আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তারকা রবি শশী খেলনা তব.......



চাঁদ-তারার স্নিগ্ধতা একটু দুর থেকে উপভোগ করাই ভালো, বেশী কাছে গেলে অতো ভালো না-ও লাগতে পারে, এটা জানা ছিলো। তা ছাড়া, অন্তর্যামী জানেন, আমি চোখে পড়ার মতো কোনো স্নবও নই। সে কারনেই বুঝি ব্যক্তিগত তারকা তালিকাতেও বিত্তবানদের চেয়ে চিত্তবানদের সংখ্যাই বেশী। দুই দাঁড়িঅলা জমিদার (রবি ঠাকুর, টলস্টয়) আছে অবশ্য প্রিয় লিস্টিতে, কিন্তু কেউই জমির জন্য নয়, তাঁদের কলমের গুণে প্রিয়। যা হো'ক, এরশাদ ভ্যাকেশনের এক অলস না সকাল-না দুপুরে নবাবী চা খেতে সাধ হ'লো।

লোকটা নবাব-পরিবারের সে কারণে নয়। লোকটা একজন প্রধানমন্ত্রীর ভাই, সে কারণে নয়। লোকটা প্রিয় কুকুর 'বাম্বী'র নামে সিনেমা হল খুলেছিলেন সে কারনেও নয়। লোকটা 'চম্পক' নামে একটা চমৎকার বাগান রেস্তোঁরা খুলেছিলেন গাছ-পালা আর ফুলের বাগানের মধ্যে, সেটাও কারণ নয়। লোকটা সোহরাওয়ার্দি'র একান্ত সচিব ছিলেন,সে কারণেও নয়।

হয় তো এ জন্যে যে একটা দেশ বিদেশে ঘোরা চিরকুমার লোক মফস্বল শহরে বসবাস করছেন, কারুপল্লী নামে একটা শিল্প-যাদুঘরের প্বষ্টপোষকতা করছেন, এ জন্যে। হয়তো এ জন্যে যে লোকটা একটা কালের স্বাক্ষী, তার কাছ থেকে সেই সময়ের কিছু কাহিনী শোনা যাবে এ জন্যে। কিম্বা হয়তো শুধু এই কৌতুহল থেকে যে বগুড়া নবাব-বাড়ির ভেতরটা কেমন সেটা দেখার সুযোগ মিলবে এটা ভেবে। বৈরুতের একটা হোটেল কামরায় যখন পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী সোহরওয়ার্দির ম্বতদেহ পাওয়া যায় (পাশের কামরায় অবস্থান করছিলেন ভুট্টো), এবং সে মরদেহ লেবাননের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ময়না-তদন্ত করতে না দিয়ে পাক কর্তৃপক্ষ তা প্রথমে পাকিস্তানে এবং পরে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়ায় এ ব্যাপারে রহস্যটা চিরকালের জন্যেই জট পাকিয়ে যায়। আমার অনুসন্ধানী মনে এ ব্যাপারে একান্ত সচিবের নিজের মুখ থেকে কিছু শুনতে চাচ্ছিলো।

কিন্তু নবাব সাহেব অন্য অনেক বিষয়ে গল্প করলেও বৈরুতের হোটেল কামরায় সোহরাওয়ার্দীর অস্বাভাবিক ম্বত্যু প্রসংগে কিছু বললেন না। নবাব বাড়ীতেই জীবনের প্রথম একই পেয়ালায় চায়ের কাপ এবং বিস্কুটের সহাবস্থান দেখি । ফেরার সময় নবাব বাড়ীর আংগিনায় আরেকবার ভালো ক'রে তাকালাম, বেশ কয়েকটা ভাষ্কর্য, বেশীরভাগই গ্রীক ধাঁচের নগ্ন পুরুষের । বাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে করতোয়া। ছোটবেলায় একটা ছবি আঁকার অনুষ্ঠানে পুরষ্কার দিতে আফরোজা বানু-পীযুষ বন্দোপাধ্যায় এসেছিলেন।

তখন টিভিতে সকাল-সন্ধ্যা সিরিয়ালের খুব নাম-ডাক। কাছ থেকে অভিনয় তারকা দেখা সেই প্রথম বোধহয়। পরে কাছ থেকে দেখেছি বেশ কিছু কবি, লেখককে। একবার পুর্বানী হোটেলে একটা কনফারেন্সের ফাঁকে খাবার ঘরে পাশের টেবিলে সুবর্নাকে দেখেছিলাম মনে আছে। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম কোলকাতা গিয়ে সুচিত্রা সেনের সাথে দেখা করবো।

এখনো আমার কাছে ঐ স্বপ্নটার আবেদন ফুরায়নি, যদিও বাস্তবতা বলছে যিনি জাতীয় পুরষ্কার নিতেও পাবলিকের সামনে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি আর কাকে দেখা দেবেন অমর্ত্য সেন যেবার নোবেল পেয়ে ঢাকায় এলেন, অন্য অনেকের মতো আমিও চামে একটা পত্রিকা হাতে নিয়ে মন্চে উঠে গেলাম, আরেক বন্ধুকে রেডী করাই ছিলো, কাছে গিয়ে সেনের হাতে পত্রিকা দিচ্ছি-এই অবস্থার একটা ছবিও উঠে গেলো বন্ধুর ক্যামেরায়! রবীন্দ্রনাথ এবং সৈয়দ মুজতবা আলী বেঁচে থাকলে আমি অবশ্যই এঁদের সাথে দেখা করার চেষ্টা করতাম। হয়তো ফটো তোলার জন্যেও কাউকে সাথে নিয়ে যেতে হতো, পাবলিক বহুত খারাপ, খালি প্রমাণ খোঁজে ! তবে এখন দিনে দিনে কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি। তারকা-তো বটেই, এমনকি কক্ষপথচ্যুত কোন আস্ত গ্রহ-নক্ষত্র সামনে দিয়ে চলে গেলেও তেমন যেচে গিয়ে আলাপ করতে আর ইচ্ছা হয়না। কাউকে ডেকে 'ভাই একটা ছবি তুলে দিন না প্লীজ বলে পাবলিকের জন্য প্রমাণ রাখতেও আর উৎসাহ পাইনা। বর্তমানে প্রবাসী এক অগ্রজ প্রতীম বন্ধু দীর্ঘদিন চলচিত্র সাংবাদিকতার পরে কবিতা লিখেছিলেন: কতো দিন শাবানা-ববিতার সামান্য হ্যালো শুনে বর্তে গেছি, কিন্তু সখিনাদের দিন কিভাবে কাটছে তা কোনদিন ভেবেও দেখিনি...! আরেক অগ্রজ প্রতিম বন্ধু সম্প্রতি ঢাকার এক রেঁস্তোরায় খাওয়া দাওয়ার মধ্যে গায়ককে হটিয়ে নিজেই গায়ক হয়ে বসেন, তারকা হয়ে বসেন।

রেস্তোঁরার পেশাদার গায়ক যে গজলটি গাইছিলেন, তার বাংলা অর্থ: আমি অন্ধদের শহরে আয়না বিক্রী করতে এসেছি... তবে রে...আমাদেরকে অন্ধ বলা, দাঁড়া দেখাচ্ছি আমরাও গাইতে পারি, আর্ট-কালচার বুঝি..ইত্যাদি ইত্যাদি। সে সন্ধ্যার তারকা হয়ে ওঠেন সেই বন্ধুটিই ঠাট্টা নয়, সত্যি বলছি: এখন মনের যা অবস্থা , তাতে তারকাকেই কস্ট ক'রে বলতে হবে: আমাকে চিনলে না? আমি একজন তারকা আর উত্তরে হয়তো বলবো: তাই বুঝি? তারপর বলবো তুমি কি নজরুলের এই গানটা শুনেছো: তারকা রবি শশী খেলনা তব, হে উদাসী.. Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।