..
স্বাধীনতার প্রায় আটত্রিশ বৎসর পরে সমস্ত দেশে আবার নতুন করে স্বাধীন স্বাধীন একটা আমেজ এসেছে। সবার মনে নতুন আশা--নতুন উদ্দীপনা। আমরা আশা করছি এবার আমাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সব কিছু আমাদের আশানুরূপ বদলে যাবে। সমস্ত অনাচার -অত্যাচার-দুর্নীতির মূল উৎপাটন করে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হবে।
দ্রব্যমূল্য কমবে--মানুষের অভাব-অনটন দূর হয়ে যাবে । এই প্রত্যাশার পেছনে সব থেকে বেশী সক্রিয় যে ফ্যাক্টর কাজ করছে তা হলো মানুষের আবেগ। আমরা আবেগপ্রবন জাতি। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই
যুক্তির চেয়ে আবেগই আমাদের পরিচালিত করে বেশী। প্রকৃতপক্ষে এটাই আমাদের সব থেকে বড় শক্তি আবার সব থেকে বড় দুর্বলতাও।
সোজা কথায়--আমাদের আবেগ যখন যুক্তির সাথে মিলে কাজ করে তখন আমরা যে কোন কঠিন সমস্যার সমাধান অনায়াসে করে নিতে পারি। আবার এর ব্যত্যয় হলে নেতিবাচক ফলাফলই স্বাভাবিক। নতুন সরকার নির্বাচনে আমাদের যুক্তি এবং আবেগ উভয়ই কাজ করেছে---সব দ্বিধা--সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে আমরা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে
অবলীলায় প্রত্যাখ্যান করতে পেরেছি। এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন, অনেক বড় সাফল্য। এই সাফল্যের হাত ধরেই আমাদের অন্যান্য সমস্যাগুলোর সমাধানও করে নিতে পারবো বলেই বিশ্বাস করি।
তবে অতি আবেগীয় প্রত্যাশায় ভেসে না গিয়ে আমাদের মনে রাখতে হবে--রাতারাতি সবকিছু বদলে ফেলা সম্ভব না। আমাদের ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে-----একটার পর একটা সমস্যার ক্রমান্বয় সমাধানের। আর আমাদের সব থেকে বড় দুর্বলতা যা তা হলো আমাদের সমস্ত উদ্দীপনাগুলো খুব তাড়াতাড়ি স্তিমিত হয়ে পড়ে । এজন্যই আমাদের সাফল্যগুলোকে আমরা শেষপর্যন্ত ধরে রাখতে পারিনা। এই দুর্বলতাটা আমাদের কাটিয়ে উঠতেই হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে--সব সমস্যা সমাধানের চাবি আমাদেরই হাতে। আমরা নিজেরা সচেতন থাকলে--ঝিমিয়ে না পড়লে--কোন অপশক্তিই আমাদের সাফল্যকে দমিয়ে রাখতে পারবেনা। আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস --মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তার জ্বলজ্যান্ত প্রমান। এত বড় যুদ্ধগুলো আমরা জয় করে নিতে পেরেছি যখন তখন দেশগড়ার এই যুদ্ধেও আমরা অবশ্যই জয়ী হবো। কিন্তু এজন্য আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে----সচেতন থাকতে হবে।
যে কোন অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে সবাইকে এক সাথে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠতে হবে। দেশগড়া শুধু সরকারের কাজ নয়। আমাদেরও নাগরিক-দায়িত্ব রয়েছে এব্যাপারে। আমাদের চোখের সামনে চোর চুরি করে নিয়ে গেলে আমরা চোর ধরা শুধু পুলিশের দায়িত্ব মনে করে--চুপ করে থাকলে চলবে কেন?এদেশ আমাদের । এর প্রতিটি কণায় মিশে আছে আমাদের শহীদ ভাইদের রক্ত।
কাজেই একে সুরক্ষার দায়িত্বে আমাদেরও অনেক বেশী প্রয়োজনীয় ভূমিকা আছে। দারিদ্র্যপীড়িত এদেশের বেশীর ভাগ মানুষই উপযুক্ত শিক্ষা-দীক্ষার অভাবে অসচেতন। ভাল-মন্দ বোঝার, নীতি-যুক্তি, ন্যায়-অন্যায় বিচার করার সামর্থ্য তাদের নেই। এদেরকে সচেতন করে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে সুস্থ -চিন্তার শিক্ষিত বিবেকবান মানুষকেই। 'নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবো কেন'-এ ধরনের মনোভাব পোষণ করে থাকলে যে তিমিরে আছি সেই তিমিরেই পড়ে থাকতে হবে।
ঝুড়িতে একটি পচা আম থাকলে বাকী আমগুলোতেও পচন ধরে। কাজেই সুস্থ-সুন্দর সমাজের প্রত্যাশায় শুধু নয়--সুস্থ-সুন্দর সমাজ গড়ার অঙ্গীকারে--- সক্রিয়তায় থাকতে হবে আমাদের নিজেদেরকেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।