আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে........

আমি একজন দেবীকে ভালবেসেছিলাম...।

প্রত্যেকদিন সন্ধ্যেবেলা নিয়ম করে তার বাড়ির উলুধ্বনি আর শাঁখের শব্দ আমার কানে পৌঁছে দিত তার গোপন বার্তা। ধর্ম বলে যে বায়বীয় বস্তুটা এই পৃথিবীতে অনেকের মাঝে কাঁচের দেয়াল গড়ে দেয় সেটার অস্তিত্ব দুজনের মাঝেই ছিল, তবে কখনো মানুষকে মানুষ বলে চিনতে বাধা দেয় নি। কৈশোরে যাকে চিনতাম পাশের বাড়ির বেণী দুলানো কিশোরী বলে, তারুণ্যে সেই যে কবে পরম আপন মানুষে পরিণত হল জানতেও পারি নি। প্রতি পুজোয় লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরা তাকে দেখলে এক লহমায় শরতের সাদা মেঘের উপমা ভেসে উঠত মনে।

পূজামন্ডপের দেবী দূর্গার মুখটা কে যেন অবিকল কেটে এনে বসিয়ে দিয়েছে তার মুখে। এই পৃথিবীর সব মালিন্য থেকে দূর্গাকে দূরে রাখতে ইচ্ছে করতে আমার। ওর চোখে জল দেখলে নিজের ক্ষুদ্র সামর্থ্যের উপর বড় অভিমান হত। ভীরু হাতে ওর চোখের জল মুছিয়ে দিতে ইচ্ছে করত। আমার ছোট পৃথিবীতে ও ছিল একমাত্র অলৌকিক কিছু।

আমি যাকে ধরতে চাইতাম, আবার চাইতামও না। রংধনুর সাত রং মাখা ওর চোখে, ভোরের শিশিরের শুভ্রতা মাখা ওর শুভ্রতর চিবুকে যে মায়া খেলা করত সেটা শুধুই চেয়ে দেখত আমার মুগ্ধ দু চোখ। অনর্গল বক বক করতে থাকা আমার দেবীর টোল পড়া গালে অপলক চেয়ে থাকতে পারতাম অনন্তকাল। মন খারাপ করা বিকেলে অথবা শংকা ভরা ঝড়ো সন্ধ্যেয় শুধুই ও থাকত আমার পৃথিবীটা জুড়ে। কেতামাফিক কোন প্রেমের কথা বলা হয়নি কখনো, তবু দুজনের হৃদয় ঠিকই চিনে নিতে পারত পরস্পরের ছন্দ।

আমাদের কখনো দরকার হয় নি কোন ভ্যালেন্টাইন দিবসের, কোন মোবাইল কোম্পানির নৈশকালীন আয় বাড়িয়ে সারারাত গল্প করতে হয় নি আমাদের। যেমন সততই বাতাস বয়, মেঘ ঢেকে ফেলে আকাশ, বৃষ্টি ঝড়ায় নির্দ্বিধায় ঠিক তেমনি চিরাচরিত ছিল আমাদের বন্ধুত্ব, অথবা অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। তারুণ্যের বিদ্রোহী হিসেব-না-কষা সময় থেকে শুরু করে যৌবনের সুচিন্তিত পদক্ষেপে, সর্বত্র আমার ছায়াসখী হয়ে যে থাকত কালের অমোঘ নিয়মেই সে আজ অনেক অনেক দূরে। পড়ন্ত বিকেলে তার রোদমাখা গালে আলোছায়ার খেলা দেখে মুগ্ধ হইনি এমন ঘটেনি কখনো। ভ্রমরকৃষ্ণ তার চুলের ছোঁয়া পাবার জন্য নিজের অজান্তেই মাথা এগিয়ে দিয়েছি কতবার।

কখনো না বলা অথচ খুবই স্পষ্ট হয়ে ওঠা সেই ভালবাসা নিয়ে আমি হেঁটে বেড়িয়েছি তারা জ্বলা জোছনায়, পুড়িয়ে দেয়া রোদ্দুরে আর উড়িয়ে নেয়া ঝড়ো বাতাসের মাঝে। সমাজের রক্তচক্ষুকে থোড়াই কেয়ার করে হাজার বছর আগে আমরা নির্মল ভালবাসার পদ্মপুকুর রচেছিলাম অনেক যত্নে। নীল পদ্মগুলো নিয়ে নক্ষত্রের রাতে ক্লান্ত পদক্ষেপে চলে গেছে সেই বালিকা, আমাকে একা ফেলে রেখে। কাঁচের দেয়াল ভাঙবার বড় সাধ ছিল দুজনার মাঝেই, তবু ভাঙার দু:সাহস দেখাতে পারে নি কেউ। বড় অসহায় আমরা মায়ার বাঁধনে বাঁধা পড়া মানুষগুলোর কাছে।

তাই মানুষগুলোর সুখের জন্যই কখনো নিজের জীবনকে বিসর্জন দিতে হয়, কখনো হাত ছেড়ে দিতে হয় সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির। এই দূর প্রবাসে এখনো বসন্ত আসে, কিন্তু যে বসন্ত বাতাস তার বাড়ির আধফোটা গোলাপটির গন্ধ আমার বাড়িটিকে সুরভিত করে তুলত সে বাতাসটিকে আর খুঁজে পাই না। তাই প্রিয় মানবীটির জন্মদিনে আমি অপলক চেয়ে থাকি কোন গল্প-না শোনানো ভবিষ্যতের পানে, আমার দু:খ ভোলাতেই বোধ করি শাহ আবদুল করিম গেয়ে চলেন, "বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে সই গো, বসন্ত বাতাসে। "

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।