আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আফটার উই ওয়্যার সো রুডলি ইন্টারেপ্টেড: ইকনমিস্টের এই লেখাটি পড়ুন

৭১ এ ছোট ছিলাম, যুদ্ধে যেতে পারি নাই, এই আক্ষেপ ফুরাবার না

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকার ১১ ডিসেম্বর সংখ্যায় এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিদেশের পত্রপত্রিকায় আজকাল হরহামেশাই বাংলাদেশ নিয়ে লেখা ছাপা হয়। তবে ইকনমিস্টকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। লেখাটি এরকম........ বাংলাদেশে লুণ্ঠন ও দুর্বৃত্তায়নের বেসামরিক রাজনীতির অবসানে প্রায় দুই বছর আগে সেনাবাহিনী সরকার পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করেছিল। এই দুই বছরে রাজনৈতিক শাসনামলের দুর্নীতির সবচেয়ে বড় প্রমাণ হিসেবে দেখা গিয়েছিল পাকা-কাঁচা সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার বিদ্যুতের খুঁটি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার তাঁরই বড় ছেলে তারেক রহমান নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেট থেকে এসব খুঁটি কিনেছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে এক মেগাওয়াটও বিদ্যুত উৎপাদন বাড়েনি। অথচ ওই সময়ে অর্থনীতির আয়তন বেড়েছিল ২৫ শতাংশ। ওই খুঁটিগুলোর মতো বাংলাদেশিরাও এখনো বিদ্যুতের অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশের জনগণ বেশ কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য কার্যকর গণতন্ত্রেরও অপক্ষায় আছে।

এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত পরিস্থিতি ও সন্ত্রাস মোকাবিলা। ২০০১ সালের পর এই প্রথম ২৯ ডিসেম্বর দেশের প্রায় আট কোটি ১০ লাখ ভোটার নতুন সরকার নির্বাচিত করতে যাচ্ছে। পারিবারিক সূত্রে প্রধান দুই দলের শীর্ষ পদে বসা দুই নেত্রীকে নেতৃত্বকে থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়েছে সেনাবাহিনী। পারিবারিক রাজনীতির বদৌলতে খালেদা জিয়া বিএনপির এবং শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে আছেন। এই দুই দোর্দন্ড প্রতাপশালী নারী, ‘দুই বেগম’ ১৯৯১ সাল থেকে পালাক্রমে ক্ষমতায় আছেন।

সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুই নেত্রী দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রায় এক বছর করে কারাগারে ছিলেন। যদিও এই মামলাগুলো এখনো খারিজ বা শেষ হয়ে যায়নি, তবুও এই দুই নেত্রী তাঁদের অনুসারীদের নিয়ে বিচার কার্যক্রম থেকে একরকম অব্যাহতি পেয়ে আসছেন। পশ্চিমা দাতারা বাংলাদেশের বিশৃঙ্খল রাজনীতি থেকে উত্তরণ এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সেনাবাহিনীকে দুই বছর সময় বেধে দিয়েছিল। অন্তবর্তী সরকারকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না-এ রকম শর্তে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে সম্মত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী।

যারা ভবিষ্যতে তাঁকে ছাড়া দলকে এগিয়ে নেওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি তাঁদের স্বাগত জানিয়ে দলে টেনে নিয়েছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। তবে ওই নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয়ী হয় বিএনপি, ৩০০ আসনের মধ্যে ১৯৩টিতে জেতে। আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৬২ আসন। এসি নেইলসন পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ২০০১ সালের তুলনায় এবার ৩৭ শতাংশ ভোটার ভিন্ন দলকে ভোট দেবে।

গত নির্বাচনে বিএনপি নতুন ভোটারদের বিশাল একটি অংশকে আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু এবার প্রায় দুই কোটি ৬০ লাখ নতুন ভোটারের দলীয় পছন্দ সম্পর্কে এখনো তেমন কিছু জানা যায় নি। মোট ভোটারের এক চতুর্থাংশ এখনো কোন দল বা জোটকে ভোট দেবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়নি। ভোটারদের এই অবস্থা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী সমর্থিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি নির্বাচনে বিজয়ের স্বপ্ন দেখছে না বলেই মনে হয়। খালেদার প্রতি একান্ত অনুগত এবং সংস্কারপন্থীদের কারণে দল বিভক্ত হয়ে গেছে।

বেগম জিয়া তাঁর অবাধ্য নেতাদের ক্ষমা করেননি। খালেদা জিয়ার প্রতি অনুগতরা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে নির্বাচনের ভিতকে দুর্বল করার জন্য কাজ করেছে। চলতি সপ্তাহে তাঁরা দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। যদি কোনোভাবে বিএনপি এই দাবিতে অনড় থাকত তাহলে ১০ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীকে আরেকটি দাবি মানতে হত। কারণ ওই বিষয়টিকে ঘিরে বিএনপি নির্বাচন বর্জনেরও হুমকি দিয়েছিল।

বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিল, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে বলবৎ করা জরুরি অবস্থা তুলে নিতে হবে। দুই দলই জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। এরপরই বিএনপি বলেছে, তাঁরা নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে (গতকাল শুরু হয়েছে)। সাধারণত নীতিবিগর্হিতভাবে নির্বাচনে স্থানীয় প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীরা ঘুষ দেওয়া, ভয়ভীতি দেখানোসহ নানাভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করে থাকে।

এবার ২০ ডিসেম্বর সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। ২৫০-এর বেশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা নির্বাচন পর্যবেণ করবে। এবার নির্বাচনের দিন ভোট কারচুপির চেয়ে নির্বাচনের আগে ভয়ভীতি ও হুমকির আশঙ্কা বেশি। আগস্টে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনাবাহিনী দশ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছিল। সংসদে জরুরি অবস্থাকালীন শাসনের অনুমোদন এবং সেনা সদস্যদের বিচার থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার নিশ্চয়তা সেনাবাহিনীর জন্য জরুরী।

আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে জয়ী হয় তাহলে সেনাবাহিনীর এসব কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটা এমন এক দেশ যেখানে রাজনৈতিক হত্যা সাধারণ বিষয়। সেজন্য এই দেশে রাজনৈতিক নেতাদের জন্য সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা দরকার। একজন প্রবীন রাজনীতিক বলেন, শেখ হাসিনা বাঘের লেজ ধরে টানতে চাইবেন না। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী মহাজোট থেকে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম রাজনৈতিক দল সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে এখন বেশ আত্মবিশ্বাসী।

(অবশ্য জাতীয় পার্টি শেষপর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটেই আছে)। এরশাদ দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ তাঁকে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন মনে করছে, কোনো জোট-মহাজোট ছাড়াই তারা চলতে পারবে। নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে আওয়ামী লীগ, সম্ভবত সেনাবাহিনীও নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবে না। সেনাবাহিনী অবশ্যই বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে কঠিন শাস্তির আশঙ্কা করে থাকবে।

বিশেষ করে ২০০৭ সালের কারচুপির নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর যারা তাঁর অবাধ্য হয়েছিলেন তাঁদের তিনি শাস্তি দিতে পারেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকা তারেক রহমানের সমর্থকেরা প্রতিশোধ নিতে চাইবে। অবশ্য এখন পর্যন্ত, গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালিত জরিপে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ব্যবধানে জয়ী হবে। আর এটাই হয়তো জেনারেলদের কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করতে পারে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.