ফাকি দিয়ে মানুষের ওয়ার্কিং আওয়ারে গিয়ে দেখতে বাধ্য হই। শুধু দর্শক জনপ্রিয়তাই নয়, সমালচকরাও দিয়েছে দারুন সব রিভিউ। সবচেয়ে বেশি সাফল্য দেখিয়েছে এবারের অস্কারের নমিনেশন লিস্টে। সেরা চলচিত্র, সেরা পরিচালক এবং সেরা অভিনেতা সহ সর্বোচ্চ ১৩টি নমিনেশন পেয়েছে মুভিটি। আর দর্শকের ভালোবাসাতো রয়েছেই।
যারা খুব একটা মুভি দেখেন না কিম্বা সময় হয়ে উঠে না, তাদের অনুরোধ করবো খানিকটা সময় বের করে দেখবেন। অন্তত মনে হবে না সময়টা বৃথা নষ্ট হলো। আর যারা আমার মত মুভি-খোর, নিয়মিত দেখে থাকেন; তাদের জন্যতো মাস্ট ওয়াচ একটা মুভি সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুভ হোক মুভি দর্শন!
১৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৯
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।
অফিসিয়াল ট্রেইলার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।