বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
অতুলপ্রসাদ সেন।
মোদের গরব মোদের আশা/ আ মরি বাংলা ভাষা। মাত্র একটি গানের জন্য অতুল প্রসাদ সেন চিরকাল বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে রইবেন।
অথচ এই বাংলা ভাষাপ্রেমীর জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছিল বাংলার বাইরে। অসম্ভব দানশীল ছিলেন অতুলপ্রসাদ। জীবনের উপার্জিত অর্থ অধিকাংশই ব্যয় করেছিলেন জনকল্যাণে। এমন কী তিনি তাঁর বাড়িটিও অবধি দান করে গিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর লেখা সমস্ত গ্রন্থের স্বত্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে দান করে যান।
আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ এই যে-অতুল প্রসাদ সেন-এর জন্ম হয়েছিল ঢাকায়। ১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর। অবশ্য অতুলপ্রসাদের আদি নিবাস ফরিদপুরে, ফরিদপুরের দক্ষিণ বিক্রমপুরের মগর গ্রামে। ছেলেবেলায় অতুলপ্রসাদের বাবা মারা যায়। যে কারণে মায়ের হাত ধরে মাতামহের বাড়িতে উঠে আসতে হয়েছিল।
ঘটনাটি পরিনামে শাপে বর হয়েছিল। কেন? বলছি। অতুলপ্রসাদের মাতামহ কালীনারায়ণ গুপ্ত ছিলেন সুকন্ঠ গায়ক, গানও লিখতেন। ভক্তিগীতি। কালীনারায়ণ গুপ্ত দৌহিত্র অতুলকে সঙ্গীতে হাতেখড়ি দিয়েছিলেন নিশ্চয়ই।
পরবর্তী জীবনে অতুলপ্রসাদ খ্যাতনামা আইনজীবি হলেও গানের জন্যই দু’বাংলার বাঙালি আজও তাঁকে মনে রেখেছে।
গানের পাশাপাশি কালীনারায়ণ গুপ্ত বিদ্যা অর্জনকেও গুরুত্ব দিতেন। যে কারণে গান শেখার পাশাপাশি অতুলের পড়াশোনাও চলছিল।
১৮৯০। প্রবেশিকা পাস করল অতুল।
তারপর শুরু হল কোলকাতা জীবন। প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন। তারপর বিলেত গেলেন “ল” পড়তে। ফিরে এসে কোলকাতায় আইন ব্যবসা শুরু করলে। আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ এই যে- রংপুরে ছিলেন কিছুদিন আইনব্যবসা করেছিলেন অতুলপ্রসাদ।
পরে লক্ষৌতে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেন। আমৃত্যু লক্ষৌতেই ছিলেন । তাইই তখন বলছিলাম-মাত্র একটি গানের জন্য অতুল প্রসাদ সেন চিরকাল বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে রইবেন। অথচ এই বাংলা ভাষাপ্রেমীর জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছিল বাংলার বাইরে।
পেশাগত জীবনে সফল ছিলেন।
লক্ষৌর বার অ্যাসোসিয়েশনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
অতুলপ্রসাদের বাড়িতে সন্ধ্যায় বা গানের আসর বসত। বিখ্যাত সব ওস্তাদরা আসতেন। গান পাগল ছিলেন অতুলপ্রসাদ। একবার গানের সুরের ঝোঁক চাপলে আদালত মক্কেল ভুলে যেতেন।
সব মিলিয়ে অতুলপ্রসাদের গানের সংখ্যা ২০৬। এর মধ্যে ৫০-৬০টি জনপ্রিয়।
তাঁর গানকে তিন ভাগে ভাগ কর যায়। (ক) স্বদেশিসঙ্গীত। (খ) ভক্তিগীতি ও (গ) প্রেমের গান।
অতুলপ্রসাদের গানের সমগ্রর নাম “কাকলি”। ১৯৩০ সালে (২ খন্ডে) বেরয় কাকলি। ৭১টি গানের স্বরলিপি আছে কাকলিতে। কাকলি সম্পাদনা করেছেন সাহানা দেবী। সম্পর্কে অতুলপ্রসাদের মামাতো বোন হন সাহানা দেবী।
অন্য গানগুলি গ্রথিত হয়েছিল “গীতিপুঞ্জ” নামক বইয়ে। ১৯২২ সালে কোলকাতা থেকে প্রথম গানের রেকর্ড বেরয় অতুলপ্রসাদের । গানে কন্ঠ দিয়েছেন সাহানা দেবী ও হরেন চট্টোপাধ্যায়।
পরে আরও রেকর্ড বেরিয়েছিল। তবে সে সব গানে সুরতালের বিকৃতির অভিযোগ উঠেছিল।
লক্ষৌ ছিল তৎকালীন উত্তরভারতের সঙ্গীতের অন্যতম কেন্দ্র। উল্লেখ্য বাংলায় ঠুংরির প্রচলন করেছিলেন লক্ষৌর বিশিস্ট সঙ্গীতজ্ঞ নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ্। লক্ষৌজীবন গভীর প্রভাব রেখেছিল অতুলপ্রসাদের সঙ্গীতজীবনে। অতুলপ্রসাদই প্রথম ঠুংরি অঙ্গে বাংলা গানের প্রচলন করেন। রাগপ্রধান ঢংয়ে বাংলা গান রচনা তাঁর থেকেই শুরু।
যার ফলে বাংলা গানে একটা নতুনত্ব এসেছিল। পরবর্তীকালে নজরুল যার আরও বিকাশ সাধন করেন।
যা হোক। অতুলপ্রসাদ-এর ঠাঁই আজও বাঙালির হৃদয়ে। তার কারণ আছে।
বিশিষ্ট গবেষক খান মোহাম্মদ সাঈদ লিখেছেন-His moder garab, moder asha/ a mari bangla bhasa (Our pride, our hopes the Bangla language) speaks of his love for his mother tongue. This song inspired our people during the language movement and the War of Independence. It has retained its charm even now. He enriched Bangla songs through his experiments with lyrics, tune, measure, pathos, etc. He died in Lucknow on 26 August 1934. (বাংলাপিডিয়া)
তথ্যসূত্র-বাংলাপিডিয়া।
অতুলপ্রসাদের গান শোনার জন্য-
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।