আল্লাহ কি নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান ?
শায়খ মুফতী মুহাম্মদ আবদুর রউফ সালাফী
এম, ৪৮ খালিশপুর হাউজিং এস্টেট, খলনা
আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান কথাটি অসংখ্য লোক বিশ্বাস করে থাকেন । কিন্তু কোরআন ও হাদীসে এমন অসংখ্য প্রমাণ আছে যে, আল্লাহ নিরাকার নন এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমানও নন । নীচে সংক্ষেপে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হলbr />
কোরআনের বর্ণনায় আল্লাহর হাত:
কোরআনের বর্ণনায় আল্লাহ তাঁর হাতের কথা উল্লেখ্য করেছেন ।
قُلْ إِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللّهِ
হে রাসূল বলুন ! ধন-সম্পদ ও সম্মান আল্লাহর হাতে । [আল ইমরান ৭৩]
فَسُبْحَانَ الَّذِي بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যাঁর হাতে বিশ্বের সকল বিষয়ের ক্ষমতা ।
তাঁর নিকট তোমদের সকলকে ফিরে যেতে হবে ।
قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْعَالِينَ
আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল ? তুমি আহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ? [সুরা ছোয়াদ] ।
এখানে আল্লাহ তাঁর হাতের কথা বললেন । মানুষেরও হাত আছে, তাই বলে আল্লাহর হাত মানুষের হাতের মত, এই বিশ্বাস করা যাবে না । এই বিশ্বাস যদি কেউ করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে ।
বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহর হাত আছে, সেই হাতের তুলনা সৃষ্টি জগতে নেই । যেমন আল্লাহ তেমনই হবে আল্লাহর হাত । তার হাতের সম্পূর্ণ বিবরণ আমাদের জানা নেই । শুধু বিশ্বাস করব যে, আল্লাহর হাত আছে । যদি বিশ্বাস করি আল্লাহর হাত নাই তাহলে কুরআনের ঐ আয়াত অবিশ্বাস করা হয় ।
আর কুরআনের আয়াত অবিশ্বাস করলে মানুষ কাফের হয়ে যায় ।
নফস আরবী শব্দ । এর অর্থ হচ্ছে দেহ ।
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوَءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا وَيُحَذِّرُكُمُ اللّهُ نَفْسَهُ وَاللّهُ رَؤُوفُ بِالْعِبَادِ
সেদিন প্রত্যেকেই যা কিছু ভাল কাজ সে করেছে: চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং যা কিছু মন্দ কাজ সে করেছে তাও । ওরা তখন কামনা করবে, যদি তার ওবং ওসব কর্মের মধ্যে ব্যবধান দুরের হতে !
আল্লাহ তোমাদিগকে আপন নফসের ভীতি প্রদর্শন করছেন ।
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু । [আল ইমরান ৩০]
আল্লাহ মানুষকে শাস্তি দিতে কারো মুখাপেক্ষী নন । তার দেহে যে শক্তি বিদ্যমান তা দিয়েই তিনি মানব জাতি ও নিখিল বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারেন । আল্লাহ মানুষকে সেই মহান শক্তির ভীতি প্রদর্শন করছেন ।
আবু যার [রা:] বলেন যে, রাসূল [সা:] বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “হে আমার বান্দাগন ! আমি আমার নফসের জন্য যুলুম হারাম করে রেখেছি ।
’’ [মুসলিম আরবী মিশকাত ২০৩ পৃ:, মিশকাত বাংলা ৫ম পৃ: ১৩৩, হা: ২২১৮, এমদাদিয়া]
যার দেহ আছে তাঁর আকার আছে । এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ নিরাকার নন ।
রূহ শব্দের অর্থ প্রাণ ।
আল্লাহর যে প্রাণ আছে কোরআনে তার বর্ণনা রয়েছে ।
فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُواْ لَهُ سَاجِدِينَ
আল্লাহর ফেরেশ্তদিগকে বলেন, “আদমকে সুঠাম করব, তারপর আদমের মধ্যে আমার রূহ প্রদান করব, অত:পর তোমরা তাকে সেজদা করবে” ।
[হিজর ২৯]
এই আয়াতে প্রমাণ হল আল্লাহর রূহ আছে ।
উপরের আলেচনা থেকে প্রমাণ হল আল্লাহর আকার আছে । আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান কথাটি মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য নীচের আয়াতগুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন ।
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى
তিনি পরম দয়াময়, আরশে সমাসীন হয়েছেন । [তোয়া হা ৫]
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ
“যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত।
অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। “ [মুমিন ৭]
وَالْمَلَكُ عَلَى أَرْجَائِهَا وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ
এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে। [হাক্ক্ ১৭]
উপরের আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে আল্লাহ আরসে সমাসীন আছেন । তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন । তবে তার জ্ঞান সর্বত্র বিরাজমান ।
তিনি সবকিছু দেখেন ।
প্রিয় পাঠক এখানকার লেখাটি শায়খ মুফতী মুহাম্মদ আবুর রউফ সালাফীর । এখানে খুব সংক্ষেপে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে । পুরো বইটি লিখে দিতে পারলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হত ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।