munirshamim@gmail.com
এক.
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বাঙালী জাতীয়তাবাদ থেকেও একটি প্রাগ্রসর মতাদর্শিক উত্তরণের পর্যায় হতে পারতো। কিন্তু হতে পারে নি। কারণ, এর ভ্র“ণের জন্ম ও বিকাশ হয়েছে ভুল গর্ভে এবং অবশ্যই ভুল বীর্যের নিঃস্বরণে। সেনা শাসন থেকে সেনা শাসক জিয়ার তথাকথিত গণতান্ত্রিক উত্তরণের কসরতে একটি আদর্শিক টেবলেট খুব দরকার ছিল। সে দরকারি টেবলেট হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ জনসম্মুখে এসেছে।
ফলে এর বিকাশের প্রাথমিক স্তরে সাধারণ জনগণের চাইতে অনেক বেশি প্রভাব পড়েছে জলপাই রংয়ের। এ সময়টাতে আবার ৭১ এ পরাজিত শক্তিরও রাষ্ট্রীয়ভাবে হালাল হওয়া খুব দরকার ছিল। তারা সে সুযোগটা নিল। এ জলপাই রঙ আর ৭১ এ পরাজিত শক্তির হাতে পড়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ আর কোনদিনই বাঙালী জাতীয়তাবাদকে ছাড়িয়ে যেতে পারলো না। বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধারাবাহিক উত্তরণ হিসেবে একটি প্রাগ্রসর জায়গায় যাবার বদলে এটি আরও সীমিত হয়ে পড়লো।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নামে একটি সা¤প্রদায়িক মতদর্শে রূপ নিল, যার প্রধান আশ্রয় হয়ে উঠলো ইসলাম ধর্মের রাজনৈতিক মতলবী ব্যবহার। প্রিয় পাঠক, আমি এখানে মূলত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রচার প্রচারণার প্রায়োগিত দিকটিই নিয়েই কথা বলছি। বিদ্যাজাগতিক ব্যাখ্যায় কী আছে সেটি আমার আগ্রহের বিষয় নয়, অন্তত এ লেখাটিতে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বাঙালী জাতীয়তাবাদের একটি বড় সীমাবদ্ধতা ছিল এটি ভাষাভিত্তিক হওয়ার কারণে বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানায় সব নৃগোষ্ঠীকে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভূক্ত করতে পারে নি। তবে এর শ্রেষ্ঠত্ব ছিল জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাকে তালাক প্রদান করতে পারা।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার সাথে তালাকের পর্যায়টাকে অব্যাহত রেখে অঞ্চলভিত্তিক জাতীয়তাকে গ্রহণ করে সকল নৃগোষ্ঠকে একই জাতীয়তার কাতারে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারতো। কিন্তু সেটি সেদিকে গেল না। কিছুটা ইচ্ছে করে। কিছুটা সহযোগী শক্তি হিসেবে ৭১ এর পরাজিত শক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক দালালদের হাতে পড়ে। ফলে ইসলাম ধর্মের মতলবী ও রাজনৈতিক ব্যবহারটাকেই এটি বিকাশের প্রধান উপায় হিসেবে গ্রহণ করলো।
জনস্মুখে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রধানত বাংলাদেশী ইসলামী জাতীয়তাবাদ হিসেবেই পরিবেশিত হতে থাকলো। এ প্রক্রিয়ায় আমাদের রাজনীতিতে, ভোট যুদ্ধে এবং নির্বাচনী প্রচারণায় আলাদা একটি সা¤প্রদায়িক ভাষা ও কৌশল বিকশিত হলো। যার ধারাবাহিকতা আমরা এবারের নির্বাচনেও দেখতে পাচ্ছি।
দুই.
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মানিকঞ্জ সদর আসনে নির্বাচনের আগের দিন হঠাৎ একটি লিটলেট ছাড়া হয়। লিটলেটটিতে একটি কুকুরের মাথায় টুপি পরানো ছবি এবং তার নিচে নৌকা মার্কা।
আমি নিজে ঐ লিফলেটের ভাষা বুঝিনি। তবে আমার মনে হয়েছে যারা এ লিফলেটটি ছেড়েছেন তারা বোঝাতে চেয়েছেন যদি নৌকা প্রতিক জিতে যায় এ টুপি আর মুসলমানদের থাকবে না। বা মুসলমানরা নির্বিঘেœ টুপি পরতে পারবে না। কারণ এ রকম কথাবার্তা তখন বিএনপি-জামাত জোট হরহামেশা তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বলে যাচ্ছিলেন। তারা বলেছিলেন, এবারের (২০০১) নির্বাচন দেশে ইসলাম থাকা না থাকার নির্বাচন।
চারদলীয় জোট ঠিকই নির্বাচনে জিতেছিলেন। কিন্তু ইসলামের কি উন্নয়ন হয়েছে আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানি না। এটি বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। কিন্তু এটুকু জানি, ইসলাম ধর্মের নামে সারা দেশে বিভৎস জঙ্গিবাদের বিকাশ হয়েছিল।
এবারের নির্বাচনেও প্রকশ্যে ধর্ম ব্যবহারের প্রচেষ্টা সুস্পষ্ট।
এবারও বলা হচ্ছে এটি নাকি ইসলাম রক্ষার নির্বাচন। যদি তাই হয় আমাদের দেশে আরও অন্য ধর্মের যে মানুষ আছে তাদের অবস্থানটি কি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী যদি একটি ধর্মকেই রক্ষা করতে হয় তাহলে অন্য ধর্মের মানুষের কী অবস্থান? বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের এমন কি নাজুক অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, তাকে রক্ষার করার জন্য নির্বাচনী প্রতিশ্র“তির প্রয়োজন পড়বে! নির্বাচনী প্রচারণায় এ ধরনের সা¤প্রদায়িক কৌশল ও ইসলাম ধর্মের মতলবী ব্যবহার দু:শাসনের অর্ধদশক কে ঢেকে দিতে পারে কিনা এটিই এখন দেখার বিষয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।