নবম জাতীয় সংসদ-২০০৮ নির্বাচনে বিএনপি ও জামাত ধরাশায়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগ ২৩০ আসনে জয়ী হয়েছে নতুন ইতিহাস গড়েছে। তবে আওয়ামী লীগের এই জয় যতটা না তাদের জয়, তার চেয়ে বেশি গত ২০০১ থেকে ০৬ পর্যন্ত বিএনপি’র দু:শাসনে জনগণের প্রতিক্রিয়া। এর আগের দুই সংসদ নির্বাচনের ভোটের হিসাব দেখলে এটা নিশ্চিত করা যেত যে আওয়ামী লীগের পে একক ভোটের পরিমাণ ৪০ শতাংশ। আর বাকি ৬০ শতাংশ ভোট ছিল এন্ট্রি আওয়ামী লীগ ভোট।
এই ভোটকে বেশির ভাগ সময় বিএনপি নেতৃত্ব করেছে। কিন্তু তাদের শাসন ব্যবস্থার উপহার হলো ৬০ শতাংশ ভোটের এক বড় অংশ মানুষ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। খালেদা জিয়ার দুই সন্তানসহ আÍীয় স্বজন, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, তার ভাই, দেলোয়ার পুত্ররা, বাবর-বসুন্ধরা, নাইকোর গাড়ী উপহার, নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর সন্ত্রাস, ফালুর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া, মন্ত্রীদের দিয়ে বাংলা ভাইয়ের জš§ দেওয়া, জামাতীদের আস্ফালন, একুশে আগষ্টের সৃষ্টি ও তা নিয়ে সিনেমাটিক কাহিনী, ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে হত্যার চেষ্টা, কিবরিয়া হত্যাকান্ড, সাকার ব্যাঙ্গাÍক কুরুচিকর আচরন, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিককে মেরে ফেলা, র্যাব বানিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা, সর্বত্র দলীয়করণ করা ও সর্বোপরি কিছু চাটামবাজদের সরব উপস্থিতি মানুষ প্রত্যাখান করেছে।
আরও একটা বড় কারণ বোধহয় আগের ভোটার লিষ্ট থেকে এক কোটি ২২ লাখ মত ভোটার বাদ হওয়া।
এগুলো সবকিছুর নিরব পর্যবেক ছিল প্রায় ৩০ ভাগ প্রথমবারের ভোটার।
এরা দল বোঝে না। এরা বিএনপির দুঃশাসন থেকে শিা নিয়ে নিজের রায় দিয়েছে।
এনে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক ডজন সাবেক মন্ত্রী, রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীর ফেল মারার কারণ বিশ্লেষনে দেখা যায়:
১. সাইফুর রহমান- ফেল মেরেছেন তার গুনধর ছেলেদ্বয়, জামাতা ও নিজের কালো টাকা সাদা করার জবাবে জনতার রোষে।
২. মইত্যা রাজাকার (মতিউর রহমান নিযামী)- যুদ্ধাপরাধী এবং বাংলা ভাই ‘মিডিয়ার সৃষ্টি’ ডায়ালগে জনতার প্রত্যাখান করেছে।
৩. খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন- ফেল মেরেছেন গুনধর দু’পুত্র- গাড়ি চোর পবন, দখলবাজ ডাবলুর অত্যাচার এবং সংসদের ক্যান্টিনের খাদ্য নিজের বাসা এবং আরেক নারীর বাসায় পাঁচার করার কারণে।
৪. এ কে এম মোশাররফ-বিদেশী বুনিয়া নাইকোর গাড়িতে চড়ে বেড়ানোর উপহার পেয়েছে জনতার কাছ থেকে।
৫. জমির উদ্দিন সরকার- নির্বাচনী রাজনৈতিক সভাকে যেন সংসদ অধিবেশন বানিয়ে ‘সার্জেন্ট অব আর্মস’ নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ফল পেয়েছে জনগণের কাছ থেকে।
৬. মওদুদ আহমদ- জনগণ ফাঁসির আসামীকে ছেড়ে দেওয়ার ফল দিয়েছে এই হাড়ে হাড়ে ক্রিমিনালকে।
৭. মান্নান ভূইয়া-জনতার উপর দুঃশাসন চালানোর সময় সুবিধাভোগী আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দালালীর অপরাধে ধরাশায়ী হয়েছেন।
৮. দেলোয়ার হোসেন সাঈদী- কোরানের রাজাকারী তফসিরের জবাব।
৯. আলতাফ হোসেন-‘আল্লার মাল আল্লায় নিয়ে গেছে’র ফল।
১০. তরিকুল ইসলাম-গোটা পরিবারের দখল, অত্যাচার ও বহু ঘটনার নৈপথ্যের নায়ককে জনগন প্রত্যাখান করেছে।
১১. লুৎফুজ্জামান বাবর-হত্যা মামলা থেকে রেহাই দিতে বসুন্ধরার আকবর সোবহানের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা নেওয়ার শাস্তি।
১২. আলী আহসান মুজাহিদ-মোটা বুদ্ধির শয়তান রাজাকার হিসাবে জনতা প্রত্যাখান করেছে।
নির্বাচনের আগে এক আড্ডায় মত দিয়েছিলাম যদি ঢাকায় নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু যেতে তবে সারা বাংলাদেশে বিএনপি জোট আবার ২০০ আসনের বেশি পাবে।
আর যদি যে পরিবর্তনের আভাষ আমাদের আশেপাশের এন্ট্রি আওয়ামী লীগ সমর্থকদের (যারা এন্ট্রি আওয়ামী লীগের কারণে ধানের শীষে ভোট দিতেন) মধ্যে দেখছি তা যদি ব্যালটে প্রকাশ হয়, তবে তা হবে সারা দেশে একভাবেই এবং তার ফল হবে ২০০ এর বেশি আসনে আওয়ামী লীগ এককভাবেই জয়ী হবে। মনে হয় জনতার মনে সেই পরিবর্তন হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।