যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
কাল রাতে হুমায়ুন আহমেদের একটা বই পাইছি টেবিলে অনেকদিন পরে। নাম রঙপেন্সিল। ঘুম আসতেছিল না তাই কিছু পইড়া একটা জায়গায় দেখলাম ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে হুমায়ুন আহমেদ যুক্তি দিছেন।
যুক্তিটা হল এরকম ধরেন আপনি কোন গ্রহে গেলেন। গিয়া দেখলেন সেখানে ডিজিটাল নাইকন ক্যামেরা। তখন আপনার মনে প্রশ্ন আসবে এই ক্যামেরা নিশ্চয়ই কেউ তৈরী করেছে। ক্যামেরা হাতে নিয়ে আরেকটু এগিয়ে গেলেন। এক গর্ত থেকে বেরিয়ে এল খরগোশ।
খরগোশের চোখ নাইকন ক্যামেরা থেকে অনেক শক্তিশালী। তখন কি স্বীকার করবেন, এই খরগোশের ও একজন সৃষ্টিকর্তা আছে?
এই যুক্তি পড়ে মনে হল এটা আগেও পড়েছি। হয়ত এই লেখা কোন পত্রিকায় বেরিয়েছিল। এই যুক্তি অনেককে বলতে শুনেছি। তারা বেশ গর্ব করে বলেছে হুমায়ুন আহমেদ লিখেছেন।
তাদের চোখেমুখে এভারেস্ট বিজয়ের হাসি।
এই যুক্তির সরলীকরণ হল, পৃথিবীতে মানুষের বা খরগোশের চোখের মত জটিল বস্তু এমনি এমনি তৈরী হতে পারে না।
বিজ্ঞান বলে পারে। অবশ্যই পারে।
কারন হিসেবে ধরা যাক, পৃথিবীর সব মানুষ একটি কয়েন দিয়ে টস করল।
এতে কেউ একজন দেখতে পারে ৫৬৯৮ টি হেড উঠেছে একসাথে এবং ভাবতে পারে নিশ্চয়ই কেউ একজন এই ৫৬৯৮ টি হেড উঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আসল কথা হল সব মানুষ একসাথে টস করলে ৫৬৯৮ টি হেড উঠা অস্বাভাবিক না। কারণ অনেক কোটি কোটি লোক হেড পায় নি। ঠিক তেমনি পৃথিবী তে বিভিন্ন প্রাণী আছে কিন্তু মহাবিশ্বের অনেক সহস্র কোটি গ্রহে কোন প্রাণী নেই। সেইসব গ্রহে পর্যবেক্ষণ করার মত কোন ব্রেন নেই।
তাই মানুষের চোখ, খরগোশের চোখ বা উড়ন্ত কাঠবিড়ালী এমনি এমনি তৈরী হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।
বিজ্ঞান বলে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ তাই পরিকল্পিত না। এটি একটি দূর্ঘটনা। একটি বিশেষ দুর্ঘটনা। এই বিশেষ দূর্ঘটনার ঘটার জন্য তিনটি শর্ত আছে-
বস্তুগুলো নিজেদের কপি তৈরী করবে।
একে বলে রেপ্লিকেশন।
এই কপি করার সময় তারা কিছু ছোটখাট ভুল করবে। একে বলে মিউটেশন।
এই ভুলগুলো তাদের কপিতে সঞ্চারিত হবে। একে বলে হেরিটাবিলিটি।
এই শর্তগুলো মেলা সহজ না। এই শর্তগুলো প্রাণ সৃষ্টি করতে পারে। তবে তার মানে এই না এই শর্তগুলো মিটলেই মানুষ বা পাখি পাওয়া যাবে। এটি যেকোন কিছুতে শেষ হতে পারে।
মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে কারণ তারা মনে করে ঈশ্বর তাদের সৃষ্টির সেরা জীব করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
কিন্তু আসলে মানুষ অন্যসব প্রাণীর মতই একটি প্রাণী মাত্র। হয়ত মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান কোন প্রাণীর আবির্ভাব ঘটবে কোনদিন। তারা মানুষকে তখন চিড়িয়াখানায় বন্দি করে রাখবে। যেমন আমরা এখন বানর বা গরিলাকে বন্দি করে রাখি। অথবা কোন রোগে বা দূর্ঘটনায় সব মানুষেরা মারা যাবে।
তখন হয়ত শুধু পোকারা থাকবে এবং তারাই হবে তখন শ্রেষ্ট জীব।
কিউরিয়াস ইনসিডেন্ট অব দ্য ডগ ইন দ্য নাইট টাইম বইয়ে অটিস্টিক ক্রিস্টোফার ফ্রান্সিস বোনের মুখ থেকে শোনা যায় এই যুক্তি। এই বইয়ের অনুবাদ করেছিলাম। আগামী ডিসেম্বরে বইটি আসছে আদী প্রকাশনী থেকে।
বইয়ের কাহিনী একজন অটিস্টিক শিশুকে নিয়ে।
যে সবকিছুই বিচার করে বিজ্ঞান দিয়ে। পৃথিবীকে সে সাধারনের চেয়ে একটু ভিন্নভাবে দেখে। এই ভিন্নভাবে দেখাটাই এই বই অনুবাদে আমাকে আগ্রহী করেছিল। যাদের এরকম বই ভালো লাগে তারা বেরোলে সংগ্রহ করে রাখতে পারেন।
-------------------------
ক্রিস্টোফার জন ফ্রান্সিস বোন পৃথিবীর সব দেশ এবং তাদের রাজধানীর নাম জানে ।
সে ৭,০৫৭ পর্যন্ত সম মৌলিক সংখ্যা মুখস্থ বলে জেতে পারে । সে পশু পাখির সাথে সহজে মিশে যেতে পারে । কিন্তু মানুষের অনুভুতি বুঝতে পারেনা । কেউ তাকে স্পর্শ করুক তা সে পছন্দ করেনা ।
এই গল্প ক্রিস্টোফারের এডভেঞ্চারের গল্প ।
অন্যভাবে পৃথিবীটাকে দেখার গল্প । মধ্যরাতে মৃত কুকুর দেখে ক্রিস্টোফারের যে এডভেঞ্চার শুরু হয় তা শেষ পর্যন্ত যায় অনেক দূর । ।
--- গার্ডিয়ান পত্রিকার শ্রেষ্ঠ চিলড্রেন বুক ক্যাটাগরিতে সেরা বই নির্বাচিত হয় ।
--- ২০০৩ সালে জিতে বেষ্ট বুক এবং বেষ্ট নভেল ক্যাটাগরিতে হুইটব্রেড এ্যাওয়ার্ড ।
--- ২০০৪ সালে সেরা প্রথম বই ক্যাটাগরিতে পায় কমনওয়েলথ রাইটার্স প্রাইজ ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।