আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাষা আন্দোলনের অগ্রদূত সৈয়দ মুজতবা আলী ।



আজ আমাদের সবার প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৪ সালের এদিনে তিনি ইহলোক-পরলোক দুইলোকের অতীত হয়ে যান। আমরা সবাই তাঁকে গল্পকার, প্রাবন্ধিক হিসেবে জানি কিন্তু ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকার কথা কয়জনে জানি? ভারতবিভাগের মাত্র কিছুদিন পরে ১৯৪৭ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি সিলেট মুসলিম সাহিত্য সংসদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী জানান। রক্ষণশীল সিলটীরা তাঁকে দমাতে পারেনি, তিনঘন্টা ধরে বক্তৃতা দিয়ে তিনি তার বক্তব্য তুলে ধরেন। রাজনীতিও এরজন্যে দায়ী, ততকালীন আসামের অন্তর্ভূক্ত সিলেটীরা পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চেয়েও পারেনি, কিছু অংশ (করিমগন্জ )ভারতে চলে যায়।

যাদের পরিবার ভাগ হয়েছে তারা খুবই ক্ষুব্ধ ছিল, ঐরকম পরিবেশে মুজতবা বাংলাকে একমাত্র ভাষা করার কথা বলেছেন। তিনি এও বলেছেন উর্দূ আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হলে শুধু ভাষার কারণেই ওরা আমাদের শোষণ করবে। বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রীধারী, বিশ্বপর্যটক মুজতবা তুলে ধরেছেন দুনিয়ার সব জায়গায় মায়ের ভাষাতেই মানুষ সবচেয়ে ভালভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। তিনি আরবদের উদাহরণ দেখিয়েছেন, তুরষ্ক এবং ইরান জয় করেও তারা তাদের উপর আরবী চাপিয়ে দিতে পারেনি, তেমনি মুঘলরা আমাদের উপর ফারসী চাপিয়ে দিতে পারেনি। শেষে তিনি সাবধান বাণী উচ্চারণ করেন উর্দূ যদি চাপিয়ে দেয়াও হয় তাহলে আমাদের জন গণ সেটা মেনে নিবে না এবং পাকিস্তান ভেঙে যাবে।

সেই সভার পরে তিনি কলকাতা চলে যান এবং চতুরঙ্গ পত্রিকায় তার বক্তৃতার পুরোভাষ্য ছাপান। কিন্তু গল্প সেখানে শেষ হয় নাই, সিলেটে যেটা শুরু হয়েছে , তার শেষ হয়েছে বগুড়ায়। '৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর তাঁকে বগুড়ার সাহিত্য সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়, এতে তিনি দুটো বক্তৃতা দেন, এতে আজীজুল হক কলেজের ছাত্র এবং কিছু শিক্ষক তাঁর জ্ঞানমুগ্ধ হয়ে তাঁকে কলজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ জানান। মুজতবা কলকাতার সাহিত্য সঙ্গ ছেড়ে ছোট্ট শহর বগুড়ায় আসতে চাননি। কিন্তু কিছু ছাত্র এবং শিক্ষক কলকাতা গিয়ে তাঁকে বগুড়ায় আনতে রাজী করান।

১৯৪৯ সালের প্রথমদিকে তিনি কলেজের দায়িত্ব নেন । সময়টা ছিল খুবই উত্তেজনাময় , স্হানীয় ছাত্ররা ভাষা আন্দোলনের জড়াচ্ছিল। বগুড়ার রক্ষণশীল সমাজ কিন্তু তাঁকে ভালভাবে নেয়নি এবং তারা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এর কিছুদিন পরে কলেজের বাতসরিক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হল, কিছু ছাত্র এতে ঢাকায় পুলিশের নিপীড়ণের বিরুদ্ধে লিখেছিল। ম্যাগাজিনের সবকিছুই মুজতবা দায়িত্ব নেয়ার আগেই স্হির হয়েছিল, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে 'পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের উস্কানি'র অভিযোগ আনা হল।

ম্যাগাজিনের সব কপি ধ্বংস এবং বাজেয়াপ্ত করা হল। ষড়যন্ত্রকারীরা শুধু তাকেই নয় তার ভাইকেও এর সাথে জড়াতে চাইল, গ্রেফতার এড়াতে তিনি কলেজে যোগদানের মাত্র সাতমাস পরে কলকাতা ফিরে যান । ভাষা আন্দোলনের পরে ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃরতি দেয়া হলে মুজতবা তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতা ছাপানোর অনুমতি পান। প্রথমে আল-ইসলাহ পত্রিকায় পরে ' পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা' নামে পুস্তিকা বের করেন। (একুশে পাবলিকেশান্স ২০০২ সালে এটি পূনঃপ্রকাশ করে) ছোটবেলা থেকেই মুজতবা বিদ্রোহী ছিলেন।

১৯২১ সালে সিলেটের ইংরেজ কমিশনারের বাগান থেকে স্বরস্বতী পূজার জন্যে ফুল চুরি করতে যেয়ে ধরা পড়েন। এতে তাকে বেতিয়ে শাস্তি দেয়া হয়, ঠিক তখুনি আবার খেলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। ক্লাস নাইনের ফার্স্টবয় মুজতবা স্কুলে ধর্মঘট ডাকেন। পরিস্হিতি সামলাতে ব্রিটিশ সরকার অভিভাবকদের উপর চাপ প্রয়োগ করেন, স্পেশালি মুজতবার পরিবার, কারণ তার বাবা সৈয়দ সিকান্দার আলী ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার। অত্যাচারী ইংরেজের স্কুলে যেতে মুজতবা অস্বীকার করেন।

এর কিছুদিন আগে মুরারীচাঁদ কলেজে কবিগুরু তাঁর 'আকাঙ্খা' বিষয়ক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে গেছেন । মুজতবা জানত তিনি একটা স্কুল খুলছেন তাই তাঁর কাছে চিঠি লিখলেন, কবিগুরু তাঁকে সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন, মুজতবা গেল শান্তিনিকেতন। বিশ্বভারতী থেকে পাঠ সমাপন করে মুজতবা জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার জন্যে বৃত্তি খুঁজতে লাগলেন এবং পিএইচডির জন্যে বন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন। তাঁকে এরজন্যে জার্মান শিখতে হল, ইচ্ছা করেল তিনি ইংলন্ড যেতে পারতেন কিন্তু কখনও তিনি সেখানে পড়তে যেতে চাননি। আমাদের কালে মুজতবার মত মানুষ আসলেই ক্ষণজন্মা।

আজীবন বাঙালি মুজতবা বেহেশতের বর্ণনায় সর্ষে ইলিশ না থাকায় কখনও ওখানে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করেননি। বাংলা ভাষা যতদিন থাকবে তিনিও আমাদের ভাষার স্বর্গে বেঁচে থাকবেন। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.