বিদ্যুত ঘাটতি মোকাবেলায় পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন সরকারের একটি শুভ উদ্যোগ। তবে ঋণ বাতিলের পর পদ্মা সেতু নিয়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তা পদ্মা ও যমুনার ওপারের তিন কোটি মানুষের জন্য বেদনাদায়ক ঘটনা।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক দ্য ইকোনমিস্ট এমন মন্তব্য করেছে। সাপ্তাহিকীটি ৬ ফেব্রুয়ারির সংখ্যায় লিখেছে, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। দেশটি গত বছর তার প্রথম স্যাটেলাইট কেনার ক্রয় আদেশ দিয়েছে।
এই গেল সপ্তাহেই ঘোষণা করেছে তার প্রথম সাবমেরিন কেনার পরিকল্পনা। এ ছাড়া কোন একক প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজও শুরু করেছে দেশটি।
তবে পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুত পাওয়া যাবে তা দেশটির বিদ্যুত ঘাটতি মোকাবেলায় সক্ষম হবে। আর এতে ২০২০ সাল নাগাদ দেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতে উৎপাদনে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সে লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও এটা হবে একটি বড় পদক্ষেপ।
বিশ্বে বাংলাদেশের রেকর্ডের অভাব নেই।
এই দেশটি বিশ্বের একটি জনবহুল দেশ। ১৯৪৭ সালে ভারতের কাছ থেকে পৃথক হওয়ার পর বর্তমানে দেশটির রাজধানী ঢাকা হচ্ছে দ্রুত বর্ধনশীল একটি শহর। পুরুষের চেয়ে নারী নেতৃত্বই দেশটিকে বেশি দিন ধরে শাসন করছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও (ব্র্যাক) অবস্থান এই দেশটিতেই। তা সত্ত্বেও দেশটির এক-তৃতীয়াংশ মানুষ (পাঁচ কোটি ৩০ লাখ) এখন দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্পের অবস্থানও বাংলাদেশেই। তিন শ’ কোটি ডলারের এই প্রকল্পটি হচ্ছে পদ্মা নদীর ওপর নির্মিতব্য একটি সেতু। এটি নির্মিত হলে প্রায় দশ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুটিই হবে বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু। যদিও বাংলাদেশ সরকার গত ৩১ জানুয়ারি বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অর্থায়নের প্রস্তাব প্রত্যাহারের পর এ সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ সেতু নির্মাণে ব্যাংকটির এককভাবে স্বল্প সুদে ১২০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের কথা ছিল।
বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রস্তাব প্রত্যাহারের পর অপর দুই দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিও এ সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। সবমিলিয়ে তাদের ৩শ’ কোটি ডলার অর্থায়নের কথা ছিল। সরকার এ ঋণ পেতে ব্যর্থ হওয়ায় পদ্মা-যমুনা দ্বারা পৃথক হওয়ার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের তিন কোটি মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নই থেকে যাচ্ছে। এটা ওই অঞ্চলের মানুষের জন্য বেদনাদায়কই বটে।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
দেশটি গত বছর তার প্রথম স্যাটেলাইট কেনার জন্য ক্রয় আদেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই গেল সপ্তাহেই বাংলাদেশ ঘোষণা করেছে তার প্রথম সাবমেরিন কেনার পরিকল্পনা। এ ছাড়া কোন একক প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজও শুরু করছে দেশটি।
দীর্ঘ ৫০ বছর পর সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে দাতা পেয়েছে। তিনি হচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন।
অন্য আন্তর্জাতিক সহযোগীদের চেয়ে পুতিনের আর্থিক শর্ত কম হলেও, রাজনৈতিকভাবে তা দুর্নিবার।
বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে এই ২০০৭ সালেই সেনাবাহিনী তাদের প্রশাসন বসিয়ে দুই নেত্রীকে কারারুদ্ধ করে রাজনৈতিক কর্মকা-ের ওপর হস্তক্ষেপ করে। অথচ এই দেশই রাশিয়া থেকে ১শ’ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনছে। ২০১৩ সালে রাজনীতিকে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের যে ঝুঁকির কথা শোনা যাচ্ছে, এই অস্ত্র কেনার ঘটনা তাদের খুশি করার একটি পদক্ষেপ হতে পারে।
এই অস্ত্র কেনার বিষয়টি তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়সম্পন্ন।
বরং দেশটির প্রথম যে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা তুলনামূলক ব্যয়বহুল। এ প্রকল্পে ২শ’ থেকে ৪শ’ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে। তবে রাশিয়া এ প্রকল্প শুরু করতে ৫০ কোটি ডলার প্রদানে সম্মত হয়েছে। রাশিয়ার সরকারী প্রতিষ্ঠান রোসাটম বাংলাদেশের রূপপুরে এই বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশ শীঘ্রই পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসংবলিত এশিয়ার সপ্তম দেশে পরিণত হবে।
বাংলাদেশের বিদ্যুত সমস্যা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, বিশ্বে এমন কোন দেশ নেই যেখানে ব্যবসার জন্য বিদ্যুত পাওয়া কষ্টকর ব্যাপার। ব্যাংকটির সর্বশেষ ‘ডুইং বিজনেস সার্ভেতে’ ১৮৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৫তেই। অধিকন্ত দেশটির ৬০ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুত পাচ্ছে না। ফলে দুটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে যদি দুই হাজারেরও বেশি মে. ও. বিদ্যুত পাওয়া যায় তা হলে তা হবে সরকারের বিদ্যুত সমস্যা সমাধানে শুভ উদ্যোগ।
আর রাশিয়ান ওই বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুত পাওয়া যাবে তা দেশটির বিদ্যুত ঘাটতি মোকাবেলায় সক্ষম হবে। আর এতে ২০২০ সাল নাগাদ দেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সে লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও এটা হবে একটি বড় পদক্ষেপ।
দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সমস্যা মোকাবেলার মিশ্র উদ্যোগ রয়েছে। এটি হচ্ছে কয়লা ও মিয়ানমার বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে গ্যাস আমদানির মাধ্যমে। তবে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিমত থাকলেও, প্রধান দুই দলই পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের ধারণার সঙ্গে একমত।
তবে ২০৩০ সাল নাগাদ পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। সেটি হলো বিদ্যুত কেন্দ্রের কুলিং সিস্টেমের। এ জন্য একটি বড় নদী প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে পদ্মার তীরে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা নিরাপদ।
এ বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের ইউরেনিয়াম নেই।
রাশিয়া এ বিদ্যুত কেন্দ্রের রিএ্যাক্টর পরিচালনার জ্বালানি প্রদান করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণ ও প্রতিবেশী দেশ ভারত এই পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের নিরাপদ উপকরণ পরিবহন নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়ক পথেই এই উপকরণ পরিবহন করতে হবে এবং সেটি পদ্মা পার হয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে দ্রুত পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন না হলে শেষ পর্যন্ত নৌপথেই এই পারমাণবিক উপকরণ পরিবহন করতে হতে পারে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।